শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মহড়া কক্ষের সংকটে মঞ্চনাটক

মোস্তফা মতিহার

পর্যাপ্ত মহড়া কক্ষের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে মঞ্চ নাটকের চর্চা ও প্রসার। স্বাধীনতা-উত্তরকালে নাটকের এই ক্ষেত্রটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত হলেও প্রতিকূল পরিস্থিতি ও নানা সংকটের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে অঙ্গনটি। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সর্বোপরি দেশের সব সংগ্রাম ও ক্রান্তিকালে এ দেশীয় নাটক গণজাগরণের পক্ষে সিপাহশালার ভূমিকা পালন করে এলেও নাটকের এই গর্ব করার অঙ্গনটিতে এখন অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে। মাত্র পাঁচটি মহড়া কক্ষ দিয়েই চলছে সমগ্র নাট্যাঙ্গনের অনুশীলন। আর সোনার হরিণের মতো এই পাঁচটি কক্ষের যে কোনো একটি ভাড়া নিতে গেলে এক সপ্তাহ আগে আবেদন করতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নাট্যকর্মী জানান, বিশেষ ক্ষমতা ও প্রভাব না থাকলে কয়েক মাস আগে আবেদন করেও মহড়া কক্ষ পাওয়া যায় না। ঘুরেফিরে একই দল ও সমপর্যায়ের দলগুলোই ভাড়া পেয়ে থাকে মহড়া কক্ষ। যে পরিমাণ মহড়া কক্ষ থাকার কথা তার অর্ধেকের চেয়েও কম মহড়া কক্ষ রয়েছে বলে নাট্যাঙ্গন থেকে বিচ্যুত হওয়ার পথে অনেক দল।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত প্রায় ৬০টি নাটকের দলসহ রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে শতাধিক নাটকের দল। আর শতাধিক নাট্যদলের মধ্যে নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন করছে অর্ধশতাধিক নাটকের দল। উৎসব, কর্মশালাসহ আনুষঙ্গিক কাজ নিয়ে নিয়মিত চর্চায় আছে আরও প্রায় ১০টি নাটকের দল। কোনো কোনো দল প্রতিবছর কিংবা কয়েক মাস অন্তর নতুন প্রযোজনাও মঞ্চে আনছে। এ ছাড়া পথনাটক পরিষদের বিভিন্ন প্রযোজনা তো রয়েছেই। এতগুলো নাটকের দলের জন্য পাঁচটি কক্ষ একেবারেই অপ্রতুল।

কয়েকজন নাট্যকর্মী জানান, এমনিতেই মহড়া কক্ষের অভাব অন্যদিকে সুবিধাভোগী কয়েকটি নাটকের দলকেই নিয়মিতভাবে মহড়া কক্ষের সুবিধা দিচ্ছে শিল্পকলা একাডেমি। যার কারণে বেশির ভাগ দলই বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে। সুবিধাভোগী দলগুলোর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে এই সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে বলেও মনে করেন নাট্যাঙ্গনের উদীয়মান নাট্যকর্মীরা।

২০১২ সালের ১ মার্চ বাংলাদেশ পথনাটক উৎসবের উদ্বোধনীতে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার উৎসবের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে মহড়া কক্ষের সংকটের বিষয়টি তুলে ধরেন। ওই সময় নুরুল ইসলাম নাহিদ নাটকের চর্চা ও অনুশীলনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে মহড়া কক্ষের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। মন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন কিংবা পথনাটক পরিষদের কোনো নেতা মহড়া কক্ষের সংকটের বিষয়ে মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন কিনা বিষয়টি নিয়ে ফেডারেশনের কোনো নেতাই নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন নাট্যকর্মী জানান, মন্ত্রীর আশ্বাসের পর ফেডারেশনের নেতারা যদি বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নিতেন তাহলে মহড়া কক্ষের সংকট এতটা প্রকট আকার ধারণ করত না, আর নাটকের চর্চায়ও ব্যাঘাত ঘটত না।

বিষয়টি নিয়ে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, মহড়া কক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে শিল্পকলা একাডেমির এগিয়ে আসা উচিত। শিল্পকলা একাডেমিসহ আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অন্তত ২০টি মহড়া কক্ষ নির্মাণ করতে পারলে এ সমস্যা থেকে নাট্যকর্মীরা পরিত্রাণ পাবেন।

নাট্যজন কেরামত মওলা বলেন, নাটকের চর্চা ও বিকাশে শিল্পকলা একাডেমির মহড়া কক্ষগুলো একেবারেই যৎসামান্য। মহড়া কক্ষের অভাবেই নাটকের বিকাশ ও চর্চা বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি এই অঙ্গন থেকে নাট্যকর্মীরাও হারিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ থিয়েটারের দলপ্রধান খন্দকার শাহ আলম বলেন, টেকনিক্যাল শো, কর্মশালা কিংবা উৎসব নিকটবর্তী মহড়া কক্ষ প্রদানে বরাদ্দের নীতিমালায় রয়েছে। কিন্তু সুবিধাভোগীদের দলের সমপর্যায়ের না হলে নীতিমালা লঙ্ঘন করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না।

সর্বশেষ খবর