রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিজয়ের আলাপন

সারা বছর ধরে দেশপ্রেম দেখাতে হবে

পান্থ আফজাল

সারা বছর ধরে দেশপ্রেম দেখাতে হবে

রণাঙ্গনের সৈনিক ছাড়াও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যারা শব্দসৈনিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের গতি ত্বরান্বিত করেছেন তারা জাতির গর্ব। তেমনই এক গর্বিত সন্তান তিমির নন্দী।  স্বাধীনতাযুদ্ধে তার অবদান এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজ তার আলাপন—

 

মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার ফেলে আসা সেই উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাই।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় ছোট ছিলাম। আমি সে সময় মেজ ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি কুড়িগ্রামে ছিলাম। তখন পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে ছিল যে, সেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। তবে মানুষকে উজ্জীবিত করার জন্য গান করতাম কুড়িগ্রামের লালমনিরহাটে। আমরা যুবকরা প্রতি রাতে গরুর গাড়িতে করে দলবেঁধে অজপাড়াগাঁয়ে গান করতাম। সে সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমরা মাথা একসঙ্গে করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনতাম। যুবকরা পালাক্রমে এলাকা পাহারা দিতাম। শুধু লাঠি হাতে পাহারা দেওয়াটাই সব নয়, সম্মুখযুদ্ধে যেতে হবে। মাকে বোঝালাম। মা রাজি ছিলেন না। আমরা কয়েকজন মিলে আসাম গেলাম, সেখান থেকে কলকাতা। ফিরে এসে মাকে আবারও বোঝালাম। মা তখন বললেন, ঠিক আছে, যুদ্ধ করবি, তাহলে কণ্ঠ দিয়ে করস! আমি অবাক হলাম, কণ্ঠ দিয়ে আবার যুদ্ধ করা যায় নাকি! একসময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অনেক পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হলো। অজিত রায়, সুজয় শ্যাম, লাকী আখন্দ, রফিকুল আলম, কাদের কিবরিয়া, অরূপ রতন চৌধুরীসহ আরও অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিল্পীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত ছিলেন। আমি ছিলাম শরণার্থী শিল্পী গোষ্ঠীর দলে। আমাদের দলে ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, আসাদুজ্জামান নূর, ফকির আলমগীর, দীপা খন্দকার, কমল সরকার, কনক দাসহ অনেকে। আমরা কলকাতা, কলকাতার বাইরে, সীমান্তে গিয়ে গান করতাম। এভাবে গান গেয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করতাম।

 

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে এসেও আপনার কাছে মনে হয় আমরা স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে পেরেছি?

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হলো তখন থেকেই আমরা পিছিয়ে গেছি। স্বাধীনতা-পরবর্তী এক সময়ে আমরা জাতির জনকের নাম বলতে পারতাম না। সে সময় স্বৈরস্বাশক আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করেছে। অনেকেই দেশকে অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। এভাবে দেশকে পেছানো আমরা কখনই চাইনি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একসময় ভারতের অনেক শিল্পীই গান করেছেন। তবে এখনকার সরকারের সময় আমরা সেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। যে জিনিসটা আমরা অনেক আগেই দেখতে চেয়েছিলাম।

 

১৬ দিনব্যাপী বিজয়ের ৪৫ বছর-লাল সবুজের মহোৎসব শুরু হয়েছে। আপনি একে কীভাবে দেখছেন?

এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমি একটি সুন্দর তথ্যচিত্র দেখালাম। আমি মনে করি, শুধু এই বিশেষ দিনে নয়, মাসব্যাপী এটি প্রচার করতে হবে। বিশেষ দিনেই কেন শুধু এই দিবসটি নিয়ে মাতামাতি হবে! আমাদের সারা বছর ধরে দেশপ্রেম দেখাতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দেখবে আমরা স্বাধীনতা কীভাবে অর্জন করলাম, কীভাবে এই পর্যায়ে উঠে এলাম। এসব সব চ্যানেলেই দেখাতে হবে। ১৬ দিন কেন! আমরা মাসব্যাপী কেন এ উদ্যোগটি নিতে পারব না? নিঃসন্দেহে এই বিজয়ের ৪৫ বছর-লাল সবুজের মহোৎসব ভালো একটি উদ্যোগ।

 

আপনার সামনের ব্যস্তটা জানতে চাই।

আসছে ১৬ ডিসেম্বরে আমি আর শাহীন সামাদ মিলে দেশ টিভিতে একটি গানের প্রোগ্রাম করছি। শাহীন সামাদ আমার বড় বোনের মতো, বন্ধুর মতো। আমরা জুটি হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এবং পরবর্তীতে অনেক গান গেয়েছি। এখনো গাইছি। শিল্পীর সঙ্গে শিল্পীর একটা আত্মিক সম্পর্ক থাকে, একাত্মতা থাকে। শাহীন সামাদের সঙ্গে আমারও তেমন। তিনি অনেক বন্ধুবৎসল।

সর্বশেষ খবর