শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

নায়িকা থেকে নির্মাতা

নায়িকা হয়ে বড় পর্দায় আসেন তারা। পরে হলেন নির্মাতা। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেন। উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। এমন কয়েকজন নায়িকার কথা উল্লেখ করেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

নায়িকা থেকে নির্মাতা

সুচন্দা

সুচন্দা ১৯৬৫ সালে অভিনয় শুরু করেন প্রখ্যাত অভিনেতা কাজী খালেকের একটি প্রামাণ্যচিত্রে। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘কাগজের নৌকা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৬৬ সালে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সালে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে জহির রায়হান নির্মিত চলচ্চিত্র বেহুলায় অভিনয় করেন। এতে তিনি রাজ্জাকের বিপরীতে অভিনয় করেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া’। এ ছবিটিও পরিচালনা করেন জহির রায়হান। এ ছাড়াও ষাটের দশকের শেষের দিকে গোলাম মুস্তাফার বিপরীতে চাওয়া পাওয়া, আজিমের বিপরীতে নয়নতারা, রাজ্জাকের বিপরীতে সুয়োরানী দুয়োরানী এবং সত্তরের দশকে যে আগুনে পুড়ি, কাঁচের স্বর্গ, অশ্রু দিয়ে লেখা তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। জহির রায়হানের জীবদ্দশায় টাকা আনা পাই ও প্রতিশোধ চলচ্চিত্র দুটি প্রযোজনা করেন। এ ছাড়াও তিনকন্যা, বেহুলা লখিন্দর, বাসনা ও প্রেমপ্রীতি চলচ্চিত্রগুলো প্রযোজনা করেন। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘সবুজ কোট কালো চশমা’। ২০০৫ সালে স্বামী জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের আলোকে একই শিরোনামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং সেরা প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। অভিনয়ের জন্য একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মাননা অর্জন করেন তিনি। অভিনেত্রী ও নির্মাতা, দুভাবেই সফল হন সুচন্দা।

 

সুজাতা

১৯৬৩ সালে ‘দুই দিগন্ত’ ছবিতে নৃত্যশিল্পী হিসেবে অভিষেক সুজাতার। তখন তার প্রকৃত নাম তন্দ্রা মজুমদার নামেই চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। একই বছর কাজী খালেকের ‘মেঘ ভাঙা রোদ’ ও সালাউদ্দীনের ‘ধারাপাত’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ‘ধারাপাত’ ছবিতে সালাউদ্দীন তাকে সুজাতা নামে অভিনয় করান। ১৯৬৫ সালে ‘রূপবান’ ছবিটি মুক্তি পেলে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান তিনি। তাকে এখনো রূপবান কন্যা নামেই ডাকা হয়।

১৯৬৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০টি ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন সুজাতা। সুজাতা নির্দেশিত একমাত্র চলচ্চিত্র ‘অর্পণ’। আশির দশকে এই ছবিটি নির্মাণের মাধ্যমে নির্মাতা হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ।এটি তার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে নির্মিত হয়েছিল। সুজাতার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থাগুলো হচ্ছে ‘সুজাতা প্রোডাকশন্স’, ‘এস এ ফিল্মস’ ও ‘সুফল কথাচিত্র’। এই তিনটি প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে নির্মিত হয়েছে ‘চেনা অচেনা’, ‘টাকার খেলা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘অর্পণ’, ‘রূপবানের রূপকথা’, ‘বদলা’, ‘রং বেরং’, ‘এখানে আকাশ নীল’ ইত্যাদি। অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন , পরিচালনাও করেছেন, অনেক ছবিরই প্রযোজক , জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এখনো পাননি। এমন প্রশ্নে এই নির্মাতা অভিনেত্রীর উত্তর— ‘নাহ, আমি আজও পাইনি, কেন পাইনি জানি না। তবে এ নিয়ে কোনো দুঃখবোধ নেই আমার, দর্শক আজও আমাকে ভালোবাসেন, সম্মান করেন এটাই অনেক বড় কিছু। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ক’জন মানুষ বাঁচতে পারে বলুন। এমন সৌভাগ্য কজনারই বা হয়।

 

শাবানা

১৯৬৭ সালে এহতেশামের ‘চকোরী’ ছবির মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে শাবানার যাত্রা শুরু। নায়িকা হিসেবে প্রথম ছবিতেই সফল তিনি। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে ‘এস এস প্রোডাকশন নামে খোলেন নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা। ওই বছরই প্রখ্যাত চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমানকে দিয়ে নির্মাণ করেন ‘মাটির ঘর’ ছবিটি। প্রযোজক হিসেবে প্রথম ছবিতেই সাফল্য পেয়ে যান তিনি। এরপর আরও প্রায় ২৫টি ছবি প্রযোজনা করেন শাবানা। এর সবগুলোই সফল। এর মধ্যে নাজমা, দুই পয়সার আলতা, লাল কাজল, আমি সেই মেয়ে উল্লেখযোগ্য। অভিনেত্রী ও প্রযোজক দুই ভাবেই সফল তিনি। পরিচালনায় আসার কথা থাকলেও ১৯৯৩ সালে হঠাৎ করে চলচ্চিত্রজগৎ ছেড়ে প্রবাসী হওয়ার কারণে আর নির্দেশনায় আসেননি তিনি।

 

ববিতা

১৯৬৭ সালে ‘সংসার’ ছবির মাধ্যমে ববিতার চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ। ১৯৬৯ সালে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবিতে। প্রথম ছবিতেই সাফল্য পান তিনি। গ্লামার ও অভিনয় দক্ষতা দিয়ে অভিনয়ের শুরুতেই জনপ্রিয়তা পেয়ে যান তিনি। কলকাতার নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ ছবিতে অভিনয় করে দেশ-বিদেশে সমান প্রশংসিত ও আন্তর্জাতিক অভিনেত্রীর খেতাব পান তিনি।

প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হন তিনি। আশির দশকে ‘ফুলশয্যা’ ছবিটি প্রযোজনার মাধ্যমে নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। এরপর অনেক ছবি প্রযোজনা করেন। তার প্রযোজিত ‘পোকা মাকড়ের ঘর বসতি’ ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। মানে অভিনেত্রী ও নির্মাতা, দুইভাবেই সফল হন ববিতা।

 

কবরী

১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় জীবনের শুরু কবরীর। প্রথম ছবিতেই সফল এই অভিনেত্রী বর্তমান পর্যন্ত তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। লাভ করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অগণিত জাতীয়-আন্তর্জাতিক সম্মাননা।

দুই হাজার সালের প্রথমদিকে এসে নির্মাণে আত্মপ্রকাশ তার। কবরীর প্রথম পরিচালিত ছবির শিরোনাম ‘আয়না’। ছবিটি দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি কয়েকটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। মানে নির্মাতা হিসেবেও সফল হন তিনি। বর্তমানে আবারও চলচ্চিত্র পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে এই অভিনেত্রীর। কবরী একজন সফল অভিনেত্রী ও নির্মাতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন এদেশের চলচ্চিত্র জগতে।

মৌসুমী

১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পদার্পণ করেন মৌসুমী। ২০০১ সালে নার্গিস আক্তার পরিচালিত ‘মেঘলা আকাশ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অর্জন করেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০০৩ সালে তার নিজের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’।

২০১৩ সালে নন্দিত কথাসাহিত্যিক শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস দেবদাস অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে চন্দ্রমুখী চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৩ সালে ‘তারকাঁটা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য লাভ করেন তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০০৩ সালে ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ দিয়ে মৌসুমী চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে পরিচালনা করেন ‘মেহের নিগার’।

অভিনেত্রী ও নির্মাতা, দুই রূপেই সফলতার সাক্ষর রাখেন মৌসুমী। বর্তমানেও তিনি ছবি পরিচালনা, প্রযোজনা আর অভিনয়ে সমান ব্যস্ত রয়েছেন। একই সঙ্গে অটুট রয়েছে তার জনপ্রিয়তা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর