বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিদেশে দেশি ছবির জয়জয়কার

আলাউদ্দীন মাজিদ

বিদেশে দেশি ছবির জয়জয়কার

দীর্ঘসময় ধরে দেশে যখন চলচ্চিত্রের বেহাল দশা তখন গত কয়েকবছরে বিদেশে দেখা যাচ্ছে ঢাকার ছবির ব্যতিক্রমী চিত্র। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এদেশের ছবি শুধু প্রদর্শনই হচ্ছে না, ঝুলিতে পুরস্কারও পুরে আনছে। বিদেশে এখন শুধু উত্সব নয়, বাণিজ্যিকভাবেও মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশের ছবি।

‘আয়নাবাজি’ ছবিটি দেশের দর্শক মাতিয়ে বিদেশেও আলোড়ন জাগিয়েছে। ছবিটির বিদেশ যাত্রা শুরু ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উত্সবে দো ফিল্ম বাণিজ্যিক বিভাগে প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। মুক্তির এক মাস পর থেকেই ছবিটি প্রদর্শিত হয় কানাডা, প্যারিস, লন্ডন, ইন্ডিয়াতে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল সাউথ এশিয়ান চলচ্চিত্র উত্সবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায় ‘আয়নাবাজি।’

বিদেশে প্রদর্শিত হওয়া দেশের আরেক ছবি ‘অজ্ঞাতনামা’। এ ছবিটিও ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উত্সবে পায় জুরি স্পেশাল মেনশন পুরস্কার। ইতালির গালফ অব ন্যাপলস ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে ছবিটি মনোনীত হয় সেরা ফিকশন হিসেবে।

কসোভোর চলচ্চিত্র উত্সবে সেরা পরিচালক ও সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার ওঠে ‘অজ্ঞাতনামা’র ঘরে। এমনকি অস্কারে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশ থেকে মনোনীত হয় ‘অজ্ঞাতনামা’।

অর্জনের তালিকায় আরও আছে বিজন ইমতিয়াজের ‘মাটির প্রজার দেশে’ এবং আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’। শিকাগোতে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে সেরা হয় ‘মাটির প্রজার দেশে’। আর ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ জিতে নেয় সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে সেরা নির্মাতা ও সেরা অভিনেতার পুরস্কার। একইসঙ্গে এদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রও পিছিয়ে নেই সম্মাননার দৌড়ে। স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘ঘ্রাণ’, ‘কবি স্বামীর মৃত্যুর পর আমার জবানবন্দি’, প্রামাণ্যচিত্র ‘ঝলমলিয়া’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করেছে বাংলাদেশের।

রুবাইয়াত হোসেন নির্মিত ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ ছবিটি ফ্রান্সের ৩৪তম ত্যুস কুউস ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন বিভাগে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়।

আরেক নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন তার  ‘জালালের গল্প’ ছবিটির জন্য তিনি ২০১১ সালে পুসান চলচ্চিত্র উত্সবের এশিয়ান সিনেমা ফান্ড থেকে চিত্রনাট্য উন্নয়নের জন্য অনুদান পান। একই বছর একই উত্সবে এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে অংশ নেন ও সুইডেনের গোটেবোর্গ চলচ্চিত্র উত্সবে সেরা পিচিংয়ের জন্য পুরস্কার পান।

ভারতের মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১৫তম থার্ড আই এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভালে জুরি স্পেশাল মেনশন পুরস্কার অর্জন করেছে তাসমিয়াহ্ আফরিন মৌ পরিচালিত ‘কবি স্বামীর মৃত্যুর পর আমার জবানবন্দি’ বা ‘স্টেইটমেন্ট আফটার মাই পোয়েট হাজবেন্ড’স ডেথ। মুক্তির পর এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো আন্তর্জাতিক উত্সবে প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হলো ছবিটি।

বছরের অন্যতম সফল বাণিজ্যিক ছবি জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘শিকারি’ লাভ করেছে কলকাতা কালাকার অ্যাওয়ার্ডে সেরা ছবির পুরস্কার। ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে মালয়েশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কটি দেশে।

দেশি ছবির এই সাফল্য প্রসঙ্গে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রের ক্রান্তিলগ্নে আমাদের ছবি বিদেশে পুরস্কৃত ও সম্মানিত হচ্ছে এটি নিঃসন্দেহে আমাদের দেশ ও চলচ্চিত্র জগতের জন্য গৌরবের ব্যাপার। তবে ছবিগুলো প্রেরণের আগে তা নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা দরকার। কারণ আমাদের ছবির রয়েছে সমৃদ্ধ অতীত।

শুধু গত বছরই নয়, এর আগেও এ দেশের ছবি সম্মানিত হয়েছে বিদেশের মাটিতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘টেলিভিশন’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’। এই নির্মাতার কথায় আমাদের সিনেমা সম্পর্কে কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। খুব বেশি কিছু যে অর্জিত হয়েছে তাও নয়, গত কয়েক বছরে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে বেশি বেশি ছবি নির্মাণ হওয়ায় এখন আমাদের নিয়ে বিদেশে মনোযোগ বাড়ছে।

শুধু বাংলাদেশের পরিচয়ের জন্য নয়, এ দেশের সিনেমায় নতুন মুভমেন্ট তৈরি হওয়ার যে একটা আলামত দেখা যাচ্ছে, সেটাকে সামনে এগিয়ে নেওয়া জরুরি। কারণ নতুন নির্মাতারা যে ছবিগুলো বানাবে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্য উত্সবের বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর