তার পুরো নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। পরিচিত ছিলেন মাইকেল জ্যাকসন নামে। বিশ্ববাসী তাকে ডাকত ‘কিং অফ পপ’ নামে।
বিশ্ব পপসংগীতে ভিন্নধারার সংযোজন করেছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। উন্মাতাল উন্মাদনা, বিস্ময়কর কণ্ঠ, অসাধারণ গায়কী, মুগ্ধকর নাচ সব শব্দ একত্র করলে যা দাঁড়ায় তার নাম মাইকেল জ্যাকসন। ব্যক্তিগত জীবন থেকে সংগীতের বর্ণিল অধ্যায় সর্বত্রই তিনি ছড়িয়েছেন মুঠো মুঠো সোনা। তার ব্যক্তিজীবন নিয়েও ছিল ভক্ত-শ্রোতাদের তুমুল আগ্রহ।
পপ, আরঅ্যান্ডবি, রক, সোল, ফাঙ্ক, ডিস্কো জেনারে কাজ করা মাইকেল জ্যাকসন ছিলেন জ্যাকসন পরিবারের অষ্টম সন্তান। মাত্র ৫ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে পেশাদার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তখন জ্যাকসন ফাইভ নামে ব্যান্ড-এর সদস্য হিসেবে গান গাইতেন। ১৯৭১ সাল থেকে মাইকেল একক শিল্পী হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। এই সময় প্রকাশ পায় তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম। ভিন্ন ধরনের নাচ আর গায়কীতে পপসংগীতে নতুন ধারার সংযোজন হয় তার হাত ধরে।আশির দশক থেকে মাইকেল সংগীতশিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করেন। এই সময় ‘বিট ইট’ ‘বিলিজিনি’ ‘থ্রিলার’ গানগুলো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার রেকর্ড সৃষ্টি করে। তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন সংগীতশিল্পী যিনি এমটিভিতে বিপুল জনপ্রিয়তা পান। বলা হয়ে থাকে, তার গাওয়া গানের ভিডিওর মাধ্যমেই এমটিভির প্রসার ঘটেছিল। গানের তালে তালে তার নাচের কৌশলগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মাইকেলের জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রবোট ও মুনওয়াক রয়েছে। মুনওয়াক আসলে হলো সামনের দিকে হাঁটার দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করে পেছনে যাওয়ার ভঙ্গিমা যেখানে তিনি সুনিপুণ অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন নাচের পাশাপাশি। এমন কারুকাজের জন্য সারাবিশ্বের সব নৃত্যশিল্পীরা মাইকেল জ্যাকসনকে প্রায়ই শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন।
ব্যক্তিজীবনে নানা এক্সপেরিমেন্ট করেছেন তিনি নিজের ওপর। চেহারার প্লাস্টিক সার্জারি করেও আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য কোটি কোটি ডলার দান করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে গড়েছিলেন লিউকেমিয়া এবং ক্যান্সার ইনস্টিটিউট। ১৯৯৬ সালে তার আয়ের অর্থ দিয়ে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
সংগীত, নৃত্য এবং ফ্যাশন জগৎসহ ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে চার দশকেরও অধিককাল ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকা মাইকেল জ্যাকসন মৃত্যুর আগে তার ‘দিস ইজ ইট’ কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দিন-রাত তিনি মহড়া করেছিলেন এর জন্য। কিন্তু কনসার্টের আগেই মাত্র ৫০ বছর বয়সে ২০০৯ সালের ২৫ জুন লাখ লাখ ভক্তকে কাঁদিয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তার মৃত্যু দিন।