শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নাটকে সেকাল-একালের জুটি

নাটকে সেকাল-একালের জুটি

সত্তরের দশক থেকেই টিভি নাটকের জুটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। সব বয়সী মানুষের অন্তর দখল করে নেয় বিভিন্ন জুটি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের দর্শকদের কাছেও খুবই জনপ্রিয় হয় আমাদের নাটকের জুটিগুলো। আফজাল-সুবর্ণা, আবদুল্লাহ আল মামুন-ফেরদৌসী মজুমদার, পীযূষ-আফরোজা, আলী যাকের-সারা যাকেরের মতো জুটির বহু কাজ আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। নব্বই দশকেও কিছু জুটি টিভি নাটকে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করত। সেই সময় জাহিদ হাসান-শমী কায়সার, টনি ডায়েস-আফসানা মিমি, তৌকীর আহমেদ-বিপাশা হায়াত জুটি ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। এরপর মাহফুজ-তারিন, নোবেল-মৌ জুটি নিয়ে দর্শকরা বেশ মেতেছিলেন। এখন আর জুটির রমরমা অবস্থা নেই। এর অন্যতম কারণ স্যাটেলাইট চ্যানেলের আধিক্য।  নাটক নির্মাণ হতে থাকে সংখ্যাতত্ত্বকে সামনে রেখে। তাই শিল্পী সংকট জুটি প্রথাকে ভেঙেচুরে একাকার করে দেয়। ইদানীং জুটি প্রথা নিয়ে নির্মাতারা না ভেবে তাদের গল্প অনুযায়ী তারকা নেওয়ার প্রতিই বেশি ঝুঁকে থাকেন। এতে সব সময় সফল না হলেও কোনো একটা জুটি নিয়ে ঠিকই কাজ করছেন নির্মাতারা। জুটি অনেক তৈরি হলেও কালজয়ী জুটি পাওয়া যাচ্ছে না। এ দেশের নাটকে সেকালের জনপ্রিয় জুটি আর একালের জুটি নিয়ে এবারের আয়োজন সাজিয়েছেন— পান্থ আফজাল

 

আলী যাকের-সারা যাকের

নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বখ্যাত বিদেশি নাটকের বাংলা রূপান্তর আর নাটক নির্দেশনা এসব কাজে আলী যাকের ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ওই দলে যোগ দেন সারা যাকের। যাকে শুরুতে চোখেই পড়েনি আলী যাকেরের। একটি নাটকের প্রদর্শনীর আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে সারা যাকেরকে দেওয়া হয় চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আলী যাকেরের ওপর দায়িত্ব পড়ে চরিত্রটির জন্য তাকে তৈরি করার। খুব দ্রুত চরিত্রটির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যান আলী যাকের। বন্ধুুত্ব হতে সময় লাগেনি। ১৯৭৭ সালের এ ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের বিয়ে হয়।

 

আফজাল-সুবর্ণা

সত্তরের দশকের ছোট পর্দার জনপ্রিয় জুটি ছিলেন আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা। ১৯৭৬ সালে ঢাকা থিয়েটারে একসঙ্গে যোগ দেন তারা দুজন। তাদের সঙ্গে আরও ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি ও রাইসুল ইসলাম আসাদ। থিয়েটার করতে এসে পরিচয় হয় আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফার। এরপর ১৯৭৬ সালেই দুজন একসঙ্গে একটি টিভি নাটকে অভিনয় করেন। নাটকটির নাম ছিল ‘চেহারা’। আনিস চৌধুরীর রচনায় নাটকটি প্রযোজনা করেন আতিকুল হক চৌধুরী। বিটিভিতে নাটকটি প্রচারের পর ব্যাপক সাড়া পান আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা। এ জুটিকে দর্শক সাদরে গ্রহণ করেন।

 

জাহিদ-শমী

জাহিদ হাসান ও শমী কায়সার জুটি বেঁধে করেছেন কুসুম কুসুম ভালোবাসা, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, গাঙচিল ভালোবাসা, তারায় তারায় খচিত, ছোট ছোট ঢেউ ইত্যাদি কালজয়ী নাটক। জাহিদ হাসান এখনো অভিনয়ে নিয়মিত হলেও শমী কায়সার অনেকটাই অনিয়মিত। কালেভদ্রে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। তাই তাদের আর পাওয়া যায় না ছোট পর্দায়।

 

বিপাশা-তৌকীর

নব্বই দশকের জনপ্রিয় টেলিভিশন জুটি তৌকীর-বিপাশা। জনপ্রিয় নাট্যদম্পতি জুটি তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত নাট্য জগতে দুজনই অসাধারণ। ইমদাদুল হক মিলনের ‘রূপনগরের’ সেই শামীম নামের তৌকীর আর বিপাশার দুর্দান্ত অভিনয় আজও দর্শকের মনে দোলা দিয়ে যায়। এ ছাড়াও একসঙ্গে জুটি বেঁধে করেছেন প্রিয়জন, স্বয়ম্বরা, বিশ্বাসঘাতক, সেই ভুবনে, আমি তোমায় ভালোবাসি ইত্যাদি নাটক। তৌকীর আহমেদ এখন নাটক নির্মাণ এবং অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত। বিপাশা খুব বেশি অভিনয় না করলেও নাটকের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

 

টনি ডায়েস-আফসানা মিমি

টিভি নাটকের এক সময়ের প্রিয় মুখ টনি ডায়েস এবং আফসানা মিমি। তাদের অনবদ্য অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন। বেশ কয়েক বছর হলো অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন তারা। তবে তাদের অভিনয়কে এখনো সবাই মনে রেখেছে। তাদের অভিনীত নাটকের সংখ্যাও প্রচুর। একসঙ্গে জুটি বেঁধে করেছেন সেই তুমি, অন্তরায়, বেদনার রং নীল, ঝিনুক নীরবে সহো ইত্যাদি নাটক।

 

নোবেল-মৌ

জনপ্রিয় মডেল নোবেল ও অভিনেত্রী মৌ জুটি এক সময় পর্দা কাঁপিয়ে বেরিয়েছে। একসঙ্গে তারা অভিনয় করেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক ও পণ্যের বিজ্ঞাপনে। বিজ্ঞাপনে জুটি হয়েই তারা পেয়েছিলেন আকাশচুম্বী সফলতা ও জনপ্রিয়তা। ‘কুসুম কাঁটা’, ‘নতুন করে পাব বলে’, ‘হাইওয়ে’, ‘আকাশ রাঙা চাদর’, ‘লাভ ফাইনালি’ নাটকে জুটি বেঁধে অভিনয় করে  পান জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয় জুটির নাটক দর্শকরাও দারুণ উপভোগ করেন।

 

তাহসান-মিথিলা

জুঁই নারিকেল তেলের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই জুটি সবার কাছে প্রশংসিত হয়। তারা একসঙ্গে জুটি বেঁধে করেছেন ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে, প্রেম কিংবা সে, সুখের ছাড়পত্র ইত্যাদি নাটকে। মিথিলা তার সংগীতজীবনে একটি মাত্র মিউজিক ‘তাহসান ফিচারিং মিথিলা’ অ্যালবাম বের করেছেন।

 

অপূর্ব-মম

এই জুটির ‘ভালোবাসার চতুষ্কোণ’ নাটকটি দর্শক মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এই ধারাবাহিকটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এ জুটির ফিলিংস, প্রেম আমার, যদি মনে পড়ে যায়, এখনো আমি, ক্যারিয়ার ইত্যাদি দর্শকদের কাছে প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়।

 

নিশো-মেহজাবিন

এই জুটি গত দুই বছরে একসঙ্গে বেশকিছু ভালো নাটকে অভিনয় করেছে। ‘ও রাধা ও কৃষ্ণ’, ‘তুমি না থাকলে’ ইত্যাদি নাটক দর্শক খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন। অনেক পরিচালক রোমান্টিক নাটকের জন্য জুটি হিসেবে তাদের গ্রহণ করছেন বেশ।

 

শখ-নিলয়

প্রথম থেকেই বেশ আলোচনায় ছিল এই জুটি। বিশেষ করে মডেলিং, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে জুটি বেঁধে অভিনয় এবং সম্পর্ক নিয়ে দর্শক মহলেও বেশ সুপরিচিত ছিলেন তারা। ২০১১ সালে একটি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার সময় পরস্পরের কাছাকাছি এসেছিলেন শখ ও নিলয়। ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ চলচ্চিত্রে একসঙ্গে কাজ করেন তারা। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে আলোচিত এই জুটি আবারও অভিনয় করতে শুরু করে।

 

তৌসিফ-ফারিয়া

মিডিয়ায় তৌসিফ এবং শবনম ফারিয়ার শুরু মডেলিং আর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। তবে নাটকে তাদের বিচরণ নতুন অধ্যায়ের শুরু। এই জুটির শুরুটা একটি টেলিফিল্মের মাধ্যমে। টেলিফিল্ম ‘অ্যাট এইটিন : অলটাইম দৌড়ের ওপর’ দিয়েই তারা দর্শক টানতে সক্ষম হন। প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করেই বাজিমাত। একে একে এই দুজনে করেন বেশ কিছু নাটক ও টেলিফিল্ম। ‘অ্যাট এইটিন : অলটাইম দৌড়ের ওপর’ এর সাফল্যের পর দুটি নাটকে একসঙ্গে কাজ করেছেন। নতুনদের মধ্যে তাদের জুটিটা বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন দর্শক।

 

জোভান-সাবিলা

এই সময়ের অন্যতম ব্যস্ত জুটি জোভান-সাবিলা। তাদের ক্যারিয়ার অল্প সময়ের। তবে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন অনেক। এ জুটির অভিনয় এই সময়ের দর্শকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে উঠতি তরুণদের কাছে এই জুটি ভালোই সাড়া ফেলেছে। জোভান-সাবিলার ‘বাখরখানি’ নাটক যেমন দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে তেমনি পরবর্তীতে ক্লোজআপের নাটক ‘শত ডানার প্রজাপতি’র মাধ্যমে সবার কাছে একটি পাকাপোক্ত আসনে দাঁড়িয়ে গেছে এই জুটি। কিছু নাটকের মাধ্যমে সব শ্রেণির দর্শকের কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছে এই জনপ্রিয় জুটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর