মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

যৌথ প্রযোজনায় সুবাতাস

আলাউদ্দীন মাজিদ

যৌথ প্রযোজনায় সুবাতাস

রাজ্জাক, সুচন্দা, ছটকু আহমেদ, শাকিব খান ও খোরশেদ আলম খসরু

যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণে আগ্রহ বাড়ছে। এই নিয়মে ছবি নির্মাণকে স্বাগত জানিয়ে আসছেন চলচ্চিত্রকাররা। তাদের কথায়, যথাযথ নীতিমালার ভিত্তিতে সঠিকভাবে যৌথ আয়োজনে ছবি নির্মাণ হলে দুই বাংলার চলচ্চিত্র জগৎ উপকৃত হবে। কারণ হিসেবে ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘শিকারি’ ও ‘বাদশা’ ছবি দুটির ব্যবসায়িক সাফল্যের কথা উল্লেখ করা হয়। অনেকের কথায়, ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘শিকারি’ ছবিটিতে শাকিব খানকে নতুন লুকে দেখা গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে যথাযথ বাজেটের ফলে। তাই এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, সঠিক নিয়মে যৌথ আয়োজনের চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে অবশ্যই দুই পক্ষ লাভবান হবে। সম্প্রতি এক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। এটি ঠিক নয়। এমন ছবি কোনো দেশেই চলে না। যথাযথভাবে নির্মাণ করে আগে যেভাবে সুফল পাওয়া গেছে ঠিক সেভাবেই নির্মাণ করতে হবে।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ছটকু আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে যে নীতিমালায়  নির্মাণ হয়েছে তাতে দুই দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে। হুট করে ২০১২ সালে যে হঠকারী নীতিমালা তৈরি হয়েছে তাতে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। ক্ষতিকর এই নীতিমালা বাতিল করা হোক। ১৯৮৬ সালের যৌথ প্রযোজনা নীতিমালায় বলা হয়, সব দেশের শিল্পীর সমানহারে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বাধ্যতামূলক। ২০১২ সালে সে নীতিমালায় পরিবর্তন এনে এতে বলা হয়, দুই দেশের নির্মাতারা আলোচনার মাধ্যমে ছবি নির্মাণের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। এ সিদ্ধান্তই এখন বাংলাদেশের নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, আমি যৌথ প্রযোজনার পক্ষে। কারণ আমাদের দেশে এখন চলচ্চিত্র ব্যবসা ভালো নয়। সিনেমা হল উদ্বেগজনকহারে কমেছে। ছবির বাজার সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে যৌথ আয়োজনে ছবি নির্মাণ করা গেলে লগ্নিকারক, দুই দেশের সিনেমা হলসহ অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। পশ্চিমবঙ্গে ৪০টি মাল্টিপ্লেক্স রয়েছে। সেই হিসেবে তাদের ব্যবসা আমাদের তুলনায় ভালো। এক্ষেত্রে দুই বাংলা একত্রিত হয়ে নির্মাণ করলে উভয় দেশের চলচ্চিত্র ব্যবসা জমবে ভালো। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমাদের বর্তমান দুর্বল অবস্থানের সুযোগে অন্য দেশের কেউ যাতে আমাদের বাজারকে ডোমিনেট করার সাহস না পায়। যা সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কলকাতার ব্যবসায়ীরা আমদানিকারক হয়ে এখানে তাদের ছবি মুক্তি দেওয়ার সাহস দেখাচ্ছে। যা আমাদের চলচ্চিত্র জগতের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব অব্যবস্থা দূর করতে দরকার সময়োপযোগী নীতিমালা। ১৯৮৬ সালের নীতিমালা যথাযথ ছিল বলেই তখন এই আয়োজন নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিল না এবং দুই দেশই লাভবান হয়েছে। ২০১২ সালের অস্পষ্ট নীতিমালা এখন দুই পক্ষকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তাই এটির আশু পরিবর্তন দরকার। শুধু যৌথ আয়োজন নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না, আমাদের চলচ্চিত্রের ব্যবসাকে চাঙ্গা করতে নির্মাণ এবং প্রদর্শন থেকে শুরু করে সব দিক লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রদর্শনে অনিয়মের কারণে দর্শক সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখতে আবার আগ্রহ হারাচ্ছে। ঈদে যশোরের মণিহার সিনেমা হলে ছবি চলার সময় সেখানে জাজ মাল্টিমিডিয়া স্থাপিত নিম্নমানের মেশিন ব্রেক ডাউন হলে দর্শক উত্তেজিত হয়ে সিনেমা হলটিতে ভাঙচুর করে। সম্প্রতি ঢাকার আজাদ সিনেমা হলে ‘কেলোর কীর্তি’ ছবিটি প্রদর্শনের সময় কলকাতার শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ও বিজয় খেমকা স্থাপিত মেশিন ব্রেক ডাউন করলে উত্তেজিত দর্শক হলটিতে ভাঙচুর চালায়। সারা দেশেও এমন সমস্যার কবলে পড়তে হচ্ছে দর্শক ও সিনেমা হল মালিকদের।

এতে হতাশ হয়ে পড়েছে প্রদর্শক সমিতি। তারা এ ধরনের ধোঁকাবাজির বেসরকারি ব্যবসা বন্ধ করে সরকারিভাবে সিনেমা হলে প্রজেক্টর মেশিন স্থাপন চায়। যা সরকার কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েও রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছে। সরকারি উদ্যোগ ছাড়া চলচ্চিত্র ব্যবসার উন্নয়ন

সম্ভব নয়।

প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ১২শরও অধিক ছিল। ২০১০ সালের পর সে সংখ্যা কমে গিয়ে প্রায় ২৫০-এ দাঁড়িয়েছে। দর্শকশূন্যতায় হল মালিকরা সিনেমা ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাই সিনেমা সংশ্লিষ্টরা দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্পকে বাঁচাতে যৌথ প্রযোজনার প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের দর্শক যদি একসঙ্গে ছবি দেখেন তাহলে সিনেমা ব্যবসা প্রাণ ফিরে পাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশি সিনেমাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়াও ছিল একটি লক্ষ্য। মূলত এ চিন্তাভাবনা থেকেই যৌথ প্রযোজনার প্রতি আগ্রহী হন নির্মাতারা।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুচন্দা বলেন, যৌথ প্রযোজনাকে আমি ভালো উদ্যোগ বলব। তবে এক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা অবশ্যই প্রয়োজন। এই আয়োজনে নির্মাণ করলে সিনেমা হলের সংখ্যা বেশি থাকায় লগ্নিকারকরা নির্দ্বিধায় নির্মাণে আসেন। কারণ এতে ব্যবসায়িক ঝুঁকি থাকে না। যথাযথভাবে বিনিয়োগ হয়। এতে ছবির সব দিক উন্নতভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। যেমন ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘শিকারি’ ছবিটিতে শাকিব খানকে একেবারেই নতুন লুকে পাওয়া গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে পর্যাপ্ত বাজেটের ফলে। যখন উন্নত বাজেট পাওয়া যায় তখন আর কোনো কিছুতে পিছুটান থাকে না। নির্মাতা গবেষণার মাধ্যমে নির্মাণকে উন্নত করেন। ছবির মানকে শতভাগ রক্ষার চেষ্টা করেন। তাই যৌথ প্রযোজনায় বেশি করে ছবি নির্মাণ হওয়া উচিত। শাকিব খান বলেন, যদি নিয়ম-নীতি মেনে উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষা করে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ করা যায় তাহলে এটি অবশ্যই ভালো। এর সুফল উভয় দেশের চলচ্চিত্রকার এবং দর্শক পাবেন। যার প্রমাণ ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘শিকারি’ ও ‘বাদশা’ ছবি দুটি। যথাযথ যৌথ নির্মাণে সত্যিকারের ছবি নির্মাণ সম্ভব। যেহেতু দুই বাংলারই চলচ্চিত্র ব্যবসা এখন ভালো নয়। তাই দুই পক্ষ মিলে ছবি নির্মাণ করলে নিঃসন্দেহে মানসম্মত ছবি পাওয়া যাবে। এতে দুই দেশেরই চলচ্চিত্র ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর