শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
আলাপন...

শুধু বিষয় বৈচিত্র্য নয়, এবার নির্মাণেও ভিন্নতা থাকবে

— হানিফ সংকেত

শোবিজ প্রতিবেদক

শুধু বিষয় বৈচিত্র্য নয়, এবার নির্মাণেও ভিন্নতা থাকবে

আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় দৃষ্টিনন্দন স্থানগুলোতে গিয়ে ‘ইত্যাদি’র মূল অনুষ্ঠান ধারণ করা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকেই। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ‘ইত্যাদি’ সাজানো হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। অনুষ্ঠানটি প্রচার হবে আজ রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর  বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে। অনুষ্ঠানের নানা বিষয় নিয়ে আজ তার সাক্ষাৎকার।

 

এবার রাঙ্গামাটিতে ‘ইত্যাদি’ ধারণ করার বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?

পর্যটনের অপার সম্ভাবনার জেলা রাঙ্গামাটি। আর এ মাসটি হলো পর্যটন দিবসের মাস। রাঙ্গামাটিতে ইত্যাদি করার মূল কারণ এটি। তাছাড়া ইদানীং যুব সমাজসহ সাধারণ মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা প্রকৃতির লীলাভূমি পাহাড়-নদী-হ্রদ-ঝরনা পরিবেষ্টিত রাঙ্গামাটিতে করেছি।

 

প্রকৃতির এই লীলাভূমিকে দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপনার জন্য এবার নতুনত্ব কি থাকবে?

কিছু তো থাকবেই। আমরা অনুষ্ঠান ধারণ করি দর্শক উপস্থিতিতে সন্ধ্যার পর, আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে। কিন্তু রাতের বেলা রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক রূপ এবং সৌন্দর্য থেকে দর্শকরা যাতে বঞ্চিত না হন সে জন্য আমরা এবার ইত্যাদির ধারণ শুরু করেছি দিনের আলোতে। আর ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে এসেছে। সুতরাং এবারের ইত্যাদিতে দর্শক দিনে-রাতে ধারণের বৈচিত্র্য পাবেন। যা অনুষ্ঠান নির্মাণে ভিন্নতা আনবে এবং বলা যায় আমাদের অন্যান্য বিষয়ের মতো এটিও অনুকরণীয় হবে।

 

রাঙ্গামাটির ইত্যাদিতে কোন কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জনগোষ্ঠীর জীবনাচার, রাঙ্গামাটির পর্যটন সম্পর্কিত আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থানগুলোর পরিচিতি। শুধু প্রকৃতিই নয়, পুরো রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার একটি সম্যক ধারণা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শক খুঁজে পাবেন বলে আমার বিশ্বাস। এছাড়াও পুরো অনুষ্ঠানে ফেসবুকের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিভিন্ন পর্ব রয়েছে।

 

প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ইত্যাদির মতো একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন। প্রতিনিয়ত এই অসম্ভবকে সম্ভব করছেন কি করে?

গণমানুষের সমর্থন, সহযোগিতা আর ভালোবাসা আমাদের সাথী। তাই আমাদের চলার পথকে কখনোই কঠিন মনে করি না। আর কাজ করতে হলে একটু কষ্ট তো করতেই হবে। আমার সঙ্গে ফাগুন অডিও ভিশনের প্রতিটি কর্মীই প্রতিটি ইত্যাদির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে সব কাজকেই সহজ করে দেয়।

 

আজকাল ইত্যাদির অনুকরণে অনেকেই এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে অনুষ্ঠান করছেন। এই অনুকরণ আপনি কিভাবে দেখেন?

অবশ্যই বিষয়টি ইতিবাচক এবং আমাদের জন্য আনন্দের। তবে শুধু স্থান পরিবর্তন করলে হবে না, বিষয়বস্তুরও পরিবর্তন করতে হবে। আমি বেশি আনন্দিত যে, এরা আগের মতো ভারতীয় টিভি অনুষ্ঠানকে নকল না করে দেশীয় অনুষ্ঠানকে করছে।

 

আপনাকে প্যাকেজ অনুষ্ঠান নির্মাণের পথিকৃৎ বলা হয়। আপনি যেমন বেসরকারি অনুষ্ঠান নির্মাণের পাইওনিয়ার, তেমনি ইত্যাদি অনুষ্ঠানটিও এদেশে বেসরকারিভাবে নির্মিত প্রথম অনুষ্ঠান। শুরুর কথা যদি একটু বলতেন?

শুরুর কথা তো সবার জানা, আপনিও বললেন। তবে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনেকেই তারিখ বিভ্রাট করেন। সে জন্য বলছি ইত্যাদি এদেশের প্রথম বেসরকারি অনুষ্ঠান হিসেবে ১৯৯৪ সালের ২৫ নভেম্বর বিটিভিতে প্রচারিত হয়। তখন একমাত্র বিটিভি ছাড়া কোনো টিভি চ্যানেল ছিল না। তাই বেসরকারিভাবে অনুষ্ঠান নির্মাণের পথ-প্রদর্শকও বলা যায় ইত্যাদিকে।

 

দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে আর কি কি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

আসলে আমাদের দেশে এমন সব চিত্তাকর্ষক, মনোমুগ্ধকর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান রয়েছে যা দেখলে কেউই আর অবসর কাটাতে বিদেশে যেতে চাইবে না। আমাদের দেশের তরুণরা এসব স্থান আবিষ্কার করেছে। এখনকার তরুণরা বেশ ভ্রমণপ্রিয় আর তারা বাংলাদেশে ভ্রমণ করতেই বেশি ভালোবাসে। বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠান ধারণ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি বাংলাদেশে এমন এমন দুর্গম অঞ্চলও রয়েছে যেখানে টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণ তো দূরের কথা, কোনো টিভি ক্যামেরাও কখনো পৌঁছেনি। ফলে সে সব স্থান সম্পর্কে এ দেশের মানুষ খুব কমই জানেন। বিদেশের অনেক স্থানের চেয়ে আমাদের দেশের সৌন্দর্য অনেক বেশি। এসব স্থানে গিয়ে মনে হয়েছে সঠিক প্রচার, অবকাঠামোগত সমস্যা ঠিক করা এবং যোগাযোগসহ এসব এলাকাকে যদি পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হয়, তবে এসব স্থান পর্যটন শিল্পের জন্য হতে পারে আকর্ষণীয় স্থান। যা হবে অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক। আমি আমার নিজের দায়বোধের জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব করছি। তবে আমি মনে করি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ট্যুরিজম বোর্ড এবং পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এক্ষেত্রে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

গ্রহণযোগ্যতা আছে তারপরও অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে আপনি এখনো বিটিভিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এর কারণ কি?

বিটিভি থেকে বাইরে এসে ইত্যাদি নির্মাণ করলেও আমার অনুষ্ঠান প্রচারের স্থান কিন্তু সেই বিটিভি। কারণ আমি মনে করি দর্শকের জন্যই অনুষ্ঠান। স্যাটেলাইট চ্যানেল বেশি জনপ্রিয় শহুরে এলাকায়, তবে ইদানীং স্যাটেলাইট চ্যানেলে দর্শক বেশি দেখেন বিদেশি চ্যানেলের অনুষ্ঠান। আর দেশি চ্যানেলেও বেশি জনপ্রিয় বিদেশি অনুষ্ঠান, ডাবিং অনুষ্ঠান ইত্যাদি কিন্তু বিটিভিই একমাত্র চ্যানেল যা দেশীয় অনুষ্ঠানকে প্রাধান্য দেয় এবং গ্রাম-গঞ্জে এখনো বিটিভিই মানুষের একমাত্র বিনোদন মাধ্যম। সবচেয়ে বড় কথা অনুষ্ঠান ভালো হলে তা যে চ্যানেলেই যাক, দর্শক দেখেন। তার প্রমাণ আমি গত তিন দশক ধরে পাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর