বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

টিভি নাটকে স্বকীয়তা চাই

এবারের ঈদেও ছোট পর্দার বেশ কিছু নাটক নির্মিত হয়েছে হিন্দি সিরিয়ালের অনুকরণে। কতিপয় নির্মাতা নিজেদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও কথা বলার ঢং বাদ দিয়ে ঝুঁকেছেন নিন্দনীয় নকলের দিকে। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ দর্শক থেকে নাট্য-সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে কয়েকজন মিডিয়া ব্যক্তিত্বের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

মামুনুর রশীদ

ভারতীয় সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান অনুকরণ করা একটি জঘন্য কাজ। দেশের স্বকীয়তা ও সংস্কৃতি ধ্বংসের অপতত্পরতা। যারা এ কাজ করছে তারা অবশ্যই ঘৃণ্য কাজ করছেন। এগুলো একেবারেই বন্ধ করা উচিত। এভাবে অনুকরণের মাধ্যমে দর্শক কখনই বাড়বে না। কারণ হিন্দি সিরিয়াল সবাই সরাসরি দেখতে পাচ্ছে। ওগুলো বাদ দিয়ে দর্শক অনুকরণের নাটক দেখবে কেন? এতে নতুন করে সৃজনশীলতা তৈরি হচ্ছে না, তৈরির চেষ্টাও করছে না কেউ। অর্থের অপচয় ও মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে দেশে নির্মাতা, শিল্পীসহ হাজার হাজার মিডিয়া কর্মী তৈরি হচ্ছে।

কিন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে কমিটমেন্টের অভাব। নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে চিন্তা-চেতনা নেই। এমন সব উদ্ভট কাজ ও চিন্তাভাবনা পরিহার করতে হবে।  না হলে বাঙালি সংস্কৃতি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

যারা ভাবছেন জি বাংলা বা স্টার প্লাসের মতো নাটক বানালে জনপ্রিয়তা পাওয়া যাবে তারা আসলে ভুলের রাজ্যে আছেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ হচ্ছে নিজের ঢংয়ে নিজেদের গল্প বলতে হবে।  আমাদের এখানে নিজস্ব ঢংয়ে অনেক নাটক নির্মাণ হয় এবং জনপ্রিয়তা পায়। যেমন— আরমান ভাই সিরিজ, সিকান্দার বক্স, এয়ারটেল এইটিন অলটাইম দৌড়ের ওপরসহ বেশ কিছু প্রোডাকশন, চক্র, রাতার গুল, ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে প্রেম এবং তাহসান-তিশার বেশ কিছু নাটকসহ এ রকম যত প্রোডাকশন আলোচিত হয়েছে সবই নিজের ঢংয়ে বানানো। এর একটিও জি বাংলা অথবা স্টার প্লাসের ফর্মুলা চুরি করেনি। যে কাজগুলোর কথা উল্লেখ করলাম এগুলো কলকাতার ইয়ংদের কাছেও অনেক জনপ্রিয়। সুতরাং অন্যের ফর্মুলায় না হেঁটে নিজের ফর্মুলা ও স্টাইল তৈরি করতে হবে।

 

গিয়াসউদ্দিন সেলিম

মানুষ যখন বানে ভেসে যেতে থাকে তখন খড়কুটা ধরে বাঁচতে চেষ্টা করে। কিছু চ্যানেল নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারছে না বলে স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে অন্যের পেছনে ছুটছে, অন্যের কাজ নকল করছে। ভারতীয় সিরিয়ালগুলো অর্থহীন ভঙ্গিতে জটিলতা, কুটিলতা দেখায়। এ দেশের অনেক নির্মাতা তাদের এই মানহীন কাজকে অল্প পয়সায় নির্মাণ করে বেশি মুনাফা লাভ করতে চায়। দর্শক এসব দেখছে না। এক সময় আমাদের বিটিভির নাটকের স্বকীয়তা ছিল। এগুলো শুধু দেশে নয়, ভারতেও জনপ্রিয় ছিল। আমাদের আবার নিজস্বতা তৈরি করতে হবে। অনুকরণ পরিহার করতে হবে। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে যদি আমরা আমাদের মতো করে এগোতে পারি তাহলে টিভি নাটক বা চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে কেন পারব না। আমি মনে করি, আমাদের মতো করে নির্মাণের সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।

 

অনিমেষ আইচ

হিন্দি সিরিয়ালের অনুকরণে নাটক নির্মাণ শুধু দুঃখজনক নয়, লজ্জাজনকও বটে। ভারতীয় টিভি চ্যানেলের এসব নাটক আমাদের জীবন-যাপন ও সংস্কৃতির বাইরে। যারা এ কাজ করছে তারা মহা ভুল করছে। নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার নামান্তর এসব অনুকরণের নির্মাণ। নতুন প্রজন্ম এসব দেখতে গিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাবে। তাই এখনই এই বিভ্রান্তিকর বাণিজ্যিকীরণের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই চেষ্টা ভুল এবং খারাপ চর্চা। আমাদেরকে আমাদেরই ঢংয়ে নির্মাণ এবং নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। না হলে আমাদের সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবীতে বাঙালিই একমাত্র জাতি যে কিনা নিজস্ব ভাষা আর সংস্কৃতির জন্য যুদ্ধ করেছে। তাহলে আমরা এখন আমাদের স্বকীয়তা বিসর্জন দেব কেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর