শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হল বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা

হল বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা

প্রত্যেক দল মঞ্চনাটক নিয়মিত মঞ্চস্থ করতে চায়। সেক্ষেত্রে হল বরাদ্দ নিয়ে রীতিমতো চলে কাড়াকাড়ি। এই হল বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা আগেও ছিল এখনো আছে। যেমন, কয়েকদিন আগেই অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটারের জানুয়ারি মাসের বরাদ্দ তালিকা টাঙাতে দেরি হওয়ায় অন্তত তিনটি নাট্যদল প্রদর্শনী করতে পারেনি। অবয়ব নাট্যদল, নাট্যবিন্দু এবং লোক নাট্যদল (বনানী) বরাদ্দ তালিকা দিতে দেরি হওয়ায় প্রদর্শনী করতে পারেনি। তাই হল বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা এবং এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে মঞ্চ ও শিল্পকলা সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন— পান্থ আফজাল

 

মঞ্চসারথি আতাউর রহমান

কিছু কিছু সমস্যা তো থাকবেই। তবে নিম্নমানের নাটক হলে বরাদ্দ বাদ দেওয়ার কথা বলা আছে। আমি হল বরাদ্দ কমিটির সঙ্গে আছি। আমি মনে করি, যারা এই থিয়েটারের পথপ্রদর্শক, তাদের হল বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে, শিল্পকলার নির্দিষ্ট অনেক অনুষ্ঠান থাকে। সেগুলোর ক্ষেত্রে তো কোনো আপস চলে না। আবার বছরে অনেক উৎসব হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে হল বরাদ্দের ক্ষেত্রে এগুলো অগ্রাধিকার বেশি পাবেই। যে দলগুলো ভালো নাটক করবে তারা অগ্রাধিকার পাবে। হল বরাদ্দ নিয়ে তেমন কোনো জটিলটা আগেও তেমন ছিল না, এখনো তেমন নেই। মাঝে মাঝে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা থাকে।

 

নাট্যজন মামুনুর রশীদ

এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো, ৬ মাসের কিংবা ৩ মাসের হল বরাদ্দের তালিকা একবারে টাঙিয়ে দেওয়া। তারা তা এখনো করতে পারেনি। আগে থেকে হল বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত দিলে আমরা ঠিকমতো প্রস্তুতিটা নিতে পারি। কারণ একটা নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক পরিকল্পনা থাকে। এই সমস্যার কারণে তা আর ঠিকমতো করা হয়ে উঠে না। আমি জেনেছি, জানুয়ারি মাসের বরাদ্দ তালিকা টাঙাতে দেরি হওয়ায় অন্তত তিনটি নাট্যদল প্রদর্শনী করতে পারেনি। এটা ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে যদি দলগুলো আগে থেকেই হল বরাদ্দের ব্যাপারে জানে, তবে শো ঠিক মতো করতে সুবিধা হয়। এই হল বরাদ্দ নিয়ে সমস্যার সমাধান দরকার।

 

আহমেদ গিয়াস [সদস্য, হল বরাদ্দ কমিটি]

এটা কিন্তু নিয়মিত সমস্যা নয়। এটা হল বরাদ্দ কমিটির সমস্যা নয়। প্রশাসনিক সমস্যা। যেকোনো দলের হল বরাদ্দের জন্য আগের মাসের ৭ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হয়। ১৫ তারিখের মধ্যে হল বরাদ্দ কমিটি মিটিং করে ফেলে। ২০ তারিখে বরাদ্দ তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। বরাদ্দ পাওয়া নাট্যদলগুলোকে তালিকা দেখে ৩০ তারিখের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিছুদিন আগে এই সমস্যাটা হয়েছিল। আসলে হল বরাদ্দ নিয়ে সব সময় সমস্যা আমাদের দিক থেকে হয় না। অন্যদিকে শিল্পকলার নিজস্ব কিছু অনুষ্ঠান থাকে ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। এই কয়েক মাস অনেক চাপ থাকে। সরকারি এই অনুষ্ঠানগুলো বাদে বাকি দিনে দলগুলো হল বরাদ্দ পেয়ে থাকে। হল বরাদ্দের এই সমস্যা আমরা এখন  অনেকটাই উত্তরণ করেছি বলা চলে

 

নুনা আফরোজ [প্রাঙ্গণেমোর]

এই সমস্যা দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। সময়মতো মিটিং হয় না। সিদ্ধান্ত দিতে দেরি হয়। হল বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৭-১০ তারিখের মধ্যে জানালে দলগুলো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে। সময়মতো জানানো হয় না বলে নাটক মঞ্চস্থ করতে একটি বেগ পেতে হয়। এই ব্যাপারে যারা দায়িত্বে আছে, তাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। নিরপেক্ষ হতে হবে। হল বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়ণ্টন জরুরি। তাদের সব নাটক দেখতে হবে। জানতে হবে সেই নাটক সম্পর্কে।

 

চন্দন রেজা [গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন]

হল বরাদ্দ নেওয়ার ক্ষেত্রে আগে আবেদন করতে হয়। যাদের যোগ্যতা রয়েছে তারাই তাদের নাটক মঞ্চস্থ্থ করতে পারে। অন্যদিকে, ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অনেক চাপ থাকে। সরকারি অনেক অনুষ্ঠান থাকে এই কয়েক মাসে। হল বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিন্তু প্রত্যেক দলকে টেকনিক্যাল করতে হয়। মান সম্মত হলে তবেই তা মঞ্চস্থ হবে। আসলে জাতীয় নাট্যশালায় নাটক মঞ্চস্থের জন্য হল বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। মানহীন কোনো নাটক জাতীয় নাট্যশালায়  দেওয়া যায় না। থিয়েটারে যারা পথপ্রদর্শক, তাদের তো অগ্রাধিকার দিতেই হবে। সব দলের জন্য হল বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হতেই হয়। তারপরও এই সমস্যা এখন তেমন নেই। শিল্পকলার বাইরের হলগুলোতেও কিন্তু দলগুলো নাটক মঞ্চস্থ করার সুযোগ রয়েছে। সামনে অনেক কিছু সমস্যার সমাধান হবে আশা করছি। 

 

মো. ফখরুজ্জামান চৌধুরী  [নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়]

আসলে সারা পৃথিবীতে ন্যাশনাল থিয়েটারগুলোতে কিন্তু দেখা যায়, কিছু নির্দিষ্ট দল হল বরাদ্দের ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এটাই নিয়ম। আমরা ভাগ্যবান যে, নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য শিল্পকলায় আমাদের তিনটি হল রয়েছে। বড়দল বা মানসম্মত নাটকের ক্ষেত্রে একক প্রাধান্য থাকবেই। হল বরাদ্দ নিয়ে আগেই কিছু জটিলটা ছিল, এখনো আছে। তবে এটা থাকা ঠিক নয়। ২০-২২ তারিখের মধ্যে হল বরাদ্দ দেওয়া উচিত। টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। হল বরাদ্দের ক্ষেত্রে ফোনে ফোনে অফিশিয়ালি জানিয়ে দেয় সব সময়। যেকোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি মাঝে মাঝে হতেই পারে। মিটিং করে সেইগুলো ঠিক করতে হবে। এই সমস্যা কিন্তু আমাদের কাম্য নয়।

 

আলী আহমেদ মুকুল [সদস্য, হল বরাদ্দ কমিটি]

যারা প্রদর্শনী করতে পারেননি, তাদের অভিযোগ সত্য। এ মাসে একটু ঝামেলা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে বরাদ্দ তালিকাটি টাঙাতে একটু দেরি হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর