সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আমার চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নেই

আলাউদ্দীন মাজিদ

আমার চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নেই

ইচ্ছা আছে নিয়মিত ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর। কিন্তু ভালো গল্প, চরিত্র আর ছবি কোথায়। আমাদের গর্বের চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে বুকের ভিতর এখন শুধুই আহাজারির শব্দ। হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, সব শেষ হয়ে গেল। আর সহ্য হয় না। এই শিল্পের আর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

 

ছিয়াত্তর বসন্তে পা দিলেন ঢালিউড রাজা। আজ নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন। ১৯৪২ সালে দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা আলো করে পৃথিবীর বুকে ঠিকানা গড়েন তিনি। জীবনের নতুন বসন্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে উচ্ছ্বসিত রাজা বলেন, এই জীবনে আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। এক জীবনে অনেক পেয়েছি। সাড়ে সাত কোটি থেকে আজ ষোলো কোটি মানুষের হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা আর দোয়া পেয়েছি। আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা সবাই এখনো আমাকে পরম মমতায় মনের গভীরে ঠাঁই দিয়ে রেখেছে। রাষ্ট্র আমাকে একাধিকবার জাতীয় সম্মান দিয়েছে। স্বাধীনতা পদক দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আর চাওয়ার নেই আমার। অবারিত প্রাপ্তির  কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বাস আবেগে জড়িয়ে আসছিল রাজার কণ্ঠ। তৃপ্তির হাসি হেসে তিনি বলে ওঠেন ‘আমি তো একজন সফল শিল্পী, বাবা আর মানুষ। সৃষ্টিকর্তা আমাকে মর্যাদার শীর্ষ আসনে বসিয়েছেন। তার কাছে কৃতজ্ঞ। যখন ভাবি আমি বাঙালি আর বাংলাদেশের শিল্পী তখন খুব গর্ব হয়। পরিবার, দেশ আর মানুষের ভালোবাসায় আজ আমি গর্বিত রাজ্জাক। আমার জীবন ধন্য,পরিপূর্ণ।

১৯৬৪ সালে সামপ্রদায়িক দাঙ্গার উত্তাল সময়ে নতুন জীবন গড়তে একজন সাধারণ মানুষ আবদুর রাজ্জাক স্ত্রী ও শিশু সন্তান বাপ্পাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন শূন্য হাতে। অমানুষিক জীবন সংগ্রামের পর সফল হয়ে নায়করাজ উপাধি পেয়েছেন, চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি হয়েছেন, এটি অনেকের কাছে গল্প বলে মনে হতে পারে। মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। রাজ্জাক অসীম মনোবল, অমানুষিক পরিশ্রম আর মমতার মাধ্যমে ঠিকই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন।

ছিয়াত্তরে দাঁড়িয়ে নায়করাজ বলেন, ইচ্ছে আছে নিয়মিত ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবার। কিন্তু ভালো গল্প, চরিত্র আর ছবি কোথায়। আমাদের গর্বের চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে বুকের ভিতর এখন শুধুই আহাজারির শব্দ। হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, সব শেষ হয়ে গেল। আর সহ্য হয় না। এই শিল্পের আর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তার কথায় ভালো ছবি পেলে দর্শক সিনেমা হলে অবশ্যই ছুটে যায়। এর প্রমাণ ‘মনপুরা’, ‘আয়নাবাজি’সহ অনেক ছবি। নতুন প্রজন্মের যারা নির্মাণে আসছে তারা ভালো করছে। কিন্তু দুঃখ একটাই। তারা বিদেশি পুরস্কার আর উৎসবের জন্যই ছবি বানায়। তাদের বলব তোমরা মেইনস্ট্রিমে আস। চলচ্চিত্রকে বাঁচাও। ভিন্নধারা আর মূলধারা বলে কিছু নেই। তোমরা যদি এগিয়ে আস তাহলে কিছু বাজে লোক যারা চলচ্চিত্রকে ধ্বংসে মত্ত তারা পালাতে বাধ্য হবে। হতাশার সুরে নায়করাজ বললেন, যৌথ প্রযোজনার নামে এখন স্মাগলিং শুরু হয়ে গেছে। প্রপার যৌথ নির্মাণে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু নিয়মনীতি না মেনে এদেশের মেয়েদের অশ্লীলভাবে পর্দায় উপস্থাপন করাটা তো বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। তাইতো দর্শক আজ দেশীয় ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

নতুন জীবনের উষালগ্নে দাঁড়িয়ে নায়করাজ তার নতুন ইচ্ছের কথা জানালেন। বললেন, এ বছর নতুন ছবি নির্মাণের কাজ শুরু করব। সামাজিক বক্তব্য আর পারিবারিক গল্পের ছবি বানাব। আমাদের দেশে সামাজিক সমস্যার অন্ত নেই। এগুলো আমাকে ভীষণ পীড়া দেয়। আজ আর ৫১বর্তী পরিবার দেখি না। নারী নির্যাতন চলছেই। এমন বিষয় নিয়ে মার্চ মাস থেকেই জনসচেতনতামূলক ছবির নির্মাণ কাজ শুরু করব। তার কথায় ‘এখন তো আর শক্তি নেই, বুদ্ধি দিয়ে যদি চলচ্চিত্র, সমাজ আর দেশের মানুষকে বাঁচাতে পারি তাহলেই আমার জীবন পূর্ণতা পাবে।’

দিনটি কীভাবে কাটাবেন, নায়করাজ বলেন, একবারেই পারিবারিকভাবে স্ত্রী, সন্তান আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে আনন্দ আলোয় চারপাশ আলোকিত করতে চাই। বেলা ১১টায় চ্যানেল আইতে তারকা কথন লাইভ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সবার দোয়া চাই, যেন আমার আগামী দিনগুলো সুস্থতা আর সমৃদ্ধিতে ভরে থাকে।

সর্বশেষ খবর