শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইউটিউব ‘ভিউ’ই কি সব?

আলী আফতাব

ইউটিউব ‘ভিউ’ই কি সব?

ইমরান - মিনার

বর্তমান সময়ে ঘরোয়া বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইউটিউব। গান, মিউজিক ভিডিও, সিনেমা ও নাটক এখন হরহামেশাই পাওয়া যাচ্ছে ইউটিউবে। গান শোনার জন্য প্রথম মাধ্যম হয়ে আসে গ্রামোফোন। তারপর রেডিওতে সবাই গান শুনত। তারপর শোনার জায়গায় ধীরে ধীরে আসন গাড়ে ৪৫ আরপিএমের লং প্লে। এরপর ১৮ ইঞ্চির রেকর্ড। তারপর এসেছে অডিও ক্যাসেট। এখন সময় বদলে গেছে। গান শোনা বা গানের ভিডিও দেখার জন্য ডিভিডি প্লেয়ার, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ কম্পিউটার ঘরের দেওয়ালে ঝুলে থাকা টেলিভিশন ও স্মার্টফোনকে বেছে নিয়েছেন সবাই। শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই চলে। ইউটিউবে শুধু একবার ঢুঁ মেরে সবাই নিজের পছন্দের শিল্পীর গান শোনা ও ভিডিও দেখার কাজ করে নিচ্ছেন খুব সহজে। ২০০০ সালের পর গান শোনার মাধ্যম হিসেবে এলসিডি। সিডি-ডিভিডির যুগ এখনো আছে ঠিকই, কিন্তু শিল্পী বা প্রতিষ্ঠান কাউকে সিডি প্রকাশে খুব একটা আগ্রহী হতে দেখা যায় না। শিল্পীরা বেশি মনোযোগী তাদের সৃষ্টিতে। অনেকে তো নিজের ঘরেই বানিয়ে নিয়েছেন স্টুডিও। সেখানে বসে তারা মনের আনন্দে গান তৈরি করছেন। কখনো স্টুডিও ভার্সন ভিডিও বানিয়ে তা ছেড়ে দিচ্ছেন ইউটিউবে আর মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশ ও দেশের বাইরে বাংলা গানের শ্রোতা ও দর্শকদের কাছে। এসব গান দেখা হচ্ছে, শোনা হচ্ছে হাজার, লাখ এমনকি কোটি বারও। আর সম্প্রতি কোটি ভিউ’র খেতাব নিয়ে মিডিয়াতে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছেন এ প্রজন্মের দুই কণ্ঠশিল্পী ইমরান ও মিনার। ইউটিউবে মিনার ও ইমরানের দুটি গান দেখা হয়েছে এক কোটিবারের বেশি। সেই হিসেবে বলা যায়, ‘কোটিপতি’ গায়ক তারা। অন্য সব গান ছাড়িয়ে কীভাবে সম্ভব হলো এটি? জানতে চাইলে মিনার বলেন, ‘আমার ঝুম গানটি ২০১৬ সালের ১৬ জুন গানচিলের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়।  তারপর বছর না ঘুরতেই সেটি কোটি পার হয়েছে। আসলে এ গানটি কেন এত জনপ্রিয় হলো সেটা কোটিবার দেখা দর্শকই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার কাছে যেটা মনে হয়। গানের শিরোনাম ‘ঝুম’ এই শব্দ দিয়ে একজন মানুষের যাবতীয় আবেগ অনুভূতি বোঝানো যায়। এ কারণেই সবাই গানটি পছন্দ করছেন, দেখছেন। আমি বলব দিন শেষে গান শোনারই বিষয়। ভালো লাগলে মানুষ শুনবেই। ঝুমের বেলায় এটাই ঘটেছে।’ এদিকে কোটি ঘরে হ্যাটট্রিক করেছেন ইমরান। কোটির ঘরে তার যাত্রা শুরু হয় ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ গানের মধ্য দিয়ে। শফিক তুহিনের কথায় গানটি গাওয়ার পাশাপাশি এর সুর-সংগীত করেছেন ইমরান নিজেই। আর অন্য গানটি হলো কবির বকুলের কথায় শওকত আলী ইমনের সুরে ‘বসগিরি’ ছবির ‘দিল দিল দিল’ গানটি। আর সম্প্রতি যে গানটি কোটির গণ্ডি পার করেছে সেটা হলো স্নেহাশীষ ঘোষের লেখা ইমরানের গাওয়া সুর ও সংগীত করা ‘ফিরে আসো না’। ইমরান বলেন,‘ যেদিন আমার প্রথম গানটি এক কোটি পূর্ণ হয়, সেদিনের অনুভূতিটা বোঝাতে পারব না। আমার জানা মতে, এর আগে কোনো গান এক কোটির মাইলফলক ছুঁতে পারেনি। তাই কোটির ঘরে পৌঁছানোর প্রথম অনুভূতিটা ছিল একটু অন্য রকম। তারপর আমার আরও দুটি গান কোটির গণ্ডি পার হয়। দর্শক-শ্রোতাদের এমন ভালোবাসা সামনে আমাকে আরও ভালো কাজ করতে সাহায্য করবে।’ কিন্তু জনপ্রিয়তার এই মানদণ্ড নিয়ে অনেক সিনিয়র শিল্পীর মনে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। তারা মনে করেন একমাত্র ইউটিউভ ভিউ দিয়ে কোনো দিন জনপ্রিয়তার বিচার করা যায় না। তাদের কথায়, দেশে এমন অনেক শিল্পী আছে যার ইউটিউবে কোনো গানই নেই। কিন্তু তাদের কিছু গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। যারা শুধু ইউটিউব ভিউ নিয়ে নিজের জনপ্রিয়তার বিচার করবে তারা পিছিয়ে পড়বে। গান বোস্ট করে ভিউ বাড়ানো যায় কিন্তু জনপ্রিয়তা অন্য বিষয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর