শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিজয়ের আলাপন

যুদ্ধের সময় সবার মনে-ধ্যানে এক মন্ত্র ছিল ‘দেশ’

পান্থ আফজাল

যুদ্ধের সময় সবার মনে-ধ্যানে এক মন্ত্র ছিল ‘দেশ’

বাংলা গানের অন্যতম শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী। তার গাওয়া কালজয়ী অনেক দেশের গানই মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিসেনাদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করেছিল। বিজয়ের আলাপনে আজ থাকছেন এই কণ্ঠযোদ্ধা—

 

আপনার স্মৃতিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা শুনতে চাই। 

মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলো আমার একার জন্য শুধু নয়, সারা দেশের মানুষের জন্য ছিল অনিশ্চয়তার, শঙ্কার। সেই সময়গুলো এখনো দুঃসহ স্মৃতি। আমি সেই সময় ভয়ে ছিলাম। কারণ আমি তখন বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এর মধ্যে আবার আলতাফ ভাই ধরা পড়ে গেলেন। বলার অনেক কিছুই আছে। এসব নিয়ে তো অনেক বই লিখলেও শেষ হবে না। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে মেশিন গান ফিট করা থাকত। সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্চ করা হতো। সে ভয়াল সময়ের কথা এখনো মনে পড়ে। 

 

এমন কোনো ঘটনা আছে যা আপনাকে শিহরিত করে?

একটা ঘটনা বলি। আমার এক বন্ধু ছিল। তার ওপর  সে সময় হুলিয়া জারি হলো। আমি আমার বন্ধুকে  সে সময় আমার বাড়িতে লুকিয়ে রাখলাম। আমার বাসা সার্চ হলো। আমি অনেক ভয়ে ও শঙ্কায় ছিলাম। তবে ভাগ্য ভালো ছিল, সে তখন ধরা পড়েনি। ওই সময় রাস্তায় বের হলেই সার্চ করা হতো। ভয়াবহ সেই অবস্থা।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে সেই সময়ে আপনার সম্পৃক্ততা কতখানি ছিল?

সারা দেশের শিল্পীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গান করতাম। বিভিন্ন বিপ্লবী ও প্রেরণামূলক গান করে আমরা দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতাম।

 

আপনার নিজের লেখা ও সুর করা গানও করেছিলেন সেই সময়... 

হুম। আমি অন্যান্য গানের সঙ্গে নিজের লিখা ও সুর করা গানও করেছি। অনেক গান সেই সময় রেকর্ড ছিল না। এখন সেই সব গান পাওয়াও যাবে না। এসব গান সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা  জোগাত। একটা গানের কথা এমন ছিল— ‘ও আমার দেশ, আমি তোমার বুকেই হাসি/তোমার ঘাসের দোলা, আমার অঙ্গে বাঁজায় বাঁশি।’ এই সব গানে উত্তেজনা, অনুপ্রেরণা ছিল। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা সুর করতাম, লিখতাম। আমাদের সঙ্গে আলতাফ ভাই, খান আতা ভাই ছিলেন। বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের সবাই ছিলেন। সেই সময় সবার মনে ও ধ্যানে এক মন্ত্র ছিল— ‘দেশ’।

 

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমরা ঠিকমতো তুলে ধরতে পারছি কি?

সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে গেলে একেবারে নির্মোহভাবে করতে হয়। আমরা তা এখনো পারিনি। অনেক পরিতাপের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে একেকজন একেক কথা বলেন। রাজনৈতিকভাবেই আমরা এটা করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে সন্দেহ, বিভাজন, বিতর্ক থাকা ঠিক নয়। সামগ্রিকভাবেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারিনি।    

 

প্রাপ্তিযোগ কিছু আছে বলে মনে হয়?

স্বাধীনতা অর্জন করলাম, সেটাই বড় প্রাপ্তি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী কিছু আছে! তবে ওই যে বললাম, স্বাধীনতার এতদিন পরেও আমরা বিভাজন কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমার তো মনে হয় না, অন্য কোনো দেশে এ রকম বিভাজন আছে! স্বাধীনতার এত দিন পরেও আমরা ইতিহাস নিয়ে সন্দেহের মধ্যে আছি। 

 

বিজয়ের এই মাসে কী কী কাজে ব্যস্ত রয়েছেন?

এবার আমি গান খুব একটা করছি না। আগে বিজয়ের মাসে অনেক গানই করেছিলাম। এখন শরীরটা ভালো নেই। গান গাইতে সমস্যা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর