শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গান না লিখলে বিবেকের কাছে দোষী হয়ে যাব

আলী আফতাব

গান না লিখলে বিবেকের কাছে দোষী হয়ে যাব

জীবনমুখী বাংলা গান লিখে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী। চলচ্চিত্র কিংবা অডিও অ্যালবামের গানে তার জাদুকরী স্পর্শ তাকে সংগীতাঙ্গনে খ্যাতি এনে দিয়েছে। গান ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আজ তার সাক্ষাৎকার—

 

বিদ্যমান বাস্তবতায় গানের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

বব ডিলানের জীবনমুখী গানের কাব্য মূর্ছনার জন্য ‘নোবেল’ প্রদান বিশ্বসাহিত্যে গানের মর্যাদাকে নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা দিয়েছে এবং গানকে বিশ্ব শান্তির প্রতীকে পরিণত করেছে। সুতরাং সংগীত মানবতার অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য উপাদান হয়ে উঠেছে, মানবিক সংকট পরিত্রাণের বার্তা হয়ে উঠেছে। জীবনবোধ থেকে উৎসারিত গান, যা হৃদয় এবং আত্মাকে ঔজ্জ্বল্য দান করবে, সেই গানই উচ্চ মর্যাদায় স্থায়ী আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গানের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করতে হবে। আমাদের সমাজে সত্য ও সুন্দর ধারা শাসিত জীবন ক্রমাগত অপসারিত হয়ে যাচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধ-নৈতিকতা-সত্যকে অনিবার্যরূপে গ্রহণ করা এসব অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে। ন্যায়-অন্যায়, সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য মুছে যাচ্ছে। যার ফলে সমাজ নির্মম-নৃশংস হয়ে উঠছে।

 

এসব থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

জীবনের প্রতি গভীর অনুরাগ, মানুষের কল্যাণ-চিন্তা ও মানুষের দুঃখ-বেদনা লাঘবের তাগিদে কোনো সাহিত্য রচিত হচ্ছে না। সমাজের এই নির্মম বাস্তবতায় জীবনমুখী গান, নৈতিকতামুখী গান, মানবতামুখী গান খুবই প্রয়োজন। একটি সমাজ যেখানে ক্রমশ অমানবিক সমাজে রূপান্তর হয়ে যাচ্ছে, সেখানে উচ্চতমবোধ-মহত্তম বোধের গান মানুষকে মানবিক করতে সাহায্য করবে-মানুষ হয়ে ওঠার জন্য প্রেরণা জোগাবে-চিরন্তন মানবিক সত্যকে দৃঢ়তার সঙ্গে আঁকড়ে ধরার শক্তি দেবে। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে গান এখন সমাজের প্রয়োজনে আরও অনিবার্য-আরও বাস্তব হয়ে উঠছে।

 

আপনার গান লেখার উদ্দেশ্য কী ছিল?

জীবন নামক খনি থেকে জীবনের মহামূল্যবান হীরক উত্তোলনের অনুসন্ধানী হয়ে গান লেখার তাগিদ দীর্ঘ দিনের। মানুষের যে অপূর্ব সমৃদ্ধ জীবন, মানুষের মাঝে যে ব্যাপক ও গভীর জীবনবোধ এবং মানুষের মাঝে যে অন্তহীন সৌন্দর্যের বসবাস তা খনন করে গানে প্রকাশ করার ব্রত নিয়েই আছি। সব সময় প্রকৃতির মতো অকৃত্রিম হতে চেয়েছি। মাথার উপরে আকাশের খিলান, চোখের সামনে জ্বলজ্বলে চিরদিনের সূর্যতারা-জীবনকে ঘিরে রহস্যময় শক্তির লীলা আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। আর আমি টলস্টয়, বরিসপাস্তেরনাক, গ্যেটে, কহলিল জিবরান ও রবীন্দ্রনাথসহ মহাকবিদের বিশ্বসাহিত্য থেকে রসদ সংগ্রহ করে নৈঃশব্দের ভিতরে ডুবে থাকতে চেয়েছি। যারা নশ্বর জীবনে অবিনশ্বর সেসব মানুষদের, যাদের নৈতিক অভিজ্ঞতা মানুষের অন্তরলোকে মহত্তর জীবন বিকশিত করে, আমি তাদের নৈকট্য অনুভব করি। আর তাদের জীবন দর্শনের কাছে ক্রমাগত আশ্রয় নিচ্ছি।

 

বর্তমানে গান নিয়ে আপনার ব্যস্ততা কেমন?

 প্রখ্যাত সুরকার আলাউদ্দিন আলী, বারী সিদ্দিকী, মান্নান মোহাম্মদ, কুমার বিশ্বজিৎ, নকিব খান, শওকত আলী ইমন, সুমন কল্যাণ ও অমিত করের সুরে আমার গান নির্মান হচ্ছে। মঞ্জুরুল ইসলামের কণ্ঠে বাংলা গজলের অ্যালবাম-এর কাজও শেষ হয়েছে। বেশ কয়েকটি সিনেমার গান লিখছি। এ ছাড়াও আমরা সূর্যমুখী সংগঠনটির থিম সং লিখেছি, যা সুর করেছেন শেখ মিলন।

 

অনেকেই ফিউশনের নামে ফোক বা চিরকালীন গানগুলোকে পরির্বতন করে গাইছে, এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?

বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, সংগীতের মূর্ছনা উপলব্ধি করা এবং সংগীতের সৌন্দর্য পান করার জন্য একটা সুবেদী মন থাকা দরকার। ফিউশনে যদি সেই সুবেদী মনের আগ্রহ বিনষ্ট না করে শ্রোতার অন্তরমুখী সত্তাকে স্পর্শ করে তাহলে তা হবে গ্রহণযোগ্য। যেটা শ্রোতাকে বিমুখ করবে সেটা টিকে থাকবে না।

 

গানের মিউজিক ভিডিও কতটা জরুরি?

মিউজিক ভিডিওতে যে শিল্পীর গান সেই শিল্পী থাকতে পারলেই খুবই ভালো হতো। যদি নান্দনিক উপস্থাপনায় গানকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে তাতে ভিন্ন মাত্রা সংযোজিত হবে নিঃসন্দেহে।

 

সব শেষে আপনার একটা গানের বাণী উল্লেখ করবেন কী?

সময় এখন কফিন বানাবার / মানুষ কবে হবোরে আর/ ভিতর আমার দারুণ অন্ধকার/ কী ছিল দরকার, মানুষ নামে জন্ম নেবার।

সর্বশেষ খবর