সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভালো নেই প্রবীর মিত্র

আলাউদ্দীন মাজিদ

ভালো নেই প্রবীর মিত্র

খুবই অস্বস্তিকর অবস্থায় আছি। হাতে কাজ নেই। কেউ আর আমাকে ডাকে না। আশেপাশে কেউ নেই। মনে হয় ‘আমি বন্ধুবিহীন বড় একা’ একজন মানুষ। একসময়ের তুখোড় অভিনেতা প্রবীর মিত্র এভাবেই তার কষ্টের কথা জানালেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে। তিনি বলেন, শারীরিকভাবে ভালো থাকলেও মানসিকভাবে বড় কষ্টে আছি। হাতে চলচ্চিত্রের কোনো কাজ নেই। বড় একা হয়ে গেছি।

১৯৪০ সালে পুরনো ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। তার অভিনীত প্রথম নাটক ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’। এতে মুখ্য মানে প্রহরী চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান তিনি। এরপর ‘লালকুঠি’ নাট্যদলে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে তার প্রথম অভিনয়। প্রায় তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। মহিউদ্দীনের ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮২ সালে সেরা ‘পার্শ্ব অভিনেতা’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। তার সর্বশেষ অভিনীত ছবি হলো ‘সুইটহার্ট’। চলতি বছর ছবিটি মুক্তি পায়। প্রবীর মিত্র বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে গেছে। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। সিনিয়রদের এখন আর কেউ কাজে নিতে চায় না। অথচ জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা এ অঙ্গনেই কেটেছে। একসময় কাজের চাপে স্ত্রী, সংসার, সন্তানদের সময় দিতে পারতাম না। তা নিয়ে একদিন স্ত্রী আক্ষেপ করে বলেছিলেন ‘তুমি রিকশা চালাতে পারোনা। রিকশাওয়ালাদেরও কাজের সময় নির্দিষ্ট থাকে। তারা সংসারকে সময় দিতে পারে। আর চলচ্চিত্রের লোকজনের কাজের কোনো সময় বাধা নেই।’

আজ আমার স্ত্রী বেঁচে নেই। তার কষ্টটা এখন তিলে তিলে অনুভব করছি। আজ আমি বড় একা। কাজ নেই বলে কেউ পাশে নেই। খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করে না কেউ। এখন ভাবছি কার জন্য এত কাজ করেছি।

একজন অভিনেতা যখন দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। যখন তার অনেক কিছু দেওয়ার সময় তখন আর তাকে ডাকা হয় না বিভিন্ন অজুহাতে। এটা আমাদের সিনিয়র শিল্পীদের ক্ষেত্রে দেখেছি। এজন্য খুব কষ্ট পাই। মনে হয় অভিনয়ের জায়গা থেকে আমাকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রুপিংয়ের বিষয়টা তো ভীষণভাবে এ ক্ষেত্রে কাজ করে। একজন পরিচালকও তাদের বলয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পক্ষপাতিত্ব থাকতেই পারে। তাই বলে অভিনয় নিয়ে হিংসা করা উচিত নয়। অভিনয় তো ভালোবাসার জায়গা।

প্রবীর মিত্র বলেন, অনেকেই বলে থাকেন ৬০-৯০ এর দশকে বাংলা ছবির স্বর্ণযুগ ছিল। এখন আর আগের মতো মেধাসম্পন্ন লেখক, পরিচালক, অভিনেতারা চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেই। তখন চলচ্চিত্রের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা সবাই সৃষ্টির আনন্দে মেতে থাকতেন। পয়সাটা তখন মুখ্য ছিল না। মুখ্য ছিল ‘কিছু একটা করার চেষ্টা’। তাই অনেক ভালো ভালো চলচ্চিত্র হয়েছিল সেসময়। পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে প্রবীর মিত্র বলেন, ফেলে আসা দিনগুলোই বেশ ভালো ছিল। এখন জীবনটা একঘেয়ে ঠেকে নিজের কাছে। অখণ্ড অবসর। বই,পত্রিকা পড়ে আর টিভি দেখতে কতক্ষণ ভালো লাগে। পুরনো ঢাকার স্মৃতিচারণ করতে গেলে খুব কষ্ট হয়। যাদের সঙ্গে স্কুল-কলেজ জীবনের সময়টা কাটাতাম তাদের বেশিরভাগ হয় কলকাতা নয়তো বিভিন্ন পেশার জন্য পুরনো ঢাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে। তাদের সঙ্গে খুব একটা দেখা বা যোগাযোগও হয় না। রাখতেও পারিনি। বিউটি বোডিং, ক্যাফে কর্নার, চৌরঙ্গীতে তখন জম্পেশ আড্ডা দিতাম। দীর্ঘদিন হয়ে গেছে সেখানে যাওয়া হয় না। আর আগের মতো আড্ডাও হয় না। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে আজ আমি একেবারেই বন্ধুহীন ও একা। এ স্মৃতিগুলো আজ আমাকে বেশি পীড়া দেয়। আর আমার সহধর্মিণীতো আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমাকে একা রেখে চলে গেছে। এরপর থেকে আমার জীবনটা কেমন যেন হয়ে গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর