বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাণিজ্যিক ছবির দুর্দিন কাটছেই না

চলতি বছরের এ পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ৪৫, ব্যবসাসফল ২

আলাউদ্দীন মাজিদ

বাণিজ্যিক ছবির দুর্দিন কাটছেই না

বাণিজ্যিক ছবির দুর্দিন কাটছেই না। চলতি বছরের গত শুক্রবার পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ৪৫টি ছবি। এর মধ্যে ব্যবসাসফল হয়েছে মাত্র দুটি। তাও আবার এগুলো ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। ছবি দুটি হলো ‘শিকারি’ ও ‘বাদশা’। বাকি ৪৩টি ছবি বিনিয়োগকৃত অর্থই ফেরত আনতে পারেনি। মানে লোকসানের মুখে পড়েছে নির্মাতা। চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের দাবি মানসম্মত চলচ্চিত্র নেই, সিনেমা হল দর্শকশূন্য। তাই এ সমস্যা কাটছেই না।  প্রদর্শক সমিতি জানায় গত বছরও এই চিত্র অব্যাহত ছিল। ২০১৫ সালে  ছবি মুক্তি পেয়েছে ৬২টি। প্রদর্শক সমিতির মতে এর মধ্যে ব্যবসা করেছে মাত্র দুটি ছবি। সমিতির কর্তাব্যক্তিরা বলছেন নব্বই দশকের শেষভাগে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা, নকল আর পাইরেসি মহামারী আকারে দেখা দিলে প্রতিথযশা নির্মাতারা নির্মাণ থেকে দূরে সরে যান। এই সুযোগে জ্ঞান-গরিমাহীন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অজ্ঞ কিছু স্বার্থান্বেষী লোক চলচ্চিত্রাঙ্গন দখল করে নেয়। তাদের নিম্ন রুচির নির্মাণে দর্শক সিনেমা হলবিমুখ হয়ে পড়ে। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও তাদের আর ফেরানো যাচ্ছে না। যার প্রতিকূলতা এখনো বয়ে চলছে চলচ্চিত্র জগৎ। এ বিষয়ে নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, ভালো গল্প ও নির্মাণের অভাবে দর্শক দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা হলে যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চলচ্চিত্রকারদের অনৈক্য। ভালো কাজ করতে গেলে ঐক্যের বিকল্প নেই। চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি টিম ওয়ার্ক। বিষয়টি এখনকার নির্মাতা ও শিল্পীরা মানতে চায় না। তাছাড়া নকল ও পাইরেসি তো রয়েছেই। বর্তমানে যারা অভিনয়ে আসছে তারা অল্প পরিশ্রমে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। দক্ষ নির্মাতার অভাব এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এতে এই শিল্প পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়।

চলচ্চিত্রকার সুচন্দা বলেন, মানসম্মত গল্প ও নির্মাতা, প্রেক্ষাগৃহের বাজে পরিবেশ, নকল এবং পাইরেসি আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চলচ্চিত্রকারদের ঐক্যবদ্ধভাবে করতে হবে, না হলে এ শিল্পকে রক্ষা করা যাবে না। আমাদের দেশে মানসম্মত গল্পের অভাব নেই। আছে রুচির খরা। দক্ষ নির্মাতা কোথায়। নতুন অভিনয়শিল্পীরাও প্রপার গাইডের অভাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না। সিনেপ্লেক্স শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। এসব কারণে বাণিজ্যিক ছবির এখন চরম দুর্দিন চলছে।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন বলেন, জীবনঘনিষ্ঠ গল্প নিয়ে নির্মাণ নেই, পাইরেসি, সিনেমা হলের বাজে পরিবেশ, নকল এসব সমস্যার কারণে আমাদের চলচ্চিত্র আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। আমি নিজেও পাইরেসি সন্ত্রাসের শিকার। আমার সর্বশেষ ছবি ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ মুক্তির পরপরই পাইরেসি হয়ে গেলে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ি। তাছাড়া এখন সিনেপ্লেক্স কালচার চলছে। ঢাকায় দুয়েকটি ছাড়া দেশের আর কোথাও সিনেপ্লেক্স নেই। এ অবস্থায় আমাদের বাণিজ্যিক ছবি কিভাবে সফলতা পাবে। চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, প্রযুক্তির কারণে এখন মোবাইল ফোনেও ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ফুটপাথে ১০ টাকা দিয়ে পাইরেটেড সিডি কেনা যায়। পাইরেসি চলচ্চিত্র ব্যবসাকে ধ্বংস করেছে। একই সঙ্গে আছে নকলপ্রবণতা। উন্নত গল্প এবং চিত্রনাট্য কোথায়? সিনেমা হলে পরিবার নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ কি আছে?

এসব প্রশ্নের সমাধান দিতে না পারলে উত্তরণ কীভাবে সম্ভব। দোকান চালাতে গেলে পর্যাপ্ত প্রোডাক্ট দরকার। তেমনি ছবি না থাকলে লোকসান গুনে কীভাবে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা সম্ভব? চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ছবি না পেলে সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক হবে কিভাবে। দিনের পর দিন লোকসান গুনে সিনেমা হল চালাতে হচ্ছে।

স্টাফদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু আয় নেই। এভাবে কতদিন চলবে? এ অবস্থায় সিনেমা হল সংস্কার বা সিনেপ্লেক্স নির্মাণ কিভাবে সম্ভব? একদিকে ছবির সংখ্যা কমছে। যাও পাচ্ছি তাতে মান নেই। মানের অভাবে দর্শক নেই। সবমিলিয়ে ছবির ব্যবসা এখন নিঃশেষ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সর্বশেষ খবর