বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ডাবিং শিল্পীদের সাতকাহন

ডাবিং শিল্পীদের সাতকাহন

পর্দায় অনেক অভিনয় শিল্পীই নানা কারণে নিজে কণ্ঠ দিতে পারেন না। তখন ডাক পড়ে পেশাদার ডাবিং শিল্পীর। এ অবস্থা বিশ্বজুড়ে। অন্য দেশে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে নেই। ঠোঁট দেখে কাজ শিখতে হয় এখানে। চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন থেকেই ডাবিং শিল্পীরা জড়িয়ে আছেন এই পেশায়। ঢালিউডের ডাবিং শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন— শেখ ডেভিড, সেতু, তনিমা আহমেদ, ইভান সাইর, ফিরোজ আলম, ইরফান, আনোয়ার শাহী, জামান, সারথী, কৃষ্ণ, শিপু [শিশুশিল্পী], শতাব্দী ওয়াদুদ, শর্মীমালা প্রমুখ।  এসব শিল্পীর মধ্যে কয়েকজনের কথা এখানে তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

শেখ ডেভিড

শেখ ডেভিডের পুরো নাম মোঃ সাজাবত আলী শেখ ডেভিড। গ্রাজুয়েশন লাভের পর ১৯৮০ সালে মহিউদ্দীন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে যুক্ত হন। এরপর এজে মিন্টুসহ অনেকের সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৮৬ সালে মইনুল হোসেনের ‘কবুল’ ছবিতে প্রধান সহকারী পরিচালকের কাজ করছিলেন। এই ছবিতে খলনায়ক জাম্বুর জন্য যে শিল্পী ডাবিং করতেন তিন দিন ধরে তিনি আসছেন না। সাউন্ড রেকডিস্ট ইসমাইলের অনুরোধে জাম্বুর জন্য কণ্ঠ দেন ডেভিড। প্রথম কাজেই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পান। তারপর ডাবিং শিল্পী হিসেবে ৩৬ বছরের পথচলা। খলনায়ক রাজিবসহ অনেক প্রখ্যাত শিল্পীর জন্য কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। বলিউড অভিনেতা শক্তি কাপুর ঢাকার দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার কণ্ঠ দেন ডেভিড। ডাবিংয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনা ও কাহিনী এবং চিত্রনাট্যকার হিসেবেও কুড়িয়েছেন খ্যাতি। পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজ শিখেছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদের কাছ থেকে।  ছোট ও বড় পর্দার ডাবিং ও লেখালেখি নিয়ে বর্তমানে ব্যস্ত শেখ ডেভিড।

 

তনিমা আহমেদ

অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদের কন্যা তনিমা আহমেদ। অভিনয়ে তার যাত্রা শুরু দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আসাদুজ্জামান নূরের বিপরীতে মুহূর্ত নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। করছেন মডেলিংও। সব কিছু ছাপিয়ে ডাবিংয়েই তার বেশ পরিচিতি। তিনি চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের প্রায় চলচ্চিত্রেরই ডাবিং করেন। দর্শক পর্দায় অপু বিশ্বাসের যে কণ্ঠ শোনেন তার অনেকগুলোই তনিমা আহমেদের কণ্ঠ। আরও অনেক শিল্পীরই ডাবিং করেন তিনি। তনিমা আহমেদ বলেন, ‘অভিনয় ও মডেলিংয়ের বাইরে আমি ডাবিং নিয়ে বেশি ব্যস্ত। এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি করতে ভালোই লাগছে। অন্যের মুখে নিজের কণ্ঠ, বিষয়টি দারুণ উপভোগ করি।’

 

আনোয়ার শাহী

পুরো নাম আনোয়ার হোসেন। ডাবিং শিল্পী হিসেবেই পরিচিতি তার। প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা আজমল হুদা মিঠুর ‘জয় বিজয়’ ছবিতে ডাবিং করার মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্রে ডাইবিং শুরু তার।

ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম অভিনীত প্রতিটি ছবিতে তার জন্য কণ্ঠ দিয়েছেন আনোয়ার। খল অভিনেতা রাজীব, নাসির খান, কৌতুক অভিনেতা দিলদারের মৃত্যুর পর তাদেরও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ‘খায়রুন সুন্দরী’ ছবিতে দিলদারের কণ্ঠ আনোয়ারেরই দেওয়া। ছোট পর্দার বিভিন্ন বিদেশি ছবির ডাবিং তারই করা। পিস ও ইসলামিক টিভিতে ড. জাকির নায়েকের বাংলা ডাবিং আনোয়ারের করা। ডাবিংয়ের পাশাপাশি বড় ও ছোট পর্দার অভিনয় এবং মডেল হিসেবে কাজ করছেন আনোয়ার শাহী।

 

ইভান সাইর

রেডিও জকি হিসেবে কাজ করছেন ইভান সাইর। ডাবিং করছেন শখে। নায়ক বাপ্পীর যে কণ্ঠ দর্শক সিনেমায় শুনতে পান তার বেশির ভাগই ইভানের। ওয়াজেদ আলী সুমনের সুইট হার্ট, হিমেল আশরাফের সুলতানা বিবিয়ানা, অনন্য মামুনের আমি তোমার হতে চাই, শাহ আলম মণ্ডলের সাদাকালো প্রেম ও ইফতেখার চৌধুরীর ওয়ান ওয়ে হলো তার ডাবিংকৃত উল্লেখযোগ্য ছবি। ইভার সাইর বলেন, ‘জেনে বুঝে ডাবিং শুরু করিনি। হুট করেই আসা। একদিন সুমন ভাইয়ের (ওয়াজেদ আলী সুমন) সহকারী আমাকে ডেকে পাঠালেন জাজের অফিসে। সেখানে আর দুই-তিনজন ছিলেন। তাদেরও ভয়েস নেওয়া হয়েছিল। আমারটা প্রথম দুই টেকেই ওকে হয়েছিল। তারপর আমিই সিলেক্ট হই। এভাবেই আসা। সুইট হার্ট সিনেমার পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।’ সিনেমার পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও ভয়েস দিচ্ছেন তিনি। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এ কাজ করছেন। বর্তমানে রেডিও ধ্বনির সিনিয়র রেডিও জকি ও ব্র্যান্ড প্রমোটর হিসেবে কাজ করছেন তিনি।

 

শতাব্দী ওয়াদুদ

২০০১ সালে বাংলায় ডাবিং হওয়া নেপালি সিনেমায় ভয়েস দেওয়ার মাধ্যমে ডাবিং ক্যারিয়ার শুরু করেন নাট্যাভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ। এরপর ইরানি সিনেমারও ডাবিং করেছেন তিনি। কখনো সুস্থ, কখনো অসুস্থ আবার কখনো যোদ্ধার কণ্ঠ— সব ধরনের চলচ্চিত্রের কণ্ঠেই যেন শতাব্দী সাবলীল। আর ঢাকাই চলচ্চিত্র রেদওয়ান রনির চোরাবালি ও আলভী আহমেদের ইউটার্ন-এ তার কণ্ঠ শোনা গেছে। এ ছাড়া হুইলের বিজ্ঞাপনে সালমান খানের ঠোঁটেও শোনা যায় তারই কণ্ঠ। শতাব্দী ওয়াদুদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ভয়েস মাধ্যমে কাজ করছি। এই মাধ্যমে কাজ করা আমার জন্য ইন্টারেস্টিং। এটা আমার কাছে মনে হয় অন্যরকম একটা চ্যালেঞ্জ। আপনাকে মানুষ দেখছেন না। অন্য একটা মানুষ আপনার কণ্ঠে ঠোঁট মেলাচ্ছেন। সঞ্চালিত করছেন।’

 

শর্মীমালা

২০১১ থেকে নিয়মিত ডাবিং করছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী শর্মীমালা। বিজ্ঞাপনে ভয়েস দেওয়ার পাশাপাশি এ পর্যন্ত তিনি ৬টি চলচ্চিত্রের ডাবিং করেছেন, যার বেশির ভাগই অপু বিশ্বাসের। শর্মীমালা বলেন, ‘পালাকার দলের প্রধান আমিনুর রহমান মুকুল ভাই আমাকে সামাজিক সচেতনতামূলক একটি বিজ্ঞাপনের জন্য প্রথম ডেকেছিলেন। তিনিই আমাকে সিনেমায় কণ্ঠ দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। এভাবেই প্রথম ভয়েস দেওয়া শুরু। নাট্যাভিনয়ের পাশাপাশি বর্তমানে বিজ্ঞাপনে ভয়েস দেই। আর শখেই সিনেমায় ডাবিং করি। এই মাধ্যমটিতে এখন খুব এনজয় করি।

 

সেতু

অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনার মেয়ে সেতু এক সময় চলচ্চিত্রের ডাবিং নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলেন। অপু বিশ্বাসের প্রথমদিকের প্রায় সব ছবিতেই অপুর জন্য কণ্ঠ দেন তিনি। যে কোনো বিষয়ে অপরিহার্য হিসেবে ডাক পড়ত তার। একসময় বিদেশে গিয়ে প্রবাস জীবনযাপনের কারণে ডাবিং ছাড়তে হয় তাকে।

 

ফিরোজ আলম

শাকিব খানের প্রথম অভিনীত ছবি ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’ থেকে শুরু করে ‘আজকের দাপট’ পর্যন্ত ১৭টি ছবিতে শাকিবের জন্য কণ্ঠ দিয়েছেন ফিরোজ আলম। পাশাপাশি অন্য কণ্ঠশিল্পীর জন্যও নিয়মিত ডাক পড়ে ফিরোজ আলমের।  এখন ছবি নির্মাণ কমে যাওয়াতে তার হাতেও তেমন কাজ নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর