বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেই লাকী আখন্দ...

আলী আফতাব

সেই লাকী আখন্দ...

লাকী আখন্দ

রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি বাড়িতে থাকেন বাংলার খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী লাকী আখন্দ। গির্জার ঠিক পাশের এই ভবনটিতে মিশে আছে তার অনেক স্মৃতি। মনে হয় দেয়ালে কান পাতলে শোনা যাবে ‘এই নীল মণিহার’, ‘রীতিনীতি কি জানি না’, ‘মামনিয়া’, ‘আগে যদি জানতাম’, ‘হৃদয় আমার’, ‘সুমনা’, ‘তোমার স্বাক্ষর আঁকা’র মতো গান। বাড়িটা ঈদের পর থেকে কেমন জানি ফাঁকা পড়ে আছে।

অসুস্থতার কারণে প্রায় বছরখানেক সময় তিনি গান থেকে দূরে ছিলেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এই শিল্পী। এরপর পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে জানা গেল, তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। কথাটা শুনেই যেন আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ল। তবে সবকিছুই খুব দ্রুত নিজের মতো করেই সামলে নিয়েছিলেন জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী।

ব্যাংককের পায়থাই হাসপাতালে ভর্তি হন লাকী আখন্দ। প্রথম দফায় শরীরে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হলে অক্টোবরের প্রথম দিকে ঢাকায় ফিরেন। পরে দ্বিতীয় দফা চিকিৎসায় আবারও ব্যাংকক যেতে হয় শিল্পীকে। এরপর দেশে ফিরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছে নিয়মিত বিশ্রাম, খাওয়া-দাওয়া আর দিনযাপন। হঠাৎ করে ঈদের পরদিন ৮ জুলাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রথমে তাকে নেওয়া হয় বারডেম হাসপাতালে। ওখানে কিছু দিন চিকিৎসা শেষে তাকে ভর্তি করা হয় ইউনাইটেড হাসপাতালে। বর্তমানে এখানেই চলছে তার চিকিৎসা।

অনেক ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা বহন করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে তার পরিবার। এরই মধ্যে সরকারের পাশাপাশি লাকী আখন্দের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আমাদের দেশের অনেক শিল্পী। এরই মধ্যে কিংবদন্তি এই শিল্পীর সম্মানে দুই দিনের কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। আজ কনসার্টে শেষ দিন। এই দুই দিনে গান পরিবেশন করে ঢাকার প্রায় ৩০টি ব্যান্ড দল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেন্দ্রের [টিএসসি] এই কনসার্টে যোগ দেওয়া সংগীতপ্রেমীরা লাকী আখন্দের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে পারবেন। কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা লাকী আখন্দ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে শয্যাশায়ী। তার চিকিৎসার জন্য ভক্ত-অনুরাগীদের এগিয়ে আসতে ‘ট্রিবিউট টু স্যার লাকী আখন্দ’ কনসার্টের উদ্যোগ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি। কনসার্টে গাইবে এই সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলো। উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয় হয়েছে। প্রিয় শিল্পীকে বাঁচাতে আকুল আবেদন সবার অন্তরে। ভক্ত-শ্রোতারাও দলে বলে এসে বুঝিয়ে দিয়ে যান, তারাও শিল্পীর সুস্থতা প্রত্যাশা করছেন।

এই সেই লাকী আখন্দ, যিনি বাংলাদেশের সংগীতে সবচেয়ে আধুনিক যুগের নিবেদিত সৈনিক। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে সরব হবেন আবার— এই প্রত্যাশা প্রতিটি হৃদয়ে। অথচ শিল্পী ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ক্যান্সার ব্যাধির বাসা তার শরীরে— পরিষ্কার করে বললে ফুসফুসে। সংগীত দমের খেলা। আর সেই দম-যন্ত্রেই [ফুসফুস] ক্যান্সার। তাই তার সুস্থতার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ। কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর আবেদন করে শিল্পী নিজের শিল্প সত্তাকে অবহেলা করতে চাননি। তবে বসে নেই ভক্তকুলের সংগ্রাম। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আর একই সঙ্গে চলছে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ— যে করেই হোক শিল্পীকে বাঁচাতে হবে।  

১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে প্রকাশ পায় অসংখ্য শ্রোতানন্দিত ও ব্যাপক জনপ্রিয় সব গানের সুরকার, সংগীত পরিচালক ও শিল্পী লাকী আখন্দের প্রথম সলো অ্যালবাম ‘লাকী আখন্দ’। বাংলা সংগীতের ক্ল্যাসিক সেই অ্যালবামের উল্লেখযোগ্য কিছু গান হলো : ‘এই নীল মণিহার, ‘আমায় ডেকোনা’, ‘মামনিয়া’, ‘আগে যদি জানতাম’, ‘হৃদয় আমার’, ‘সুমনা’, ‘তোমার স্বাক্ষর আঁকা’। অবশ্য পরবর্তীতে ‘আমায় ডেকোনা’ গানটি তিনি শিল্পী সামিনা চৌধুরীকে উপহার দেন এবং সামিনা চৌধুরী তার একক অ্যালবামে গানটি সংকলন করেন গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা ও লাকী আখন্দের সুরারোপে করা এই বিখ্যাত গানটি।

লাকী আখন্দের সুরারোপে করা প্রতিটি গানের কথার ওপর সুরের যে প্রভাব তা যে সবাইকে মুগ্ধ করে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। আর এই কারণে তাকে সুরের বরপুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে অনেকেই। সুর ও সংগীতায়োজনের নান্দনিক ও বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনে তিনি কিংবদন্তি। মেলোডি, মেলো-রক, হার্ড-রক যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই হয়ে উঠেছে এক একটি মাস্টারপিস। আর সেই শিল্পী এখন সবার সহযোগিতার দিকে তাকিয়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর