বৃহস্পতিবারের মধ্য দুপুর। চৈত্রের খরতাপ না থাকলেও এফডিসিতে একজন ঠিকই উত্তাপ ছড়াচ্ছিলেন। ৩ নাম্বার শুটিং ফ্লোরের সামনে জটলা। ফটো সাংবাদিকরা এক নায়িকার জন্য মুখিয়ে আছেন। কে সেই নায়িকা? আমার আগ্রহের পারদটা লতিয়ে উঠছে। দেখা হলো আমাদের ফটো সাংবাদিক সামিরের সঙ্গে। তাকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, ‘ভাইজান মেকআপ রুমে চলেন।’ ভিতরে ঢুকতেই দেখি দুপুরের খাবার খাচ্ছেন মাহি। আমাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন, ‘ভাইয়া খেতে বসেছি তাই সালাম দিতে পারলাম না, কিছু মনে কর না।’ বললাম, না না ঠিক আছে। তোমাকে এ সময় বিরক্ত
করা ঠিক হয়নি। তুমি আগে খেয়ে নাও। তারপর কথা হবে। মাহির হাসিমাখা স্বভাব সুলভ প্রতিউত্তর— আরে কি যে বলো তুমি, আমাদের তো খাওয়া বলো আর ঘুমানো সব সময়ই কথাবার্তা আর কাজের মধ্যেই ডুবে থাকতে হয়। বল কী জানতে চাও। বললাম, অনেকদিন পর তোমাকে এফডিসিতে দেখছি। ও বলল, ঠিক বলেছ ভাইয়া, আসলে এফডিসিতে শুটিং না করলে মনে হয় ছবির কাজ করছি না, অন্য কিছু। এফডিসিতে কাজ করতে অনেক ভালো লাগে। অনেকদিন পর এখানে এসে কাজটাকে খুব উপভোগ করছি। জানতে চাইলাম, কী ছবির কাজ করছ? মাহি জানাল, ‘মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘জান্নাত’ ছবির কাজ করছে। ছবিটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করছে ও। এক মাজারের খাদেমের মেয়ের চরিত্র। এ ধরনের চরিত্রে আগে কাজ করা হয়নি তার। মাহিকে ঘিরেই গল্প গড়িয়েছে। তার কথায় এ ছবিতে দর্শক সমসাময়িক ঘটনার চিত্র দেখতে পেয়ে অন্যরকম ভালোলাগায় ভাসবে। কথায় কথায় বেলা বাড়ল। মাহির খাওয়াও প্রায় শেষ। ওদিকে ক্যামেরাও রেডি। কো-আর্টিস্ট সায়মন অপেক্ষা করছেন। কড়ইতলায় বিশাল সেট পড়েছে। মাহির পাশে বসা তার স্বামীকে দেখিয়ে বলল, ‘ভাইয়া আমার সঙ্গে কিন্তু অপুও [মাহির স্বামী] আছে। ও আমার কাজ দরুণ উপভোগ করছে। ও আমার অনেক বড় ফ্যান।’ শুনে স্মিত হাসলেন অপু। কথার ফুলঝুড়ি শেষ করে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। বের হওয়ার আগে মাহি জানাল ছবির কাজ নিয়ে সে এখন আকাশ-পাতাল ব্যস্ত। আসলেই তাই। গত বছর বিয়ে আর গোপন বিয়ের গুঞ্জনের ধকল আর এর আগে মাহিকে চলচ্চিত্রে আনা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতির কারণে অনেকের ধারণা ছিল তার ফিল্ম ক্যারিয়ার বুঝি ডুবেছে। ঢাকাই চলচ্চিত্রে মাহি পর্বের ইতি ঘটেছে। না, সব ধারণা মিথ্যে করে দিয়ে চলচ্চিত্রের আকাশে আবারও বর্ণিল মাহি ভেসে উঠেছে। চলচ্চিত্রে মাহির দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়েছে। আর এই ইনিংসে এসে আকাশ পাতাল ব্যস্ততায় আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে মাহি। চলচ্চিত্রের উঠোনে এখন আরও প্রখর উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাহি। বিদায়ের আগে মাহি জানাল, ‘ভাই দম ফেলার ফুসরৎ নেই। আধা ডজনেরও বেশি ছবি নিয়ে সমানে দৌড়ের ওপর আছি।’ আসলেই তাই মাহি এখন শুধু দেশি নায়ক নয়, কলকাতার নায়ক বনির বিপরীতেও কাজ করছেন। সুমন ওয়াজেদ পরিচালিত এই ছবির শিরোনাম ‘মনে রেখো’। রোমান্টিক ঘরানার এ ছবির গল্পও তাকে ঘিরে লতিয়েছে। এ ছাড়া পবিত্র প্রেম, প্রেমের বাঁধন, হারজিৎ, পলকে পলকে তোমাকে চাই, ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম, কোর্ট ম্যারেজের মতো বড় মাপের ছবির কাজ নিয়ে এগুচ্ছেন চিত্রাকাশে নতুন করে উত্তাপ ছড়ানো মাহি। মুক্তির প্রহর গুনছে তার ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটি। আর এসব ছবির গল্প মাহিকে ঘিরেই ডালপালা ছড়িয়েছে। মাহির কথায় আশা করছি আগামী ছবিগুলো দর্শক ভালোবাসায় সমানভাবে সিক্ত হবে।
