রবিবার, ১০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিজ্ঞাপনের ভিড়ে হারিয়ে গেছে ঈদানন্দ

টিভি অনুষ্ঠান মানেই বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা। আর ঈদের অনুষ্ঠান হলে তো কথাই নেই। দর্শকদের ধৈর্যের পরীক্ষা বাড়িয়ে দেয় টিভি চ্যানেলগুলো। প্রায় এক দশক ধরে এ অবস্থা চলছে।  যদিও এ বছর বিজ্ঞাপনের আধিক্য দু-একটি চ্যানেলে কম, তবুও দর্শকের অভিযোগের অন্ত নেই। এ নিয়ে কয়েকজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আমজাদ হোসেন

চলতি বছর কয়েকটি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের মাত্রা কিছুটা কম ছিল। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বলব, টেলিভিশন চালাতে গেলে বিজ্ঞাপন দরকার। আর সাধারণ দর্শক হিসেবে বলতে হয়, বিজ্ঞাপন কী সীমিত আকারে চালানো যায় না। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপনের রেট বাড়িয়ে দিয়ে প্রচারের পরিমাণ কমানো হোক। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মান। মান ভালো হলে কষ্ট করে দর্শক অনুষ্ঠান দেখে। এখন তো মানের অভাবে অনুষ্ঠান দেখাই ছেড়ে দিয়েছে দর্শক। আগে কোনো অনুষ্ঠান নির্মাণ বা তাতে পারফর্ম করলে সঙ্গে সঙ্গে দর্শক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেত। সাধারণ মানুষ বলত, কাল অমুক অনুষ্ঠান বা অমুক নাটকে আপনাকে দেখেছি। আর এখন অনেক কাজ করলেও দর্শক বলে আপনাকে আগের মতো আর ছোট পর্দায় দেখি না। মানে বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা আর মান না থাকায় দর্শক ছোট পর্দাবিমুখ হয়ে পড়েছে। এখন যে একেবারেই ভালো অনুষ্ঠান হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। সংখ্যা খুব কম। এর জন্য দায়ী বাজেট। টিভি চ্যানেলগুলো থেকে যে অর্থ পাওয়া যায় তা দিয়ে মানসম্মত অনুষ্ঠান নির্মাণ সম্ভব নয়।  তাই বলব, বিজ্ঞাপননির্ভরতা কমিয়ে কীভাবে মানসম্মত অনুষ্ঠান প্রচার করা যায় সেই চিন্তা আগে করা দরকার।

 

হানিফ সংকেত

‘বিজ্ঞাপনের ভিড়ে হারিয়ে গেছে ঈদ আনন্দ’— এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই। এখন বিজ্ঞাপন প্রচার কমে আসছে। আসলে মানহীন অনুষ্ঠানের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঈদ আনন্দ। অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো জবাবদিহিতা নেই। অনুষ্ঠানে ভেজাল ঢুকে পড়েছে। কার্বাইড দিয়ে জোর করে যেমন আম পাকানো হয় তেমনি জোর করে অনুষ্ঠান নির্মাণ চলছে। একই টকশো, একই ধরনের আলোচনা। গতানুগতিকতা থেকে বের হতে পারছে না অনেকেই। আনন্দের জন্য ভেরিয়েশন দরকার। যেমন ইত্যাদিতে ভেরিয়েশন আনার চেষ্টা করি। সাধারণভাবে গান উপস্থাপন না করে এবার দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দিয়ে গানের পর্ব সাজিয়েছি। বিদেশিদের দিয়ে গ্রামবাংলার নানা বিষয় তুলে ধরেছি। আসলে অনুষ্ঠানের মান ফেরাতে গবেষণা আর চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। টিভি অনুষ্ঠান এখন বিরতিহীন, অল্প বিরতি, স্বল্প বিরতির নামে চলছে। মানে পুরোপুরি ব্যবসার দিকে চলে যাচ্ছে। অনুষ্ঠান হয়ে পড়ছে এজেন্সিনির্ভর। কমিটমেন্ট নেই। সোশ্যাল ম্যাসেজ তুলে ধরাই হচ্ছে টিভি অনুষ্ঠানের কাজ। বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ম্যাসেজ তুলে ধরতে হবে।  না হলে শুধু ঈদের নয়, সব অনুষ্ঠানের আনন্দই আরও হারাতে থাকবে।

 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

কিছু কিছু টেলিভিশন চ্যানেল অল্প বিরতি বা বিরতিহীন অনুষ্ঠান চালাচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ অনুষ্ঠান বিজ্ঞাপনের চাপে জর্জরিত। টিভি চ্যানেলগুলোর ভাবার সময় হয়েছে কী করে কম রেটে বেশি বিজ্ঞাপনের পরিবর্তে বেশি রেটে কম বিজ্ঞাপন দিয়ে লাভবান হওয়া যায়। এর একটিই সূত্র আছে। যা আমি উল্লেখ করতে চাই। আর তা হচ্ছে— আপনাকে আপনার কাজ ইউনিকলি তৈরি করতে হবে। এর পেছনে প্রয়োজনে বেশি অর্থ ও ভাবনা ব্যয় করেন এবং নিশ্চিত করেন যে, অনুষ্ঠানটি যেন অন্য ২০টি অনুষ্ঠানের চেয়ে আলাদা করা যায়। এটি টেলিফিল্ম, আড্ডা কিংবা অন্য যে কোনো অনুষ্ঠান হোক।

এবারের ঈদের অনুষ্ঠান দেখে যেটা আমার উপলব্ধি হয়েছে তা হচ্ছে, আমরা ক্রমে ক্রমেই চিন্তার দৈন্যতার চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আমরা হারিয়ে যাব টিভি অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য থেকে। বলা যায়, এখন আমরা মুমূর্ষু অবস্থায় আছি। এ অবস্থায় বেঁচে ওঠাও যেমন সম্ভব, মৃত্যু হওয়াও সম্ভব। বোধ হয় বেঁচে ওঠাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এরচেয়ে বেশি আর কিছু বলতে চাই না।  শুধু বলব, টিভি ইন্ডাস্ট্রি বাঁচান সবাই মিলে।

সর্বশেষ খবর