মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অশ্লীলতার বিতর্কে স্পাইস এফএম

রণক ইকরাম

অশ্লীলতার বিতর্কে স্পাইস এফএম

লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে অশ্লীল শব্দ চয়ন, অঙ্গভঙ্গি ও নাচানাচির জন্য সমালোচনার শিকার হয়েছেন রেডিও স্টেশন স্পাইস এফএমের আরজে তাজ। প্রথম ছবিতে শেহতাজের সঙ্গে। পরের ছবিতে লালন নাইটের দিন শ্রাবণ্য তৌহিদার সঙ্গে। ছবি—ফেসবুক

জৌলুস হারানো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি যখন ভিডিও, ইউটিউব আর ইপি অ্যালবাম কালচারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে—তখনই আবার শুরু হলো বিতর্ক। ভিডিওর আধুনিকতার নামে অশ্লীলতার অভিযোগ পুরনো হলেও এবারই প্রথম কোনো এফএম রেডিওর বিরুদ্ধে উঠল এমন অভিযোগ। সম্প্রতি রেডিও স্টেশন স্পাইস এফএম ৯৬.৪-এর অফিশিয়াল পেজ থেকে একটি আনরিলিজড গানের ভিডিও চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর তৈরি হয়েছে ঘোর বিতর্ক। এই ভিডিওটি আসলে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে স্টুডিওর ফেসবুক লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ফসল। এই গানের কথাগুলো এমন— ‘ফুল দিও কলি দিও কাঁটা দিও না, আস্তে আস্তে চুমা দিও কামড় দিও না’। আনরিলিজড ট্র্যাক হিসেবে গানটি ছেড়ে দিয়েই ফেসবুক লাইভে স্টেশনের আরজে তাজ নৃত্যের মতো করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি শুরু করেন। অশ্লীল কথার গানটির সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গিতে নাচতে দেখা যায় আরজে তাজ ও অভিনেত্রী শেহতাজকে। ফেসবুক ইউটিউবে আপলোডেড হওয়ার কারণে দ্রুত ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। অনেকেই ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে এমন ন্যক্কারজনক কাণ্ডের প্রতিবাদ করেন।

অনেকে বলছেন এটি নাকি রেডিও স্পাইসের থিম সং। এমন অশ্লীল কথার গান কী করে একটি গণমাধ্যমের থিম সং হতে পারে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। তবে কেউ কেউ ফেসবুকেই বলছেন এটাই নাকি স্টেশনের পাবলিসিটি স্টান্ট। এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য স্পাইস এফএমের অফিশিয়াল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে ঘটনা কিন্তু কেবল ‘কামড় দিও না’ এর মধ্যেই থেমে থাকেনি। একই ধরনের কুরুচির পরিচয় পাওয়া যায় ১৯ জানুয়ারি প্রচারিত ‘লালন নাইট’ নামের আরেকটি ভিডিওতে। লালন নাইট বলা হলেও সেখানে বাজানো হয়েছে কামাল পাশার লেখা বিখ্যাত গান ‘দিলে কি দয়া হয় না’। এ গানটিতেও তাজকে উত্তেজক পোশাক ও অঙ্গভঙ্গিতে দেখা যায়। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন মডেল-সঞ্চালক শ্রাবণ্য তৌহিদা। ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘কামড় দিও না’র সাফল্যের পর গর্জিয়াস ডিভা আরজে তাজ লালন নাইট উদযাপন করছেন। এই ক্যাপশনে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে যে এ ধরনের মার্কেটিংকে পজিটিভলিই নিয়েছে স্পাইস এফএম। এই ভিডিওগুলো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চলচ্চিত্র পরিচালক হাসিবুর রেজা কল্লোল একটি ভিডিও নিজের ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘তাহারা হাবিয়া দোজখের প্রতিনিধি! একজন আর জে তাজ, অন্যজন শেহতাজ... অনেক মসলাদার তাদের নর্তন-কুর্দন। যেমন গানের কথা, তেমনই তাদের পরিবেশনা। ...তাদের থিম সং কামড় দিও না। ফুল দিও কলি দিও কাঁটা দিও না, আস্তে আস্তে চুমা দিও কামড় দিও না... উদ্ভট এই কথার গানের ভিডিওতে তারা যা করেছেন তা দেখে আমি ভাষাহীন এবং ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছি।’ এর বাইরেও অনেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ও গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়েজী। তারাও এ ধরনের চর্চাকে বাংলা সংস্কৃতির বিরোধী এবং ন্যক্কারজনক বলে মনে করেন।

আকাশ সংস্কৃতির এই যুগে কোনো কিছুই আটকে রাখা যাবে না। তাই বলে এমন প্রকাশ্য বেহায়াপনাকেও কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না। একদিকে সরকার পর্নো সাইট বন্ধ করছে, অন্যদিকে চলছে এমন চর্চা। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

 

গান হচ্ছে মর্যাদার বিষয়। গানের মাধ্যমে মানুষের আত্মমর্যাদা, হৃদয়ের গভীরতা, ভাবনার আকুলতা প্রকাশ পায়। গানের কারণেই বব ডিলান নোবেল পেয়েছেন। গান আজ বিশ্ব মানবতা ও বিশ্ব শান্তির সমকক্ষ হয়ে উঠেছে। আর আমাদের সমাজে গানের ক্ষেত্রে নৈতিক অবক্ষয় ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। নীতি নৈতিকতাহীনতা যেখানে আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে সেখানে গান হওয়া উচিত মানবতামুখী, নৈতিকতামুখী ও জীবনমুখী। গানের নামে অশ্লীলতা, বিকৃতিকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। গানের ক্ষেত্রে সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

     — শহীদুল্লাহ ফরায়েজী

 

 

হঠাৎ করে এ ধরনের বিষয় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা সত্যি দুঃখজনক। আমাদের বাংলা সংস্কৃতির একটি শিকড় আছে। আর আমাদের প্রতিটি মানুষের উচিত তার নিজ নিজ জায়গা থেকে তা রক্ষা করা। আর যদি কেউ হঠাৎ করে আমাদের দেশে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, আমার মনে হয় তা প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে আমাদের আইনের আশ্রয় নিতে হবে।

         — কুমার বিশ্বজিৎ

সর্বশেষ খবর