বয়স এখনো ছাপ ফেলেনি তার গলায়। সুর এখনো ঝরনাধারার মতোই খেলা করে। বলা হচ্ছে শাহনাজ রহমতউল্লাহর কথা। মাত্র ১১ বছর বয়সে গানে তার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে টিভিতে প্রথম গান করেন। সে হিসাবে প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলার মানুষকে তার জাদুকরী সুরে আবিষ্ট করে রেখেছেন। অভিমানী শিল্পী অনেক দিন গান করেন না। কিন্তু মানুষের হূদয়ে তার গান শোনার আকুতি রয়েই গেছে। গান ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ আসতেই তিনি বলেন, ‘আমি ওমরাহ করার পর থেকেই গান-বাজনার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই। আমার কোনো অভিমান নেই। সবার ভালোবাসায় আমি ধন্য। তা ছাড়া এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের গানের ভুবনে একটু সময় ও সুযোগ করে দেওয়া উচিত।’
সম্প্রতি চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন এই গুণী শিল্পী। তাই আবার নতুন করে আলোচনায় তিনি। তাই সুর থেকে দূরে থেকেও তার এক ধরনের ফিরে আসাই এটি। শিল্পী বলেন, ‘আমাকে সবাই মনে রেখেছে, পুরস্কার দেওয়ার জন্য ডাকছে, পুরস্কার দিয়ে আবার হাততালিও দিচ্ছে— এসব কি কম পাওয়া! গান করেছি বলেই সবার ভালোবাসা পাচ্ছি। এই ভালোবাসার স্বাদ নিয়েই এখন বাকি জীবন পার করে দিতে চাই। নতুন গানের পেছনে আর ছুটতে চাই না।’
১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাক শুরু করেন শাহনাজ। সেই থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন। কিন্তু মাঝে বিয়ের পর থেকেই চলচ্চিত্রে গান করা কমিয়ে দেন। বলা যায় তখন থেকেই গানের সঙ্গে তার সম্পর্ক ঢিলে হতে থাকে। বিয়ের পর মাত্র তিনটি চলচ্চিত্রে গেয়েছেন তিনি। তার মধ্যে খান আতাউর রহমানের সুরে ‘আবার তোরা মানুষ হ’, আলাউদ্দীন আলীর সুরে ‘সাক্ষী’ ও আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘ছুটির ফাঁদে’ চলচ্চিত্রে। এর মধ্যে ‘ছুটির ফাঁদে’ চলচ্চিত্রে গাওয়া ‘সাগরের সৈকতে কে যেন দূর থেকে’ গানটির জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।৫০ বছরের এই গানের ক্যারিয়ারে তিনি শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন অনেক জনপ্রিয় গান। প্রয়াত প্রণব ঘোষের সুরে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘বারোটি বছর পরে’ বেশ জনপ্রিয় হয়। এরপর আলাউদ্দীন আলীর সুরে একটি একক অ্যালবাম বের করেন তিনি। টেলিভিশনে শাহনাজ রহমতউল্লাহর শুরুটা ১৯৬৪ সাল থেকে। বেতারেও গান করেছেন নিয়মিত। শাহনাজ রহমতউল্লাহর ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার’, ‘একবার যেতে দে না’ ও ‘একতারা তুই দেশের কথা’ ৩টি দেশাত্মবোধক গান বিবিসির শ্রোতা জরিপে শ্রেষ্ঠ ২০টি গানের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছে। সব মিলিয়ে যতই আড়ালে থাকেন না কেন তিনি, গানের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব গভীর। মানুষ তার গানের স্বাদ সব সময়ই গ্রহণ করবে।