রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্মরণে অভিনেতা রাজু আহমেদ

কচি খন্দকার [নাট্যনির্মাতা ও অভিনেতা]

স্মরণে অভিনেতা রাজু আহমেদ

খ্যাতিমান অভিনেতা রাজু আহমেদ আজ নেই। চলে যাওয়ার ৪৪ বছর পরেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এ মুক্তিযোদ্ধা অভিনেতাকে। ১৯৭২ সালের এই দিনে দুষ্কৃতকারীর হাতে প্রাণ হারান তিনি।

শিশুকালে শিশুমনে একটি সংবাদ দারুণ তোলপাড় তুলেছিল। রাজু আহমেদের মৃত্যু কুষ্টিয়ার মানুষেরা কিছুতেই মানতে পারছিল না। এক অনাকাঙ্ক্ষিত, অনাহূত খবর। এ শক্তিশালী অভিনেতা নিজ প্রতিভা গুণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক শিল্পী হয়ে সবে প্রবেশ করেছিল বিশ্বদরবারে। পৃথিবীর সমস্ত সিনেমা দর্শক পেতে যাচ্ছিল বিশালত্ব ভরা একজন অভিনেতাকে। বিশ্বনন্দিত সত্যজিৎ রায় কলকাতায় রাজু আহমেদের সিনেমায় অভিনয় দেখে মন্তব্য করেছিলেন রাজু আহমেদ একদিন বড় অভিনেতা হবেন। কিন্তু কয়েকটি বুলেটের আঘাতে ঝাঁজরা করে দেয় সমস্ত স্বপ্নকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজু আহমেদ ছিলেন রণাঙ্গনের শব্দসৈনিক। কুষ্টিয়ার আরেক কৃতী সন্তান নাট্যকার কল্যাণ মিত্রের রচনায় ঐতিহাসিক নাটক জল্লাদের দরবারে জল্লাদ ইয়াহিয়া খানের ভূমিকায় অভিনয় করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত নাটকে রাজু আহমেদের ভরাট কণ্ঠ সেই সময় লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাকে যেমন সাহস জোগাত তেমনি সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করত।  দুর্ভাগা বাঙালির দুর্ভাগ্য। বাবা লুতফল হক একজন সংগীতজ্ঞ। মা রত্নগর্ভা। তার সব কয়টা ভাই ও একমাত্র বোন স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আর্ট কলেজের ছাত্র রাজু শিল্পের দায়বদ্ধতা নিয়ে বড় হয়েছেন। অভিনয়ের প্রায় সব শাখায় মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার আর চলচ্চিত্রে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করতেন। তার অভিনয়গুণে চরিত্রটি ভিলেন থেকে হয়ে উঠত নায়ক। দুর্ভাগ্য ৩৩ বছর বয়সে হারিয়েছি বাঙালির বিজয়ের মাসে। ১১ ডিসেম্বর এলেই এক মহানায়কের করুণ বিদায়ের কথা মনে পড়ে। চাইলেই রাজু আহমেদকে বিদায় দেওয়া যায় না। তিনি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন মানুষের অন্তরে...।

সর্বশেষ খবর