বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইউটিউব কি টিভি চ্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী!

ইউটিউব কি টিভি চ্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী!

‘টিভি এখনো দেখি। কিন্তু বলতে পারব না কোন অনুষ্ঠান কেমন লেগেছে! এমনও হয়, টিভিতে কোনো অনুষ্ঠান দেখছি, ভালো লাগছে, এমন সময় শুরু হলো বিজ্ঞাপন। কিছু সময় ধৈর্য ধরে থাকলাম, কারণ এক সময় বিজ্ঞাপন শেষ হবে। কিন্তু একি! বিজ্ঞাপন যে শেষই হয় না। ধৈর্যহারা হয়ে ঢুঁ দিতে লাগলাম অন্যান্য চ্যানেলে। আরেকটি অনুষ্ঠানে নজর আটকে গেল। কিন্তু মুহূর্তেই মনোযোগ ধূলিসাৎ করে দিয়ে সেখানেও শুরু হলো বিজ্ঞাপনের মহড়া।’ টিভি অনুষ্ঠানের প্রচার নিয়ে এমন কথাই শুনিয়েছেন বিশ্বনন্দিত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। তার মতো অন্য শিল্পী আর সাধারণ দর্শক এখন দেশি  টিভি চ্যনেলের পরিবর্তে বিদেশি চ্যানেল আর দেশি অনুষ্ঠান দেখতে ইউটিউবের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ অবস্থাকে মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা কীভাবে দেখছেন। সে কথা তুলে ধরেছেন—আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আবুল হায়াত

দর্শক এখন বিজ্ঞাপন বিড়ম্বনাসহ নানা কারণে টিভি সেটের সামনে থেকে সরে গিয়ে ইউটিউবে টিভি অনুষ্ঠান দেখছে। তারা বিরতিহীনভাবে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারছে। একজন শিল্পী হিসেবে আমি বলব এটি ভালো হচ্ছে। কারণ আমাদের কাজগুলো তো অন্তত দর্শক দেখতে পারছে। কেউ যদি আমাদের কাজ দেখতে না পায় তাহলে এই কষ্টের মূল্য কোথায়? প্রফেশন হিসেবে বলতে গেলে বলব এটি ক্ষতির কারণ। অর্থাৎ টিভি যদি দর্শক হারায় তাহলে টিভি চ্যানেল আর আমরা সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। এ কারণে টিভি চ্যানেলের উচিত এ অবস্থার উত্তরণে জরুরিভাবে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

জাহিদ হাসান

টিভি দর্শক এখন ইউটিউবে অনুষ্ঠান দেখছে। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বিষয়টিকে আমি ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা’ প্রবাদের মতোই দেখি। বিজ্ঞাপন, প্লানিং ও অন্যান্য কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দর্শক কোনো টিভি অনুষ্ঠান দেখতে পারছে না। বাধ্য হয়ে তারা ইউটিউবে গিয়ে টিভির পছন্দের অনুষ্ঠানগুলো দেখছে। আমি বলব দেখার একটি বিকল্প পথ তো তৈরি হলো। আমরা যারা অভিনয়ে আসি তারা প্রথমে শখে আসলেও পরে এটি পেশা হিসেবে গ্রহণ করি। দর্শক যদি আমাদের কাজ দেখতে না পারে  তাহলে একদিকে আমাদের পেশার ক্ষতি অন্যদিকে বলব তাহলে কাজ করে লাভ কী? তাই ইউটিউবে তারা যদি আমাদের কাজ দেখে সেটি আমাদের জন্যই সুখবর। আর টিভি চ্যানেল এখন ঠিক করবে কীভাবে তারা দর্শকদের আবার ফিরিয়ে আনবে।

 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

প্রথমে একটা কথা বুঝতে হবে মানুষ আসলে টিভি দেখার জন্য তেমন কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়নি। কারণ মানুষ আসলে টিভি দেখে না, কনটেন্ট দেখে। আগে যখন শুধু বিটিভি ছিল তখন তারা কনটেন্ট দেখত ওই একটি চ্যানেলে। এরপর যখন স্যাটেলাইট আসল তার কনটেন্ট দেখার জানালা বেড়ে গেল। সে তখন এসব জানালা থেকে পছন্দমতো কনটেন্ট দেখতে শুরু করল। এরপর এখন আসল ইউটিউব, ফেসবুক নেট ফিক্সের মতো হাজার হাজার জানালা। ফলে মানুষের কনটেন্ট দেখার জানালা দিনে দিনে বাড়ছে। এখন টিভি চ্যানেলকে তার কনটেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে এবং এ পরীক্ষা আমি মনে করি স্বাস্থ্যকর। মানুষকে তার অনুষ্ঠান বাছাই, নির্মাণ, বিজ্ঞাপন বিরতির পরিমাণ নির্ধারণ করা এসব বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ ওই যে বললাম চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আর টিকছে না।

 

চয়নিকা চৌধুরী

টিভিতে দর্শক অনুষ্ঠান দেখে না মূলত বিজ্ঞাপন যন্ত্রণার কারণে। অনেকে বলে টিভি নাটক বা অনুষ্ঠান দর্শক দেখে না। অনেকে আবার মানের প্রশ্নও তোলে। তাই যদি হবে তাহলে লাখ লাখ দর্শক প্রতিদিন দেশে-বিদেশে বসে ইউটিউবে টিভি অনুষ্ঠান দেখছে কেন? কারণ তারা বিরতিহীনভাবে মনোযোগ সহকারে অনুষ্ঠান দেখতে পারছে। টিভি চ্যানেলের জন্য এটি মোটেও শুভ দিক নয়। টিভি চ্যানেল চালাতে গেলে বিজ্ঞাপন অপরিহার্য। তবে তা সীমিত আকারে করলেই দর্শক যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবে।  চ্যানেলগুলোর উচিত দর্শক যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে নাটকসহ সব অনুষ্ঠান টিভিতেই দেখতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। না হলে টিভি চ্যানেলগুলোই একসময় অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।

সর্বশেষ খবর