সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিজয়ের আলাপন

জীবদ্দশায় যে সম্মান পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া

পান্থ আফজাল

জীবদ্দশায় যে সম্মান পেয়েছি, এটাই বড় পাওয়া

সংগীত শিল্পী শাহীন সামাদ । ১৯৭১ সালে গান নিয়ে এই কণ্ঠযোদ্ধা ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার গাওয়া গান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেরণা জুগিয়েছে। এই কণ্ঠ সৈনিককে নিয়ে আজকের আলাপন—  

 

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে আপনার সেই সময়ের ভূমিকা জানতে চাই।

আমাদের কাজ ছিল শরণার্থী ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে গান গাওয়া। আমরা পুরো নয় মাস পশ্চিমবঙ্গতেই ঘুরে ঘুরে গান গেয়েছি, মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছি। মঞ্চ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে আমাদের গান গাওয়ানো হতো। আমরা দিল্লিতেও একমাস ছিলাম।

 

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আপনি গান করেছেন। এই সুযোগটা কিভাবে হলো?

একসময় সমর দা ডাকলেন। একসঙ্গে আমার আটটি গান রেকর্ড হলো। পরের বার যখন গিয়েছিলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পাশে আমাদের জাতীয় পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে আমরা জাতীয় সংগীত গেয়েছিলাম। এরপরে আবার আমাদের ডাকলেও যেতে পারিনি। তখন আমরা প্রায় ১৪টা গান করি। সেই গানগুলো প্রায় ছয়মাস বেজেছে।

 

গান গাওয়ার জন্য কি কোনো সম্মানী পেতেন?

অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ৬টি গান গাওয়ার জন্য পেয়েছিলাম ১০৫ টাকা। বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতি থেকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। গান গেয়ে যে সম্মানী পেতাম তা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য হাঁড়ি-পাতিল, খাবার, পানি, কম্বলসহ নানা দরকারি জিনিস কেনা হতো।

 

‘রূপান্তরের গান’ নিয়ে কিছু শুনতে চাই।

‘রূপান্তরের গান’ শিরোনামে সাজানো হয়েছিল মুক্তি ও সংগ্রামী চেতনার গানগুলো। এটার স্কেচ করতেন মুস্তাফা মনোয়ার ও স্ক্রিপ্ট পড়তেন সৈয়দ হাসান ইমাম। 

 

মুক্তির গানেও তো আপনি যুক্ত ছিলেন?

মুক্তির গানে আমি যুক্ত ছিলাম। আমাদের সংগঠনের সভানেত্রী ছিলেন সানজিদা আপা, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহমুদুর রহমান। মুক্তির গানের শুটিংটা ছিল অনেক কষ্টের। একটা ভাঙা ট্রাকে করে ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে আমরা গিয়েছিলাম। অনেক কষ্টের ছিল সেটি।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তথ্য উদ্ধারে এখনো কি আমাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে?

আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক দলিল বলতে কিছুই নেই। আমরা যারা গান গেয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত থেকেছি সেটা ২৪ বছর পর উদ্ধার হলো। তারেক মাসুদের মুক্তির গানের পর সবাই জানল আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের সব দলিলে, তথ্যে ফাঙ্গাস পড়ে গিয়েছিল। এখন তো অনেক মুক্তিযোদ্ধা জমে গেছে, যারা সেই সময় সম্পৃক্ত ছিল না। 

 

ছায়ানটের সঙ্গে আপনি কি আগে থেকেই সম্পৃক্ত?

আমি ছায়ানটের ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলাম। আমার বাবা ছায়ানটে ভর্তি করে দিয়ে সেই সালেই মারা গেছেন। আমি ৪৪ বছরের বেশি সময় ধরে ছায়ানটের সঙ্গে আছি এবং আজীবন থাকব। ছায়ানট আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। ছায়ানটে অনেক ছাত্রছাত্রী তৈরি করেছি।

 

এত কিছুর পরও কোনো প্রাপ্তি আছে?

প্রাপ্তি আছে। ৪৪ বছর পর আমাদের নাম যে এসেছে সেটা অনেক বড় পাওয়া। দীর্ঘ সময় পর জাতীয় পুরস্কার পেলাম। ২০০৯ সালে নজরুল ইনস্টিটিউট এবং ২০১৪ সালে নজরুল ইউনিভার্সিটি, ময়মনসিংহ থেকে নজরুল সংগীতে অবদানের জন্য দিল আজীবন সন্মাননা। ২০১৬ সালে পেলাম একুশে পদক। জীবদ্দশায় যে এই সম্মান পেয়েছি এটাই আমার বড় পাওয়া। 

   

বর্তমানে কি কি কাজে ব্যস্ত রয়েছেন?

সম্প্র্রতি ৪টি সিডি একসঙ্গে বের করলাম। মিক্সড, নজরুল এবং হামদ-নাত। আজ চ্যানেল আইতে, আগামীকাল বাংলাভিশনে এবং ১৬  ডিসেম্বর দেশ টিভির কলের গানে অনুষ্ঠান রয়েছে। তবে, নজরুল সংগীত নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ খুবই কমে গেছে। অনেকেই স্পন্সর করতে চান না। এদিক থেকেই সরকারের, বিভিন্ন স্পন্সর, সিডি প্রযোজনা সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত। 

সর্বশেষ খবর