বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মহরতেই ছবি শেষ

আলাউদ্দীন মাজিদ

যারা মহরতেই ছবি শেষ করে তাদের অবশ্যই অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে। মন্ত্রীকে দিয়ে মহরত করিয়ে সেই ছবি পত্রিকায় ছাপিয়ে  যে কোনো ফায়দা লুটে। চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থা নামধারী এসব নির্মাতাই খারাপ করছেন। প্রযোজককে নানা লোভ দেখিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করছেন। ফলে ছবি নির্মাণে আর এগিয়ে আসেন না তারা।

 

ঢাকঢোল পিটিয়ে জমকালো মহরত করা হলো। ক্লাপস্টিক দিলেন মন্ত্রী। রীতিমতো হৈচৈ কাণ্ড, ঘোষণা দেওয়া হলো বিগ বাজেট আর অ্যারেঞ্জমেন্টের ছবি হবে এটি। দর্শক এবার অন্যরকম একটি ছবি পেতে যাচ্ছে। যা আগে কেউ দেখেনি। ব্যস, ওই পর্যন্তই। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ছবির আর কোনো খবর থাকে না। মানে ছবিটি আসলেই অন্যরকম[!] হয়ে যায়। কিন্তু কেন?

এসব ছবির মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে —চাইলাম যারে পাইলাম তারে, মন খোঁজে বন্ধন, দেহ, ৬৯ পাতলা খান লেন, মায়ানগর, জলে ভাসা পদ্ম, জালালের পিতাগণ, না মানুষ, হাডসনের বন্দুক, মুন এভিনিউ, এই তুমি সেই তুমি, প্রিয়তমা আমি দাঁড়ি তুমি কমা, টাইম মেশিন, ফিল মাই লাভ, আসবো না ফিরে, লাভ ইন কোরিয়া, কিস্তির জ্বালা, ভালোবাসার চাইতে একটু বেশি, বিচার আমি করবো, লাইলী মজনু, আমার পিড়ানের কোনো মাপ নাই, আবার যোদ্ধা হব, তুমি সন্ধ্যারও মেঘমালা, প্রবাসীর প্রেম, সালাম মালয়েশিয়া, এলিয়েন এখন ঢাকায়, নষ্ট ছেলে, কেন আমি আসামী, বউ পাগল, কালো বিড়াল, পাগলের বিয়ে, মন যারে চায়, কাটা দাগ, মিশন সিআইডি, সাহসী কন্যা, নবীন কমিশনার, জনতার ডাক, নীলাঞ্জনা, সুন্দরী গুলবাহার, আদম, সবুজ কেন অপরাধী, আগুনমুখী, রক্তাক্ত প্রেম, প্রেমের নদী, নষ্ট হবার কষ্ট, বিয়ে হলো বাসর হলোনা, মধুর জীবন, না বলা ভালোবাসা, এইতো সময় ভালোবাসার, হ্যালো অমিত, দুধু মিয়া, পারলে ঠেকা, শোয়া চান পাখি, আগুনের চোখে প্রেম, অন্তরে অন্তরে, ভালো লাগার চেয়ে একটু বেশি, প্রেমের কাজল, প্রক্সি চেক, প্রজন্ম এক্স, কর্পুর, টাকার খেলা, ষোলো আনা প্রেম, নায়িকা, একা একা, আল্লাহ রাখলে মারে কে, যষ্টি মধু, বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা, এক পলকে দেখা, জান্নাত থেকে জান্নাত, স্বজন হারা, আমরাও মানুষ, ভালোবাসা ছাড়া কেউ কী বাঁচে, মন আমার মন, প্রেমের অধিকার, দিঘি, প্রিয়া শুধু আমার, অফিসার, রঙিন পৃথিবী, তুমি কী আমার ভালোবাসা, জটিল বন্ধন, কানামাছি, শতরূপে শতবার, সবকিছু পিছনে ফেলে, নীল মেঘ, অন্যরকম প্রেমকাহিনী, পায়রা মহুয়া, আউলা মন, আদি, মায়া, রাঙামন, গ্রেফতার, এবার তো হবে প্রেম, মিলন সেতু, নাকফুল, মনের মাঝে ভালোবাসা, তোকে বউ বানাবো, তোমার প্রেমে পড়েছি, সমসাময়িক, অনেক দৃষ্টি কেড়ে তুমি এলে, অসম প্রেম ইত্যাদি। এমন ছবির সংখ্যা আরও প্রায় অর্ধশতাধিক হবে। অবশ্য এসব ছবির মধ্যে অনেকগুলোর কিছু শুটিং হয়েছে। দিন দিন এই তালিকা লম্বা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সহসভাপতি মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, এগুলো একদিকে লোকদেখানো কাজ মানে জমকালো মহরত করে ছবি শেষ না করা, অন্যদিকে প্রযোজকের টাকা খসানোর জন্য মন্ত্রী এনে পত্রিকায় ছবি ছাপিয়ে প্রযোজককে প্রলুব্ধ করা। এরা হচ্ছে মহরত ডাইরেক্টর। এমন অসাধু লোকের জন্য সত্যিকারের প্রযোজকের মনে চলচ্চিত্র সম্পর্কে বিরূপ ধারণা জন্মায় এবং লগ্নিকারক পাওয়া যায় না। এদের হাত থেকে চলচ্চিত্রকে রক্ষা করতেই হবে।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা বদিউল আলম খোকন বলেন, একটি প্রবাদ আছে, আর তা হলো— খালি কলস বাজে বেশি। যারা মহরতেই ছবি শেষ করে তাদের অবশ্যই অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে। মন্ত্রীকে দিয়ে মহরত করিয়ে সেই ছবি পত্রিকায় ছাপিয়ে যে কোনো ফায়দা লুটে। চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থা নামধারী এসব নির্মাতারাই খারাপ করছে। প্রযোজককে নানা লোভ দেখিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করছে, ফলে ছবি নির্মাণে আর এগিয়ে আসে না তারা। আমি বলব এসব না করে এই শিল্পকে ভালোবেসে প্রজেক্ট সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া উচিত। চলচ্চিত্রকে পুঁজি করে এসব সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক কাজ করা মোটেও উচিত নয়।

ঝুলে থাকা ছবি আর নয়, এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী নিপুণ। তিনি বলেন, ‘চারপাশে এখন অনেক ছবি হচ্ছে। কিন্তু মহরতেই আটকে যায় অধিকাংশ ছবি। আবার কিছুদূর শুটিং হয়ে ঝুলে পড়ে আরও কিছু ছবি। পেশাদার অভিনয় শিল্পীদের জন্য এসব ঘটনা কাম্য নয়। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমি সচেতন হব।’ নিপুণ দীর্ঘদিন আগে শুটিং শুরু করেছিলেন ‘মায়ানগর’ নামে একটি ছবিতে। শান্তি চৌধুরী নামের নবাগত এক পরিচালক ছবিটির মহরতও করেছিলেন জোরেশোরে। এরপর শুটিং বেশি দূর এগোয়নি। ছবিটির ব্যাপারে নিপুণের কাছে নতুন কোনো তথ্যও এখন নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর