শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মঞ্চ অভিনয়ে নেই নতুনরা

মঞ্চ অভিনয়ে নেই নতুনরা

একসময় অভিনয়শিল্পী তৈরির জন্য থিয়েটার ছিল একটি বড় ক্ষেত্র। কিন্তু আজকাল মঞ্চ নাটক বা থিয়েটার চর্চার প্রতি তরুণ অভিনয় শিল্পীদের আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। থিয়েটারের প্রতি তরুণ অভিনয়শিল্পীদের এই অনাগ্রহ টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে, থিয়েটারের প্রতি নতুনদের আগ্রহ বিস্তৃত না হওয়ার পেছনে বড় কারণ মনে করা হয় দ্রুত ভিজুয়াল মিডিয়ার বিস্তারকে। নতুনদের থিয়েটার চর্চার প্রতি অনাগ্রহের কারণ এবং অভিনয়ে থিয়েটারের গুরুত্ব নিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন—পান্থ আফজাল

 

 

আতাউর রহমান 

[নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব]

থিয়েটার হচ্ছে একটি আদি শিল্প। অভিনয়ের সূতিকাগার। টেলিভিশন বা চলচ্চিত্র হলো অন্য রকম একটি শিল্প কাজ। যে কেউ সরাসরি এই মাধ্যমে কাজ করতে পারে কিন্তু থিয়েটার তো শিখতে হয়। থিয়েটার থেকে অনেক বড় বড় অভিনেতা-অভিনেত্রী  বেরিয়েছেন। থিয়েটার বা মঞ্চকে দিয়ে একটি জাতিকে চেনা যায়। আমি বলছি না যে থিয়েটার না শিখে কেউ অন্য মাধ্যমে কাজ করতে পারছে না বা পারবে না। পারছে, তবে তারা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। অভিনয় শেখার অন্যতম স্থান হলো থিয়েটার। এখন তো চেহারা সুন্দর হলেই দাঁড়িয়ে যেতে পারছে ক্যামেরার সামনে। এদেশে ভালো অভিনয়ের ভালো প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। স্বল্প সময়ে তারা কিছু টাকা কামাই করতে পারছে ঠিকই কিন্তু বেশিদিন টিকে থাকতে পারছে না।

রামেন্দু মজুমদার

[নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব]

অভিনয়ের প্রতিভা থাকতে হবে। মঞ্চ বা থিয়েটার না করেও কিন্তু অনেকে মিডিয়ায় ভালো করছে। শুধুমাত্র সে যে মাধ্যমে কাজ করবে সেই বিষয়ে তার ভালো ধারণা থাকতে হবে। টিভি নাটক বা চলচ্চিত্রে অনেকেই ভালো অভিনয় করছে। তাদের অনেকেই কিন্তু থিয়েটার থেকে আসেনি। চলচ্চিত্র বা নাটকে থিয়েটার না করা প্রায় ৯৯% ছেলেমেয়েই ভালো কাজ করছে। তাদের তেমন কোনো থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। আর থাকার দরকারও নেই। যেই মাধ্যমে সে কাজ করছে সেই মাধ্যমেই তার যোগ্যতা থাকাটা জরুরি। তাকে তার নিজের বিষয়ে ভালোভাবে জানাটা জরুরি যে, তাকে দিয়ে কী কী কাজ হতে পারে। মঞ্চ বা থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। অভিনয় করতে হলে থিয়েটার বা মঞ্চ জানাটা খুব বেশি জরুরি নয়।

মামুনুর রশীদ 

[নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব]

আমি বলব, আমাদের দেশের অভিনয়শিল্পীদের জন্য খুবই জরুরি থিয়েটার শিখে আসা। থিয়েটার যারা করে, তারা ডিসিপ্লিন জানে। কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ বছর থিয়েটার করে, ডিসিপ্লিন শিখে নানা রকম স্টাগল করে তবেই একজন অভিনয়ে নিজের জায়গা করে নিতে পারে। যারা থিয়েটারের বাইরে থেকে অভিনয়ে আসে তারা তো ডিসিপ্লিন জানে না, জীবন সংগ্রাম কি তাও জানে না। তারা মিডিয়াতে নানারকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ডিসিপ্লিন শেখার জন্য হলেও বাধ্যতামূলকভাবে থিয়েটার শেখাটা জরুরি বলে মনে করি।

-

লাকী ইনাম

[নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব]

আমি মূলত থিয়েটারের মানুষ। এটা খুবই জরুরি নয় যে, থিয়েটার করতেই হবে। তবে অভিনয় করতে হলে তাকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসাটা দরকার। আমাদের এখনকার চলচ্চিত্র ও নাটকের মান কমে গেছে শুধুমাত্র এই না জেনে না শিখে কাজ করার কারণে। মিডিয়ায় ক্যামেরা জানতে হবে, সংলাপ ডেলিভারি জানতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে থাকে কস্টিউম, মেকআপ আর আনুষঙ্গিক বিষয়েও ভালো ধারণা থাকতে হবে। অনেকে তো না জেনেই কাজ করছে। কিন্তু তারা তো পরবর্তীতে এই সেক্টরে ভালো করছে না। কী লেভেলে ডায়ালগ দিতে হবে, বাচনভঙ্গি কেমন হতে হবে, নাটকের ডিজাইনের সঙ্গে মানিয়ে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে—এসব জানাটা দরকার। সব কিছু না জেনে অভিনয়ে আসাটা খুব খারাপ। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। এখন তো নাটক ও চলচ্চিত্রে শুদ্ধ উচ্চারণের ব্যবহার দেখি না। সংলাপে দেখা যাচ্ছে বিভ্রাট, অভিনয় হচ্ছে গত্বাঁধা। তাই থিয়েটার করে তারপর অভিনয়ে যাওয়াটা খুবই প্রয়োজন।

 

চঞ্চল চৌধুরী

[নাট্যকর্মী ও অভিনেতা]

আমি যেহেতু থিয়েটারকর্মী সেহেতু থিয়েটার থেকে শিখেই অভিনয়ে এসেছি। থিয়েটার করলে অভিনয় শেখা যায়। থিয়েটার হলো অভিনয়ের প্রিপারেশন আর পারফর্মের জায়গা। এখানে সব বিষয়ে প্রাকটিস করে তবেই ঠিক জায়গায় নিজেকে প্রদর্শন করতে হয়। আমরা ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে রিহার্সেল করে তবেই মঞ্চস্থ করি একটি নাটক। এখানে অনেক কিছুই শেখানো হয়। অন্যদিকে টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রে সেই সুযোগটা নেই। অভিনয় জানার জন্য, শেখার জন্য থিয়েটার জানাটা খুবই প্রয়োজন। যারা না জেনে অভিনয়ে আসছে, তারা তো বেশিদিন টিকে থাকতে পারছে না। তাদের স্থানও এই মিডিয়ায় কোনো সেক্টরেই স্থায়ী হচ্ছে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর