মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঈদে যেমন চলচ্চিত্র চাই

ঈদের ছবি মানেই নতুনত্বে ভরা গল্প, গান, নির্মাণ আর অভিনয়। এই প্রত্যাশা দর্শকের। ঢালিউডের শুরু থেকেই দর্শকের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে ঈদের জন্য বিশেষ ছবি নির্মাণ করা হতো। ধীরে ধীরে এই অবস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই দর্শকের হাপিত্যেশও বাড়ছে। এ অবস্থার উন্নয়নে করণীয় কী। তাই জানালেন কয়েকজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। তাদের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

চলচ্চিত্র হচ্ছে প্রধান বিনোদন মাধ্যম। এর ভিতর থেকে দর্শক যেন ভালো বিনোদন পায় সেটাই চলচ্চিত্রকারদের চেষ্টা থাকে। এই পাওয়া হয় সর্বজনীন। স্বাধীনতার আগে ও পরে নির্মাতারা এই বিষয়টি মনে রেখেই ছবি নির্মাণ করতেন। বর্তমানে এই সর্বজনীনতা কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। ভালো ছবি একেবারেই যে নির্মাণ হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। কিন্তু তাতে দর্শক মনের মতো সবকিছু পাচ্ছে না। বিশেষ করে ঈদ উৎসবে মানুষ উন্নত বিনোদন চায়। তাই বিশেষ এই দিনটিকে মনে রেখে সেভাবেই নির্মাণ করতে হবে। শুধু ঈদ নয়, স্বাভাবিক সময়েও কর্মব্যস্ততার ফাঁকে মানুষ যথাযথ বিনোদন চায়। আমার প্রত্যাশা আবার সেই মাপের ছবি হবে। যা দর্শকের মনে দাগ কাটবে। পৃথিবীর কোনো কিছুই ধ্বংস হয় না। তাই চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থার উত্তরণ ঘটবে। আবার শিক্ষা, বিনোদন থেকে শুরু করে সবকিছুর সমন্বয়ে একটি পরিপূর্ণ ছবি নির্মাণ হবে এবং ঈদসহ সবসময় দর্শক কাঙ্ক্ষিত ছবি দেখতে পাবে।

 

সুচন্দা

চলচ্চিত্রে আসার আগে আমরাও ঈদে ছবি দেখাকে উৎসব হিসেবে গ্রহণ করতাম। উৎসবমুখর পরিবেশে সবাইকে ঈদের ছবি দেখতে যেতে দেখতাম। যখন চলচ্চিত্র জগতে আসি তখন দেখতাম চলচ্চিত্রকাররা দুই ঈদকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে পরম যত্নে ছবি নির্মাণ করতেন। এসব ছবিতে গল্প থেকে শুরু করে সবকিছুতেই নতুন এবং ভিন্ন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করত। দর্শকও পরিবার নিয়ে এসব ছবি দেখে পরম আনন্দ পেত। আজকাল তেমনটা আর দেখি না। এখন ঈদের ছবি বলে বিশেষ কিছু নির্মাণ হয় বলে মনে হয় না। সারা বছর যেমন ছবি মুক্তি পায় ঈদেও তাই। এতে দর্শক ক্রমেই ঈদের বিশেষ ছবির আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‘ঈদের ছবি’ এই তকমাটিও হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানের নির্মাতারা এই দিকটায় লক্ষ্য রেখে আবার গান, গল্পসহ সবদিক দিয়ে বিশেষ আয়োজন যদি করেন তাহলে ঈদের ছবির মর্যাদা ফিরে আসবে বলে মনে করি। এই নির্মাণে পরিবারের সবার একসঙ্গে দেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

 

আবু সাইয়িদ

ঈদের ছবি মানেই বিনোদনমূলক আয়োজন। এটি নতুন কিছু নয়। এ দেশে চলচ্চিত্রের জন্মলগ্ন থেকেই তাই হয়ে আসছে। সারা বছর যেসব ছবি নির্মাণ হয় ঈদের ছবি তার চেয়ে ব্যতিক্রম সবসময়ই থাকত। ঈদে দর্শক যেহেতু পরিবার নিয়ে ছবি দেখতে যেতে চায় তাই ছবির গল্প থেকে শুরু করে সবকিছুই হতে হয়ে সর্বগ্রহণযোগ্য। এসব ছবিতে সবকিছুই থাকবে নিয়ন্ত্রিত। ভায়োলেন্সের ছড়াছড়ি থাকবে না, গানের কথা ও নাচ থাকবে মার্জিত ও পরিমিত। হাস্যরস থাকবে। দুঃখের বিষয় একসময় ঈদের ছবি নিয়ে সবার যে আগ্রহ ও প্রত্যাশা থাকত তা এখন তেমন একটা আর নেই। কারণ ঈদের ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবার নিয়ে দেখার বিষয়টি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখন বিবেচনা করা হয় না। তাই চাইলেও পরিবার নিয়ে দর্শক ঈদে সিনেমা হলে যেতে পারে না।

এ অবস্থার উন্নয়নে নির্মাতাদের সচেতন হতে হবে। দর্শক বিশেষ দিনে যা চায় তাদের তা দিতে হবে। দেশীয় ছবির সুদিন ফিরিয়ে আনতে হবে।

 

জাকির হোসেন রাজু

ঈদের ছবি মানেই পারিবারিক গল্পের ছবি। বাবা, মা, ভাই, বোন, সন্তান সবাই একসঙ্গে বসে আনন্দ উপভোগ করতে পারে তেমন ছবিই ঈদে সবার কাম্য। ঈদে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যাওয়ার রেওয়াজ অনেক পুরনো। ঈদের ছবিতে ভালো গল্প, গান, দৃশ্য, কৌতুক প্রত্যাশা করে দর্শক। অতিমাত্রায় ফাইট, ভায়োলেন্স থাকবে না। পূর্ণ বিনোদন পাবে সব বয়সের দর্শক— এমন ছবি চাই ঈদে। ঈদ মানেই আনন্দঘন একটি দিন। তাই ঈদের ছবিও হতে হবে আনন্দময়। পরিবারের সবাই একসঙ্গে ছবিটি উপভোগ করে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে এসে বলবে, বাহ, দারুণ একটি ছবি দেখলাম। একসময় এই অবস্থা থাকলেও দিন দিন তা কমে যাচ্ছে। এই ব্যর্থতা আমাদের। চলচ্চিত্রের লোকজনের। শুধু ব্যবসা দেখলে হবে না, শিল্পের কথাও মনে রাখতে হবে। কারণ চলচ্চিত্র হচ্ছে অন্যতম একটি শিল্প। তাই ঈদে শিল্পসম্মত ছবি নিশ্চিত করতে হবে আমাদের। বিশেষ দিনের জন্য নির্মাণের বিষয়ের কথা সবসময় মনে রাখতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর