বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
নির্মাণ হয়নি অনুদানের চলচ্চিত্র

অভিযুক্ত পাঁচ নির্মাতা

শোবিজ প্রতিবেদক

অভিযুক্ত পাঁচ নির্মাতা

সরকারি অনুদান নিয়ে বছরের পর বছর ছবি না নির্মাণের দায়ে প্রাথমিকভাবে পাঁচ নির্মাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনেক বছর ধরে সরকারের অনুদান পাওয়া বেশির ভাগ চলচ্চিত্র সঠিক সময়ে নির্মাণ হচ্ছে না। অনুদান পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্র জমা ও মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ পরিচালক তা করছেন না। উল্টো নানা অজুহাতে বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত ৯ বছরে ৪০টির বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণের লক্ষ্যে অনুদান দেওয়া হলেও মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১৫টি। যা তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র বিভাগকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে বলেও মনে করেন এই বিভাগের কর্তারা।

তাই অনুদান হাতে নিয়ে আর কোনো গড়িমসি করার সুযোগ পাচ্ছেন না নির্মাতারা। অনুদান পাওয়ার পর গত কয়েক বছর নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ শেষ না করা এবং ছবি জমা না দেওয়ার কারণে এবার পাঁচ পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে তথ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের পক্ষে তথ্য সচিব বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। ইতিমধ্যে মামলার সব কাগজপত্র জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দফতরে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, অভিযুক্ত পাঁচ পরিচালক হলেন— ‘নেকড়ে অরণ্য’ ছবির জন্য ২০১১-১২ অর্থবছরে অনুদানপ্রাপ্ত পরিচালক মারুফ হাসান আরমান, একই অর্থবছরে ‘একা একা’ চলচ্চিত্রের জন্য সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘যৈবতী কন্যার মন’ চলচ্চিত্রের জন্য নারগিস আক্তার, একই অর্থবছরে ‘খাঁচা’ চলচ্চিত্রের জন্য খান শরফুদ্দীন মোহাম্মদ আকরাম ও ‘কাঁটা’ চলচ্চিত্রের জন্য টোকন ঠাকুর।

এর মধ্যে মারুফ হোসেন আরমানের বিরুদ্ধে ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪৬৩ টাকা, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর বিরুদ্ধে ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮২২ টাকা, নারগিস আক্তারের বিরুদ্ধে ২৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪১ টাকা, খান শরফুদ্দীন মোহাম্মদ আকরামের বিরুদ্ধে ২৪ লাখ ২৫ হাজার ১৫৬ টাকা ও টোকন ঠাকুরের বিরুদ্ধে ১৩ লাখ ৪ হাজার ৯৪৭ টাকার পিডিআর অ্যাক্ট অনুযায়ী সার্টিফিকেট মামলার প্রস্তুতি চলছে এখন।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জি এন নাজমুল হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মামলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি আমরা। এটা নিশ্চিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে তাদের আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়েও জানিয়েছি, তাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি। এখন আমরা বাধ্য হয়েই আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি।’

এদিকে উপ-সচিব আরও জানান, শুধু এই পাঁচ নির্মাতার বিরুদ্ধেই মামলা করে থামছে না মন্ত্রণালয়, বরং এর মাধ্যমেই এ পদক্ষেপের শুরু হলো। এ পর্যন্ত যারাই অনুদান পেয়ে চলচ্চিত্র সঠিক সময়ে জমা দেননি তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে চলচ্চিত্র পরিচালক সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী বলেন, ‘দেখুন আমার শরীর অসুস্থ ছিল। সে জন্যই ছবিটি শেষ করতে সময় লাগছে। যেটা আমি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারাও আমাকে সময় দিয়েছে। বরাবরই তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেয়েছি। আশা করছি শিগগিরই ছবিটি শেষ করে ফেলব।’ পরিচালক নারগিস আক্তার বলেন, ‘ইতিমধ্যে ছবির কাজ ৭৫ ভাগ শেষ করেছি। জুন মাসে আউটডোরে গিয়ে বৃষ্টির কারণে ৫ দিনের মধ্যে দুই দিনের শুটিং করতে পেরেছি। এরপর রমজান শুরু হওয়ায় রমজানের পর ১২ জুলাই থেকে কাজ শুরু করার কথা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। কিন্তু ইতিমধ্যে গুলশান এবং শোলাকিয়া ট্র্যাজেডি ও আবহাওয়া খারাপ থাকায় কোনো আর্টিস্টকে তাদের পরিবার আউটডোরে শুটিংয়ে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে আমি আটকা পড়ে গেছি। গতকাল মন্ত্রণালয়কে আবার চিঠি দিয়ে এই কথা জানিয়েছি এবং সেপ্টেম্বরে নেত্রকোনায় ছবির বাকি শুটিং শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ করতে চাই যে, ছবিটি যেহেতু সেলিম আলদিনের বিখ্যাত রচনা ‘যৈবতী কন্যার মন’ অবলম্বনে নির্মাণ হচ্ছে তাই সাধারণ ছবির মতো এর কাজ করা সম্ভব নয়, প্রতিটি দৃশ্য অনুযায়ী লোকেশন নির্বাচন করে এর শুটিং করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই স্বাভাবিকভাবেই অন্য ছবির চেয়ে এর নির্মাণে সময় বেশি লাগছে। তা ছাড়া এ ছবিটির আর্কাইভ ভেল্যু রয়েছে। আমি এর স্বত্ব কিনে নিয়েছি বলে অন্য কেউ এটি আর নির্মাণ করতে পারবে না। সবকিছু বিবেচনা করে মন্ত্রণালয় আমাকে প্রার্থিত সময় মঞ্জুর করবে বলে আশা করছি।’

আরেক নির্মাতা টোকন ঠাকুর ফোন রিসিভ করেননি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর