মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
চলতি বছরে এ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া ১৬টি ছবিই ব্যর্থ

অস্তিত্ব সংকটে ঢাকাই চলচ্চিত্র

আলাউদ্দীন মাজিদ

অস্তিত্ব সংকটে ঢাকাই চলচ্চিত্র

‘ভুবন মাঝি’র দৃশ্যে পরমব্রত ও অপর্ণা। বড় মাপের ব্যবসায়িক সাফল্য না পেলেও প্রশংসিত হয়েছে

ঢাকাই ছবিতে শনিরদশা লেগেছে। এটি অবশ্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। নব্বই দশকের শেষভাগ থেকেই এই ভগ্নদশা চলছে। একদিকে ছবি মুক্তির সংখ্যা কমছে অন্যদিকে যাও মুক্তি পাচ্ছে তা মুখ থুবড়ে পড়ছে। চলতি বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। শুক্রবার পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ১৬টি ছবি। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এর একটি ছবিও ব্যবসায়িক আনুকূল্য পায়নি। এ নিয়ে চলচ্চিত্রকারদের হতাশা বাড়ছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আরও শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় চলচ্চিত্রকাররা হতাশা ব্যক্ত করে বলছেন আমাদের এই ব্যর্থতার সুযোগে কলকাতা এখন এ দেশে তাদের বাজার তৈরির বিষয়টি প্রায় পাকা করে ফেলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে— মাস্তান ও পুলিশ, ভ্রান্তি, কত স্বপ্ন কত আশা, তুখোড়, যে গল্পে ভালোবাসা নেই, ভালোবাসা এমনই হয়, মাস্তানি, প্রেমী ও প্রেমী, ভুবন মাঝি, শেষ চুম্বন, সত্যিকারের মানুষ, মিসড কল, ভালোবাসা ষোলো আনা, তোমাকে চাই [কলকাতার], ক্রাইম রোড এবং শূন্য। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির মতে এই ১৬টি ছবির মধ্যে একমাত্র ‘ভুবন মাঝি’ ছবিটি দর্শক নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এটি বড় মাপের ব্যবসায়িক আনুকূল্য না পেলেও দর্শক প্রশংসিত হয়েছে। বাকি ১৫টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ছবির অভাবে সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে। এটি পুরনো খবর। এ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা বা সংশ্লিষ্ট কারও কোনো উদ্যোগ নেই। আর এই সুযোগে কয়েকটি মহল একদিকে নিয়মনীতি বিহীন যৌথ প্রযোজনার নামে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে ভারতীয় ছবি আমদানি করছে। আর এখন নতুনভাবে কলকাতার প্রযোজনা সংস্থা এ দেশের জন্য ছবি নির্মাণ করার সুযোগ পেয়ে গেছে। এটি আমাদের দেশীয় শিল্পের জন্য হুমকি ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিনেমাহল বন্ধ রোধে ২০১০ সালে প্রদর্শক সমিতিই প্রথম ভারতীয় ছবি আমদানি করতে চেয়েছে। স্থানীয় কিছু চলচ্চিত্রকার তখন অবিবেচনা প্রসূতভাবে এফডিসির ভিতরে এমন কিছু কর্মকাণ্ড করে যা এখন অর্থহীন বলে প্রমাণ হচ্ছে। এখন কলকাতার ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ডাইরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্টের অধীনে বাংলাদেশের জন্য ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এতে আইনের কোনো বাধা না থাকলেও চলচ্চিত্রের মতো একটি প্রধান গণমাধ্যমের অস্তিত্ব এবং স্বার্থ ভূলণ্ঠিত হবে। আমদানি রপ্তানির আওতায় আমরা যখন আটটি ছবি কলকাতায় রপ্তানি করেছিলাম তখন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার শ্রীকান্ত মেহতা ইমপার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাদের ছবিগুলো সেখানে মুক্তিদানে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করেছিল। তার আশঙ্কা ছিল সেখানে যদি বাংলাদেশের ছবির বাজার তৈরি হয় তাহলে তাদের ছবির বাজার হারাবে। আজ এই শ্রীকান্ত মেহেতাই বাংলাদেশে কলকাতার বাজার তৈরির পথ করে নিয়েছেন। আর যারা এতদিন ভারতীয় ছবি আমদানির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন তারাও আজ রহস্যজনক কারণে মুখে কুলপ এঁটেছেন।  

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, আমাদের ছবির বাজার খুবই মন্দাবস্থায় আছে। এমন মুহূর্তে সরকারের বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতির আওতায় ভারত এ দেশের জন্য ছবি নির্মাণ করছে। বিষয়টি কতটা লাভ অথবা ক্ষতিকর তা ওই ছবি মুক্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে অন্য কোনো দেশকে এ দেশে তাদের ছবির একচেটিয়া বাজার তৈরি করতে দেওয়া যাবে না। চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান বলেন, অতীতেও আমরা কোনো অন্যায় আবদার মেনে নেইনি। ভবিষ্যতেও নেব না। আমি সিনিয়র চলচ্চিত্রকারদের অনুরোধ করব তারা যেন দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে এই অচলাবস্থার হাত থেকে উদ্ধারে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসেন।

সর্বশেষ খবর