শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঘড়ি ধরে ৫ মিনিট

মঞ্চনাটক ও গান আমার আত্মার আত্মীয়

শিমুল ইউসুফ

পান্থ আফজাল

মঞ্চনাটক ও গান আমার আত্মার আত্মীয়

মঞ্চকুসুম শিমুল ইউসুফ। তিনি একাধারে অভিনয়শিল্পী, সংগীতপরিচালক, কোরিওগ্রাফার, পোশাক পরিকল্পক। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অনবদ্য অবদানের জন্য বারবার প্রশংসিত হয়েছেন, পেয়েছেন নানা সম্মাননা। বর্ণিল এ জীবনে পার করেছেন ষাটটি বসন্ত। এই গুণী শিল্পীর সঙ্গে আলাপচারিতার কিছু অংশ নিয়ে আজকের আয়োজন—

 

গানের জগতে পদার্পণের দিনগুলোর গল্প শুনতে চাই—

আমি গান শুরু করি পাঁচ বছর বয়সে। তখন  রেডিও এবং টেলিভিশনে গান গাইতাম। সে সময় ‘কচি-কাঁচার মেলা’ সংগঠনে গানের অনুষ্ঠানে গান করি। ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে মঞ্চে অভিনয় ও সংগীত জীবন শুরু করি। পরের বছর তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে শিশুশিল্পী হিসেবে আমার আত্মপ্রকাশ। তবে ১৯৬৪ সালে সেই সময়কার পাকিস্তান টেলিভিশনের প্রথম সম্প্রচারের দিনেই শিশুশিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন করেছিলাম।

 

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলো কেমন ছিল?

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় আমার বয়স ছিল মাত্র চৌদ্দ বছর। মুক্তিযুদ্ধের বীভৎস স্মৃতি এখনো আমাকে নাড়া দেয়। এটা ছিল আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সেই বীভৎসতা একদম কাছ থেকে দেখেছি।   সে সময় আমরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের উল্টো দিকে থাকতাম। আমি পিতৃহারা ছিলাম। শহীদ আলতাফ মাহমুদ ছায়া হয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রাতের পর রাত নিরীহ মা-বোনদের ওপর যে পরিমাণ অত্যাচার চালানো হতো সব আমরা শুনতে পেতাম। ভয়ে গুঁটিসুঁটি মেরে থাকতাম। আমরা ঘরে কোনোরকম আলো জ্বালাতে পারতাম না। ছোট ছোট বাতি জ্বালালেও চারপাশে কাগজের আবরণ দিয়ে রাখতে হতো যেন আলো ছড়িয়ে না পড়ে। আলো দেখলেই হানাদার বাহিনী গুলি চালানো শুরু করত। সারাদিন কারফিউ জারি ছিল। সত্যি কথা বলতে, ওই সময়টা যারা দেখেননি তাদের পক্ষে এই বিষয়টি চিন্তা করা কঠিন।

 

থিয়েটারের শুরু—

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে আমি ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেই। এ পর্যন্ত ঢাকা থিয়েটারের ৩৪টি নাটকে অভিনয়শিল্পী, সংগীত পরিচালক, কোরিওগ্রাফার এবং পোশাক পরিকল্পনা, সহযোগী নির্দেশক ও পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজ করেছি।

 

গানের তালিম—

আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ওস্তাদ হেলাল উদ্দিন, পিসি গোমেজ, আলতাফ মাহমুদ এবং আবদুল লতিফের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত গানের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম।

 

এ পর্যন্ত গানের অ্যালবাম—

গণসংগীত, নজরুলসংগীত এবং লালনের গান নিয়ে আমার পাঁচটি একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।

 

স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কোন ক্ষেত্রে?

শিল্পী হিসেবে মঞ্চনাটক ও গান দুটো ব্যাপারই আমার আত্মার খুব নিকটবর্তী। আমি রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চের শিল্পী বলেই নিজেকে আখ্যা দিই। আমি আসলে পুরোপুরিভাবে নিজেকে মঞ্চে নিয়োজিত করেছি। পাশাপাশি শুদ্ধ সংগীতচর্চা অব্যাহত আছে এখনো। দীর্ঘ পাঁচ দশকের জীবনে আমি প্রায় দুই সহস্রাধিক নজরুলসংগীত, গণসংগীত-রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে পরিবেশন করেছি এবং মঞ্চের ৩৩টি নাটকের ষোলো শতাধিক মঞ্চায়নে অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছি।

 

আপনি তো অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন...

আসলে আমার কাছে যেটি সবচেয়ে বেশি মূল্যবান— সেটি হলো মানুষের ভালোবাসা। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের শিশুশিল্পী হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদক, লোকনাট্যদল পদক, বাচসাস পদক, মোহাম্মদ জাকারিয়া পদক, কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি পদক, মানবজমিন পাঠকজরিপসহ কচি-কাঁচা মেলার আজীবন সম্মাননাতেও ভূষিত হয়েছি। বাংলা অভিনয়রীতি বিকাশে এবং শুদ্ধ সংগীতচর্চায় অবদানের জন্য আমি কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন কর্তৃক ‘মঞ্চকুসুম’ উপাধিতেও ভূষিত হয়েছি— এটি আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সর্বশেষ খবর