বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গান এখন শুধুই ইউটিউবে

গান এখন শুধুই ইউটিউবে

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গান শোনা বা দেখার মাধ্যমে চলে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। অনেকেই একে বলছেন

‘ডিজিটাল গানের যুগ’। একটা সময় ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শোনার বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। মূলত নব্বইয়ের দশক থেকে এই শতকের শুরু পর্যন্ত ক্যাসেটে গানের অ্যালবাম প্রকাশ করা হতো। এরপর সিডি প্লেয়ারে গান শোনা শুরু হলে দ্রুত হারিয়ে যায় ‘ক্যাসেট যুগ’। কিন্তু বর্তমানে এ সবকিছুকে ছাড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছে অনলাইনে গানের প্রকাশনা। তার মধ্যে মিউজিক ভিডিওর জন্য জনপ্রিয় হয়েছে ইউটিউব। সম্প্রতি ইউটিউব ছেয়ে গেছে মানহীন মিউজিক ভিডিওতে। এ বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকারের সঙ্গে। তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন— আলী আফতাব

 

শহীদুল্লাহ ফরায়জী

একটি গানের মূল বিষয় হচ্ছে কথা, সুর ও সংগীত। এই তিনটি বিষয় যদি সঠিক হয় গান জনপ্রিয় হবেই। অনেকে গানের মূল বিষয়টা ঠিক না রেখে অনেক টাকা খরচ করে মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করে। আমি মনে করি এতে কোনো সুফল বয়ে আনে না। গানটা কোনো দিন জোর করে   শুনানো যায় না। আমার যদি কোনো গান ভালো না লাগে, কেউ কি পারবে আমাকে তা জোর করে শোনাতে। গানটা হচ্ছে মনের বিষয়। মন থেকে যদি কোনো গান ভালো না লাগে, আমি কী করে গানটি শুনব। আমাদের আধুনিকতার সঙ্গে চলতে হবে, তার মানে এই নয় যে, যা খুশি তা করতে হবে। ইউটিউব এখন একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। তবে যা খুশি তা প্রকাশ না করাই ভালো।

 

ফাহমিদা নবী

প্রতিটি মানুষের ভিতরে একটি সুপ্ত বাসনা আছে। তার মধ্যে অনেকগুলো ভালো আর কিছু মন্দ। আমরা এখন যা মন চায় তাই করি। এই আধুনিকতার যুগে গান প্রচারের একটি শক্ত মাধ্যম হচ্ছে ইউটিউব। এখানে অনেকে যা মন চাচ্ছে তাই দিয়ে দিচ্ছে। এটা ঠিক নয়। একটা সময় আমরা রেকর্ডে গান শোনতাম। তারপর এলো ক্যাসেট, এমনি করে সিডি, ডিভিডির পালা শেষ হয়ে এখন গান চলে আসছে অনলাইনে। সময়ের সঙ্গে চলতে হলে আমাদের আধুনিক হতে হবে। তার মানে এই নয় যে, গান নিয়ে যা খুশি তাই করব। আমি মনে করি গানের প্রয়োজনে মিউজিক ভিডিও হয়। কিন্তু এখন দেখছি তার উল্টো। একটি ভালো গানের জনপ্রিয়তার জন্য কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।

 

কুমার বিশ্বজিৎ

আমাদের আধুনিকতার সঙ্গে চলতে হবে। আর বর্তমানে মিউজিক ভিডিও প্রচারণায় ইউটিউব একটি শক্ত মাধ্যম।    আমি বলতে চাই আমাদের মাধ্যমটা ঠিক আছে, কিন্তু মূল বিষয়টি ঠিক নেই। আর মূল বিষয়টি হচ্ছে গান। ভালো গান না করে অনেক টাকা খরচ করে মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করে কী হবে। এখন আমাদের বুঝতে হবে কারা অনলাইনে গান শুনে। এই ইউটিউব ব্যবহারকারী কারা। আমরা জানি একটি নির্দিষ্ট বয়সের দর্শক-শ্রোতারা ইউটিউব ব্যবহার করে। এই নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শক-শ্রোতা দিয়ে কেউ কোনো দিন জনপ্রিয় হতে পারে না।

এ ছাড়া অনেকে এখন টাকা খরচ করে বুস্ট করে মিউজিক ভিডিওর ক্লিক বাড়ায়। আমি মনে করি এটি শুধু মনের আত্মতৃপ্তি। আমার নব্বই শতাংশ গানের এখনো কোনো মিউজিক ভিডিও হয়নি। তাই বলে আমার গান কি জনপ্রিয় নয়।

 

ইমন সাহা

একটা সময় কিছু সিনেমা নির্মাতা ও প্রডিউসার শুধু সিনেমা নির্মাণের জন্য সিনেমা করত। তাদের সিনেমা শুধু সংখ্যায় বাড়ত। তাদের সিনেমা যখন মুক্তি পেত তারা দর্শক পেত না। তখন তারা নিজের টাকা দিয়ে টিকিট কিনে হলের বাইরে ঝুলিয়ে দিত হাউস ফুলের ব্যানার। এটি ছিল তাদের মনের সান্ত্বনা। এ বিষয়টি বলার একটি কারণ আছে।

কিছুদিন আগে আমেরিকার একটি রেডিওতে আমার ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য ফোন করে।

আমার জনপ্রিয় গানগুলো সম্পর্কে জানতে চায়। তখন আমি দেখলাম, আমার সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘খায়রুন সুন্দরী’র ইউটিউবে লাইক আছে মাত্র আট লাখ। কিন্তু সম্প্রতি কিছু নতুন মিউজিক ভিডিও লাইক দেখলাম বিশ লাখেরও বেশি। অথচ গানটি আমার আশপাশের কেউই শুনেনি। তাহলে কী করে এত লাইক হলো। এ গল্প বলার কারণ হচ্ছে, বুস্ট করে জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় না। এত টাকা খরচ করে বুস্ট না করে, ওই টাকা দিয়ে ভালো কিছু গান করা দরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর