বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকাই ছবিতে ঝুঁকছেন কলকাতার নায়িকারা

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঢাকাই ছবিতে ঝুঁকছেন কলকাতার নায়িকারা

ঢাকাই ছবিতে ঝুঁকছেন কলকাতার নায়িকারা। শুভশ্রী থেকে শুরু করে কোয়েল মল্লিক পর্যন্ত অর্ধ ডজনেরও বেশি টলিউড নায়িকা অল্প সময়ে যুক্ত হয়েছেন ঢালিউডে। বিষয়টিকে সিনিয়র চলচ্চিত্রকাররা  ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তাদের কথায়, বেশ কয় বছর ধরে কলকাতার ছবির বাজারে মন্দাভাব চলছে। সেখানকার শিল্পীদের হাতে তেমন একটা কাজ নেই। এতে আমাদের এখানে শিল্পী সংকটের অজুহাত দেখিয়ে স্থানীয় কিছু প্রযোজনা সংস্থা কলকাতার নায়িকাদের ঢাকার ছবিতে নিয়ে আসছে। এ বিষয়ে ভিন্নমতও আছে। অনেকে বলছেন, যৌথ প্রযোজনা ছাড়াও দুই বাংলা বা এক দেশের শিল্পী অন্য দেশের ছবিতে অভিনয় করতেই পারেন। এতে ছবির বাজার সম্প্রসারিত হয়।

গত কয়েক বছরে যৌথ প্রযোজনার হাত ধরে কলকাতার নায়িকারা বেশি কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন— শুভশ্রী [আমি শুধু চেয়েছি তোমায়, প্রেম কি বুঝিনি, নবাব], পাওলি দাম [সত্তা], শ্রাবন্তী [শিকারি, বর্তমানে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘তুমি যে আমার’ ছবিতে কাজ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে], কোয়েল মল্লিক [নাম চূড়ান্ত না হওয়া শাকিব খানের বিপরীতে একটি ছবিতে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন] প্রিয়াঙ্কা সরকার [আগামী মাসে নিরবের বিপরীতে ‘হৃদয় জুড়ে’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নেবেন], মিমি চক্রবর্তী [শাকিব-কোয়েলের সঙ্গে দ্বিতীয় নায়িকা হিসেবে থাকার কথা রয়েছে। তা ছাড়া আলমগীরের নির্মিতব্য ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতেও কাজ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে], নুসরাত [ঢাকায় একটি বিজ্ঞাপন ও একটি বিগ বাজেটের মিউজিক ভিডিওতেও কাজ করতে যাচ্ছেন], সায়ন্তিকা [আলমগীরের ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে এই নায়িকারও অভিনয় করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে]।

ঢাকার ছবিতে কলকাতার নায়িকাদের কাজ করা নতুন নয়। সত্তরের দশকে মাসুদ পারভেজ তার ‘এপার ওপার’ ছবির জন্য প্রথম আনেন সোমা মুখার্জিকে। আলমগীর কবীরের ‘সূর্যকন্যা’ ছবিতে অভিনয় করেন জয়শ্রী। আশির দশকে সুনেত্রা আসেন মমতাজ মালীর ‘উছিলা’ ছবিতে। নব্বই দশকে শাবানা’র স্বামী ওয়াহিদ সাদিক  ঋতুপর্ণাকে নিয়ে ‘স্বামী কেন আসামি’ ছবিটি নির্মাণ করেন। ভারতীয় নায়িকা যারা ঢাকার ছবিতে কাজ করেছেন তাদের তালিকা খুব সংক্ষিপ্ত নয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন— শতাব্দী রায়, বনশ্রী, ঝুমুর গাঙ্গুলী, জয়শ্রী কবির, সুনেত্রা, দেবশ্রী, মুনমুন, সন্ধ্যা রায়, আলপনা গোস্বামী, ইন্দ্রানী হালদার, শাবানা আজমী, জয়াপ্রদা, মমতা কুলকার্নি, ভাগ্যশ্রী, নীলম, আয়শা জুলেখা, মনিকা দেবী, প্রিয়াঙ্কা ত্রিবেদী, রাভিনা, মিনা, শিবানী, ঋতুপর্ণা, রচনা ব্যানার্জি, শ্রীলেখা মিত্র, মাহিমা, রিংকু ঘোষ, মিত্র যোশী, মধুমিতা, প্রিয়া, রিয়া সেন প্রমুখ।

ঢাকার ছবিতে কলকাতার নায়িকাদের নিয়মিত অভিনয় করা নিয়ে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।  সিনিয়র নির্মাতাদের কথায়, চলচ্চিত্রের বাজার সম্প্রসারণের নামে ভারতীয় নায়িকা আনার মাধ্যমে ফায়দা লুটছেন এক শ্রেণির অসাধু নির্মাতা। বিনোদনের আড়ালে সাদা হচ্ছে কালো টাকা। ভিনদেশি শিল্পীরা দেশের টাকা নিয়ে যাচ্ছেন ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে। এসব অসাধু কর্মকাণ্ডের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দেশীয় শিল্পীদের ক্যারিয়ার এখন হুমকির মুখে পড়েছে। নির্মাতারা বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রে শিল্পী সংকটের অজুহাত দেখিয়ে শুধু ভারতীয় নায়িকা নয়, নায়কদেরও কাজ করানো হচ্ছে। গত কয়েক বছরে ঢাকার ছবিতে কাজ করেছেন অংকুশ, ওম, সোহম, জিৎ, হিরণসহ অনেকে।

অনেকের কথায়, শুধু অভিনয়শিল্পী নয়, ভারতীয় নির্মাতা, কণ্ঠশিল্পী, ফাইট ও মিউজিক

ডিরেক্টরসহ কলাকুশলীরাও কাজ করছেন ঢাকার ছবিতে। এতে বেকার হয়ে পড়ছেন স্থানীয় সংশ্লিষ্টরা। হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্প।

চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন বলেন, এ ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যের নীতি থাকা দরকার। যাতে কোনো পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যৌথ নির্মাণ বা এক দেশের শিল্পী আরেক দেশের ছবিতে কাজ করবে এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই বলে কারও অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে তা কখনো কাম্য হতে পারে না।

সর্বশেষ খবর