ঢাকাই ছবির তারকার সন্তানদের মধ্যে অনেকেই বাবা-মার পথ ধরে চলচ্চিত্রে এসেছেন। প্রতিষ্ঠাও পেয়েছেন কেউ কেউ। তবে এই সংখ্যা উল্লেখ করার মতো নয়। মানে বাবা-মার জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি সবাই। এর অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দর্শকরা বাবা-মার সঙ্গে সন্তানদের তুলনা করেন। মানে বাপ্পারাজ কিংবা কাজী মারুফের মধ্যে রাজ্জাক আর কাজী হায়াতের ছায়া দেখতে চান। এখানেই ফ্যাকাশে হয়ে যায় তারকা পিতা-মাতার সন্তানদের পর্দায় উপস্থিতি। তবুও বাবা-মার পেশার ঐতিহ্য নিজেদের মধ্যে ধারণ করে এগিয়ে যান সন্তানরা। এমনই কয়েকজন তারকার সন্তানদের কথা এখানে তুলে ধরেছেন—আলাউদ্দীন মাজিদ
বাপ্পারাজ
নায়করাজ রাজ্জাকের বড় ছেলে বাপ্পারাজ চলচ্চিত্রে আসেন ১৯৮৬ সালে। বাবার পরিচালিত ‘চাঁপাডাঙার বউ’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। প্রথম ছবিতেই দর্শক নজর কাড়েন বাপ্পা। এরপর নিয়মিত অভিনয় করলেও নব্বই দশকের শেষভাগে অশ্লীল ছবি নির্মাণ শুরু হলে চলচ্চিত্র থেকে বেশ কিছুটা সময় দূরে থাকেন তিনি। এখন আবার অভিনয় করছেন এবং ২০১৫ সালে ‘কার্তুজ’ শিরোনামের একটি ছবি নির্মাণ করেন তিনি। বড়পর্দা ছাড়াও ছোটপর্দার নাটক নির্মাণ ও এতে অভিনয়ও করছেন বাপ্পারাজ। এই অভিনেতা তার ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন।
সম্রাট
নায়করাজের ছোট ছেলে সম্রাটও বাবার হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন। ২০০৭ সালে রাজ্জাক পরিচালিত ‘আমি বাঁচতে চাই’ ছবির মাধ্যমে চিত্রজগতে অভিষেক সম্রাটের। এখনো বড়পর্দায় অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি ছোট পর্দার নাটক নির্মাণ ও অভিনয়ে ব্যস্ত রয়েছেন সম্রাট।
কাজী মারুফ
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা কাজী হায়াতের ছেলে কাজী মারুফ চলচ্চিত্রে আসেন বাবার হাত ধরে। ১৯৯৪ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইতিহাস’ ছবিতে নায়ক হন মারুফ। এই ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র ও বাচসাস পুরস্কার এবং নতুন অভিনয় শিল্পীর পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এখনো অভিনয়ে নিয়মিত আছেন কাজী মারুফ।
আগুন
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমানের সন্তান আগুন বাবার পরিচালিত ‘এখনো অনেক রাত’ ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিনয়ে আসেন। গান নিয়ে ব্যস্ততার কারণে অভিনয়ে নিয়মিত না হলেও চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি রয়েছে। সর্বশেষ প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবিতে অভিনয় করেন আগুন।
মুক্তি
প্রখ্যাত অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে মুক্তি চলচ্চিত্রে আসেন নব্বই দশকে। বড়পর্দায় তার অভিনয় শুরু শেখ নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘চাঁদের আলো’ ছবি দিয়ে। এরপর হুমায়ূন আহমেদের ছবিসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় করেন। পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও রয়েছে তার উপস্থিতি।
মাশরুর পারভেজ জিবরান
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানার একমাত্র পুত্র মাশরুর পারভেজ জিবরান। বাবার উৎসাহ ও নিজের আগ্রহে ২০১৪ সালে জিবরান চলচ্চিত্র নির্মাণ ও অভিনয়ে আসেন। ‘অদৃশ্য শত্রু’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্রের নির্দেশনা দেন ও এতে অভিনয় করেন তিনি। ছবিটি দর্শক মহলে প্রশংসিত হয়। বর্তমানে নতুন ছবি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
তপু রায়হান
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ও সুচন্দার পুত্র তপু রায়হান অভিনয়ে আসেন আশির দশকে। মা চলচ্চিত্রকার সুচন্দা প্রযোজিত ছবি ‘প্রেম প্রীতি’র মাধ্যমে নায়ক হন। এরপর মায়ের নির্দেশিত ‘সবুজ কোট কালো চশমা’সহ বেশ কটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ও প্রশংসা কুড়ান। একসময় ব্যবসায় মনোযোগী হওয়ায় বড় অভিনয়ে আর নিয়মিত হতে পারেননি তপু রায়হান।
সোহেল আরমান
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের পুত্র সোহেল আরমান। প্রথমে নাটকে অভিনয় ও নির্দেশনা দিলেও ২০০৭ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণে হাতেখড়ি হয় তার। মুক্তিযুদ্ধ ও প্রেম নিয়ে নিজের লেখা গল্পে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘এইতো প্রেম’। বর্তমানে ‘ভ্রমর’ নামক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।