শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

এই নীল মণিহার...

আলী আফতাব

এই নীল মণিহার...

লাকী আখন্দ

সময়টা ছিল ২০০৯ সাল। একটি ইন্টারভিউর জন্য লাকী আখন্দের কাছে ফোন করি। তিনি এক সকালে আমাকে রমনা পার্কে আসতে বলেন। একদিন এক সকালে আমি রমনা পার্কে গিয়ে উপস্থিত হই। পার্কের একটি বেঞ্চিতে অপেক্ষা করতে থাকি। খানিকটা সময় পর দেখতে পেলাম দূর থেকে লাকী আখন্দ জগিং করে আসছেন। পরনে জলপাই রঙের শার্ট, মাথায় ধূসর রঙের একটি টুপি। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াই এবং আমার পরিচয় দেই। ইন্টারভিউর খাতিরে ওই প্রথম তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। ২০০৯ সালে পার্কে দেখা লাকী আখন্দ আর ২০১৬ সালে রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলা বাড়িতে দেখা লাকী আখন্দকে কেমন যেন মেলাতে পারছিলাম না। ঠিক গির্জার পাশের এ ভবনটিতে মিশে আছে অনেক স্মৃতি। মনে হয় দেয়ালে কান পাতলে শোনা যাবে ‘এই নীল মণিহার’, ‘রীতিনীতি কি জানি না’, ‘মামনিয়া’, ‘আগে যদি জানতাম’, ‘হৃদয় আমার’, ‘সুমনা’, ‘তোমার স্বাক্ষর আঁকা’র মতো গান।

বাঁকানো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিলেন শিল্পী নিজে। নিজের পরিচয় দিতেই মিলে গেল লাকী আখন্দের ঠোঁটে সেই সুমিষ্ট হাসি।

অসুস্থতার কারণে প্রায় বছরখানেক সময় তিনি গান থেকে দূরে ছিলেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এ শিল্পী। ব্যাংককের পায়থাই হাসপাতালে ভর্তি হন লাকী আখন্দ। প্রথম দফায় শরীরে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হলে অক্টোবরের প্রথমদিকে ঢাকায় ফিরেন। পরে দ্বিতীয় দফা চিকিৎসায় আবারও ব্যাংকক যেতে হয় শিল্পীকে। এখন দেশে ফিরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছে নিয়মিত বিশ্রাম, খাওয়া দাওয়া আর দিনযাপন। তবে এখন আগের চেয়ে সুস্থ আছেন। কিন্তু গানের মানুষ কি গান ছাড়া থাকতে পারে? সম্প্রতি আবারও হাত রেখেছেন কী-বোর্ডে। শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীতের জন্য নতুন করে সংগীতায়োজন করছেন তিনি। এরই মধ্যে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ ‘তুমি কোন কাননের ফুল কোন গগনের তারা’র সংগীতায়োজনের কাজ শেষ করেছেন। ড. আনিসুজ্জামানের ওপর নির্মিত একটি ডকুমেন্টারির জন্যই গানগুলো নতুন করে করছেন। এসব গানে লাকি আখন্দ নিজে কণ্ঠ দিয়েছেন। এছাড়া ‘প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন’- গানটিরও কাজ চলছে। এছাড়াও সম্প্রতি কিছু ব্যতিক্রম নতুন লিড়িক হাতে পেয়েছেন। তবে গত ৪০-৫০ বছর একই ধরনের লিড়িক তাকে ব্যথিত করে তুলেছে। এ নিয়ে দুঃখও রয়েছে তার। বললেন, ‘দুঃখের গান করতে করতে আমি নিজেও অ্যাবনরমাল হয়ে গেছি। এত দুঃখ রাখব কোথায় বলো? লাকী আখন্দের সুরারোপে করা প্রতিটি গানের কথার ওপর সুরের যে প্রভাব তা যে সবাইকে মুগ্ধ করে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। আর এ কারণে তাকে সুরের বরপুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে অনেকেই। সুর ও সংগীতায়োজনের নান্দনিক ও বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনে তিনি কিংবদন্তি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর