শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এখনো ঋতুপর্ণার বসন্ত...

আলাউদ্দীন মাজিদ

এখনো ঋতুপর্ণার বসন্ত...

ঢাকাই ছবিতে ঋতুপর্ণার বসন্ত সব ঋতুতেই। ঋতুর ছবি মানেই এদেশের দর্শকের কাছে প্রিয় নায়িকার ছবি। আশির দশকে শাবানা প্রযোজিত ‘স্বামী কেন আসামী’ ছবির মাধ্যমে ঢাকাই ছবিতে টালিগঞ্জের নায়িকা ঋতুপর্ণার অভিষেক। এর পর এখানে ঋতুর যত ছবি ততই তার প্রশংসা। ঢাকাই ছবিতে ঋতুর সবশেষ উপস্থিতি ছিল বছর দুয়েক আগে ফেরদৌস প্রযোজিত ‘এককাপ চা’-এ। ঋতু আসলে দুই বাংলাতেই অসম্ভব জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। গত বছর টলিউডের ‘বেলাশেষে’ চলচ্চিত্র দিয়ে ফের বড় ধরনের সাফল্যের দেখা পেলেন তিনি। তার এই সাফল্যে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ঋতুর জন্য ভালোবাসার আকুতি উঠে আসে। রিপোর্টের চুম্বক অংশ

ছিল এমন—

‘গত তিন বছর ধরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনের দিন সকালে মুম্বাই থেকে ঘন ঘন এসএমএস আসে তার কাছে। ‘ঋতু, সি ইউ অ্যাট দ্য ফেস্টিভ্যাল ওপেনিং’। কখনো পাঠান মুম্বাইয়ের নামি অভিনেত্রী। কখনো কোনো হিরো। গত বছর ঋতু অভিনীত ‘বেলাশেষে’ রীতিমতো ভারতের বক্স অফিস কাঁপিয়েছে। একই বছর সাম্প্রতিককালে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোল যে ছবিতে, সেই ‘রাজকাহিনি’ মুক্তি পায়। রাজ্য সরকার থেকেও ইদানীং তিনি স্বীকৃত। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে অনুষ্ঠানে যান।

অভাবিত প্রত্যাবর্তনই বলা যায়, তা কত দিন স্থায়ী হবে কেউ জানে না। বয়স আর ঋতুর বন্ধু নয়। স্রেফ সংকল্প, পরিশ্রম আর অভিনয় ক্ষমতা, এই ত্রিভুজে ভর দিয়ে ফের টালিগঞ্জের পয়লা নম্বর নায়িকার দাবিদার হয়ে গেছেন ঋতুপর্ণা। বছর যত শেষের দিকে, ততই যেন নিজের পেছনের লেন থেকে অকস্মাৎ সামনে চলে এসেছেন ঋতুপর্ণা। আচমকা ঋতুবদলের রেসিপি কী?

‘ঋতুবদল কি না জানি না, তবে কাজের প্রতি আমার প্যাশনটা অনেকের চেয়ে বেশি। সেটাই হয়তো আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কাজ করতে নামলে আমার একটা অদ্ভুত অ্যাড্রিনালিন রাশ হয়, যা আমি বলে বোঝাতে পারব না’ বলছিলেন ঋতু।

ঋতুপর্ণা মানেই বোধ হয় সাংবাদিকের কাছে টালিগঞ্জের কঠিনতম শারীরিক চ্যালেঞ্জ। আজ দিল্লি, কাল বাংলাদেশ, পরশু সিঙ্গাপুর... নাচের প্রোগ্রাম, পুজোর উদ্বোধন... তাল রাখাটাই দুঃসাধ্য ঋতুর সঙ্গে। এতকিছুর পরও ফোকাস রাখেন কী করে ঋতু, সেটা টালিগঞ্জের চিরকালীন জিজ্ঞাস্য। আজকের দিনে তা আরও বেড়েছে।

 যে প্রযোজকরা কোনোদিন ভাবতেও পারেননি যে ঋতু তাদের ছবিতে ‘হ্যাঁ’ বলবেন, এমনকি তাদের সঙ্গেও প্রায় বাধ্য হয়েই ছবি করেছেন ঋতু। ‘কেঁদেছি কত। কতবার মনে হয়েছে সব ছেড়েছুড়ে দিই। কিন্তু তার পর নিজেকে বুঝিয়েছি আমাকে আবার খেলায় ফিরতে হবে’— বলেন নায়িকা। কথায় কথায় নিজেই জানান শাহরুখ খান দিল্লিতে তাকে একবার দারুণ মোটিভেশনাল কথা বলেছিলেন। ‘শাহরুখ দিল্লির আড্ডায় বলেছিল এই ইন্ডাস্ট্রি খুব নির্দয়। যেহেতু নির্দয় তাই তোমাকেও নিজের কাজের ব্যাপারে রুথলেস হতে হবে। আমাকে সাংঘাতিক অনুপ্রাণিত করেছিল কথাগুলো। এতদিন এত ঝড় সামলে এটা বুঝেছি, এক মিনিটের জন্য যদি ফোকাসটা চলে যায় তা হলে কিন্তু আপনাকে হোঁচট খেতেই হবে’— বলেন ঋতুপর্ণা।

‘আমি সব সময় সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। আমি কিন্তু সবচেয়ে বেশি নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। কোথাও নিজের অভিনয়ের একটা ঘরানা তৈরি করতে পেরেছি। ইন্ডাস্ট্রিও আমাকে যেমন চ্যালেঞ্জ করেছে আমিও ইন্ডাস্ট্রির ধ্যান-ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছি। এই দৌড়টায় থেকে যেতে চাই’। এতসবের মধ্যে নিজের লক্ষ্যে স্থির কী করে থাকলেন ঋতুপর্ণা, সেটাই আশ্চর্যের!

‘কাজ করে যেতে হবে বুঝলেন! শাহরুখের ব্যাপারে লোকে বলে, মুম্বাই শহর ঘুমিয়ে পড়ে, শাহরুখ ঘুমোয় না। লোকে আমার ব্যাপারেও সেটা বলে। ঋতুপর্ণা ঘুমোয় না। চলে গেলে তো এটাই থেকে যাবে। তাই নতুন করে ইন্ডাস্ট্রি যে সুযোগটা আমাকে দিয়েছে সেটার সদ্ব্যবহার করতে চাই। ছাড়া নেই’— বলেই উঠে পড়েন ঋতুপর্ণা।

বড়পর্দায় থিতু অভিনেত্রী ঋতুপর্ণাকে নিয়ে সব শেষ একটি কথাই বলতে হয়-‘সব ঋতুর পরিবর্তন হয় অথচ এই ঋতু আশ্বিনেও খোঁজ পায় বসন্তের।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর