শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

একচল্লিশে আমরা...

আলাউদ্দীন মাজিদ

একচল্লিশে আমরা...

মৌসুমী আর ওমর সানীর জুটিবদ্ধ ছবির বয়স এবার ৪১-এর ঘরে পা রেখেছে। সম্প্রতি তারা তাদের জুটিবাঁধা ৪১তম ছবি ‘হারজিৎ’-এর কাজ বেশ ঘটা করেই শুরু করলেন। বড় পর্দায় মৌসুমীর মৌসুমটা শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ২৩ বছরের পথচলায় এখনো বসন্ত মৌসুমেই আছেন তিনি। আর তার ছায়া হয়ে দিব্যি তির তির করে হেঁটে চলেছেন হিম্যান ওমর সানী। সানীরও বড় পর্দায় হাঁটা শুরু মৌসুমীর অভিষেক ক্ষণে। মানে একই বছর। মৌসুমী এলেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নিয়ে সালমান শাহের বিপরীতে আর সানীর আগমন ‘চাঁদের আলো’তে। এতে তার নায়িকা ছিলেন মুক্তি। দুজনই প্রথম ছবি দিয়ে দর্শক হৃদয়ে ঝড় তোলেন। রুপালি জগতে স্থায়ী আসন করে নেন। পরের বছর মানে ১৯৯৪ সালে রুপালি পর্দায় এক হয়ে মিশে গেলেন মৌসুমী-সানী। জুটি হয়ে তারা কাজ করলেন দিলীপ সোম পরিচালিত ‘দোলা’ ছবিতে। দর্শক চোখ ভরে দেখলেন তাদের। না কোনো খুঁত নেই দুজনার জুটিতে। ভালোই জমেছে দুজনার পর্দা রসায়ন। দর্শকরা আরও দেখতে চান দুজনকে একসঙ্গে। নির্মাতারা দর্শকের মনের কথা বুঝতে পেরে সেই পথেই হাঁটলেন। ২৩ বছরে তাদের জুটি করে নির্মাণ করলেন ৪০টি ছবি। দর্শকও একাধারে তাদের একসঙ্গে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। দুজনের পর্দায় ঝড় তোলা জুটিবদ্ধ ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখ করার মতো কয়েকটি ছবি হলো- আত্ম অহংকার’, ‘প্রথম প্রেম’, ‘মুক্তির সংগ্রাম’, ‘হারানো প্রেম’, ‘গরীবের রানী’, ‘প্রিয় তুমি’, ‘সুখের স্বর্গ’, ‘মিথ্যা অহংকার’, ‘ঘাত প্রতিঘাত’, ‘লজ্জা’, ‘কথা দাও’ ‘স্নেহের বাঁধন’ ইত্যাদি। তাদের মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ চলচ্চিত্র হচ্ছে শাহীন সুমনের ‘সাহেব নামে গোলাম’। এটি ২০০৯ সালে মুক্তি পায়। এর সাত বছর পর ২০১৫ সালে তারা আবারও জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন প্রয়াত বেলাল আহমেদের নির্দেশনায় ‘ভালোবাসবোই তো’ চলচ্চিত্রে। এটি এখন মুক্তির পথে রয়েছে। আর এবার তারা আবার একসঙ্গে দাঁড়ালেন বদিউল আলম খোকনের ‘হারজিৎ’ ছবির ক্যামেরার সামনে। এটি হচ্ছে তাদের জুটিবদ্ধ ৪১তম ছবি। মানে এই জুটির ছবির বয়স এখন ৪১-এর ঘরে পা দিয়েছে। জুটি হিসেবে মৌসুমী-ওমর সানী তাহলে যৌবনের ঘর পাড়ি দিয়ে ফেলেছেন। বলতে গেলে পরিপক্বতায় অবগাহন করছেন। দর্শক তাদের আবারও দেখতে পাবেন হারজিৎ-এর যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে। পরিপক্বতার ৪০ পেরুতে পেরে দুজনই এখন সমৃদ্ধির জোয়ারে ভাসছেন। দুজনের কণ্ঠে খুশি আর তৃপ্তির বোল। মৌসুমী বলেন, পর্দায় আমরা বেশ ভালোভাবেই হেঁটেছি। না হলে দর্শকের রায় পাওয়া অত সহজ ছিল না। একসঙ্গে ৪০ ছবি পার করা খুব সোজা নয়। ভাগ্যদেবী বরাবরই আমাদের মাথার ওপর ছায়া হয়েছিলেন। এখনো আছেন। যার প্রমাণ ২৩ বছর পরেও আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারছি। আগামীতেও সফলতা পথ ধরে হেঁটে যেতে পারার বিশ্বাস আমাদের আছে। সবার ভালোবাসায় অনবরত একসঙ্গে হাঁটতে চাই। সানী বলেন, বাস্তব আর পর্দায় জুটি হয়ে সবার মন জয় করার মতো ভাগ্য খুব কম মানুষেরই হয়। পর্দা জীবনে আমাদের জুটির বয়স ২৩ আর সংসার জীবনে ২০। দুই অঙ্গনেই এখনো আমাদের চিরসবুজ পথ চলা। এই চলার কোনো শেষ নেই। সবার ভালোবাসায় জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এগিয়ে যেতে চাই আমরা।

একসঙ্গে অভিনয় করতে করতেই মৌসুমী-সানীর মনের আকাশে রংধনু ভালোবাসার সাতরং ছড়ায়। তারপর পরমানন্দে গাঁটছড়া বাঁধা। সেটা ১৯৯৬ সালের কথা। এই বছরেই বিয়ের সাতপাকে বাঁধা পড়েন তারা। তাদের মনে ভালোবাসার রং ধরে ১৯৯৩ সালেই। মানে ক্যারিয়ারের সূচনালগ্নে। ওই বছরের ২ নভেম্বর। দুজনে জুটি হয়ে কাজ করছেন রায়হান মুজিব পরিচালিত ‘আত্মঅংহকার’ ছবিতে। পরের দিনই মৌসুমীর জন্মদিন। শুভলগ্নে মৌসুমীর গলায় পরিয়ে দিলেন সানী স্বর্ণের কণ্ঠহার। সানীর প্রেমময় উপহারে মৌসুমীও ভালোবাসায় গদ গদ। দুজনার ভালোবাসার পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার অঙ্গীকার এখনো থামেনি। ‘হারজিৎ’-এ এসে তারা আবার অভিনয় করছেন সফল স্বামী-স্ত্রী চরিত্রে। এই চরিত্রটিই ২৩ বছর ধরে তাদের জীবনে ছায়া হয়ে জড়িয়ে আছে। জড়িয়ে থাকবে অনন্তকাল। এই ভালোবাসার নেই কোনো সীমানা...।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর