রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিজয়ের আলাপন

মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছু এখনো অজানা

পান্থ আফজাল

মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছু এখনো অজানা

মুক্তিযুদ্ধের সময়টা ছিল উত্তাল। গোটা দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন চলছিল। সেই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক আবুল হায়াত। সে সময়কার স্মৃতি ওঠে এসেছে আজকের আলাপনে—

 

স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনার সম্পৃক্ততা জানতে চাই।

তখন আমি ঢাকা শহরে ছিলাম। আমি মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করিনি। মাঝে মাঝে বন্ধুরা এলে তাদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর জানতাম, খোঁজ নিতাম। মূলত তারাই আমাকে দেশের সব অবস্থার কথা বলত। আমি মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত অসুস্থ ছিলাম। হাসপাতালে তখন ভর্তি। প্রায় ৩-৪ মাস। সেই সময় তো স্বাধীনতার যুদ্ধ চরম রূপ ধারণ করেছিল। ৬৯, ৭০ ও ৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আমরা দল বেঁধে নাটক করেছি। সেইসময় আমরা সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। রাজপথে সবাই মিলে আন্দোলন করেছি। তবে সেই চরম সময়ে অসুস্থ থাকার কারণে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি।  

 

সেই সময়ে আপনার সঙ্গে আর কে কে ছিলেন?

সেইসময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে আমাদের দেশের অনেক শিল্পীই যুক্ত ছিলেন। আমাদের সঙ্গে তখন ছিল এনামুল ভাই, গোলাম রাব্বানি, হাসান ভাই, আবেদ ভাই, ফখরুল ভাই সহ আরও অনেকেই। যাদের অনেকের নাম এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না।

 

কী ধরনের নাটক আপনারা তখন করতেন?

আমরা নাটক দিয়েই আমাদের আন্দোলন চালিয়েছি। মূলত সব নাটকই ছিল সংগ্রাম ও বিপ্লবকে উপলক্ষ করে। পাকিস্তানি শাসকরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু আমরা সেই নিষেধ অমান্য করে মাঠেঘাটে, হলে, শহীদ মিনারে, ট্রাকে নাটক করেছি। সেইসময়  আমরা করেছি রক্তকরবী, বৈকুণ্ঠের উইল, রক্ত দিলাম স্বাধীনতার জন্য, চাঁদ উঠবেসহ প্রচুর নাটক।

 

স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশ্য কী সফল হয়েছে?

মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তথ্য উদ্ধারে এখনো আমাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে। এসব তথ্য উদ্ধারে কেউ প্রপারলি কাজ করছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে আমার জানামতে, রশিদ ভাই কাজ করছে। বাংলা একেডেমি কিছুটা কাজ করছে। সেই সময়কার কিছু কাজ, প্রযোজনা ছিল যা এখনো প্রকাশের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হইনি। এগুলো নিয়ে অনেক কিছু করার আছে। সবাইকে মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনে, জানানোর প্রয়োজনে আমাদের কিছু কাজ করার বাকি রয়েছে। আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসনির্ভর তথ্য নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

 

স্বাধীন দেশের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি?

আমি অনেক কিছুই পেয়েছি। দেশ পেয়েছি, একটি পতাকা পেয়েছি। আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা পেয়েছি। এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছুই হতে পারে না। এ ঋণ শোধ হওয়ার নয়। আমি এ স্বাধীন দেশে বসবাস করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।  

 

বর্তমানে নিজেকে কী কী কাজে ব্যস্ত রেখেছেন?

বিভিন্ন নাটক, সিরিয়ালে এখন নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি। কয়েকদিন আগেও মঞ্চে ‘দেওয়ান গাজীর কিচ্ছা’ মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছি। তবে নিয়মিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ মাসে প্রচুর সিরিয়ালে কাজ করছি। অনেক সিঙ্গেল নাটক, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্রে কাজ করছি। আসলে নিজেকে ব্যস্ত রেখেই সারা মাস ধরে কাজ করছি। এভাবেই সময় কেটে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর