বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

দর্শক কাঁদাল ‘সত্তা’

আলাউদ্দীন মাজিদ

দর্শক কাঁদাল ‘সত্তা’

সত্তা ছবিতে শাকিব ও পাওলি

‘না জানি কোন অপরাধে দিলা এমন জীবন, আমারে পুড়াইতে তোমার এত আয়োজন, আমারে ডুবাইতে তোমার এত আয়োজন’— সত্তা ছবিতে এই বিরহের গানটি গাইলেন মমতাজ। এই কান্না আর অভিযোগ একজন নারীর। যে নারী একজন মা, মেয়ে, স্ত্রী, বোন কিংবা প্রেমিকা। নারী মানেই মায়ের জাত। যিনি শ্রদ্ধা আর সম্মানের আসনে আসীন থাকবেন। আর এই নারীকেই যদি নিয়মের বিপরীতে হাঁটা পরিস্থিতি আর পরিবেশের নিষ্ঠুর জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে পতিতায় পরিণত হতে হয় তাহলে এ লজ্জা কার? এমন অনেক বাস্তব প্রশ্নের মুখে দর্শকদের ঠেলে দিয়েছে সোহানী হোসেনের গল্প নিয়ে হাসিবুর রেজা কল্লোল নির্মিত ছবি ‘সত্তা’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্টার সিনেপ্লেক্সে বসেছিল এই ছবির প্রিমিয়ারের জমজমাট আসর। ছবিটি দেখতে আসেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ছবির গল্পকার সোহানী হোসেন, চিত্রনাট্যকার ফেরদৌস হাসান রানাসহ আরও অনেক গুণীজন। একই সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তর আর পেশার মানুষ যোগ দেন এতে। কখনো করতালি, কখনো হাসি কখনোবা আবার কান্নায় গভীর মনোযোগে দর্শক ছবিটি শুধু দেখেনি, ছবি শেষে তাদের দুই চোখ ভরেছে বিরহের অশ্রুতে।

 

 

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ছুটে এসে নির্মাতা কল্লোলকে জড়িয়ে ধরে যখন অসাধারণ একটি সৃষ্টি উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন তখন তার চোখে ছিল অশ্রুর বন্যা। এমন অবস্থা সব দর্শকের। প্রিমিয়ারের শুরুতে নির্মাতা কল্লোল তার বক্তব্যে বলেন, ‘সোহানী আপা একদিন আমাকে ডেকে তার ‘মা’ গল্পটি আর অর্থ দিয়ে ছবিটি নির্মাণের গুরুদায়িত্ব আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমি জানি না আপার এই টাকা জলে গেল কিনা।’ ছবিটি দেখার পর সোহানী হোসেনের কথায়, ‘টাকা জলে যায়নি বরং কল্লোল তার অসাধারণ নির্মাণ দিয়ে দর্শকের চোখে জলের বন্যা বয়ে দিয়েছেন। এখানেই সত্তা এবং নির্মাতার সার্থকতা।’ নির্মাতা হিসেবে কল্লোল বাণী আর বিনোদনের নির্ভুল যোগ অঙ্ক কষে শুদ্ধ ফলাফল তুলে দিয়েছেন দর্শকের হাতে। আমাদের সমাজ এখন মাদকের ভয়াবহতা আর নানা অনিয়মের চরম ঘোরটোপে বন্দী। এই বন্দীদশা থেকে সমাজকে উদ্ধারে ছবির নায়ক অসহায়, গাঁজাসেবী শাকিব একসময় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। তিনি তার সপ্রতিভ চরিত্রচিত্রণে আবারও প্রমাণ করে দিলেন ঢালিউডে কিং খান শুধু একজনই। এই ছবিতে দর্শকের সামনে পাওলি দাম তার বলিউড বা টালিউডের চরিত্র আর চেহারা বদলে দিলেন। পুরো ছবিতে দর্শক একজন অসহায় নির্যাতিতা শিখাকেই খুঁজে পেলেন, পাওলিকে নয়। নিজেকে ডিঙিয়ে চরিত্রে মিশে যাওয়ার সক্ষমতা দেখালেন পাওলি। ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম কি দোষ দিবি তাতে, বন্ধু তোরে খুঁজে বেড়াই সকাল দুপুর রাতে...’ সোহানী হোসেনের লেখা আর জেমসের গাওয়া এই গানটি দর্শকের হৃদয়কে বিগলিত করে ছেড়েছে। পাওলি দাম প্রিমিয়ারে আসতে না পারলেও ফেসবুক লাইভে জানালেন ‘সত্তা’র জন্য কান্না দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হবে দর্শককে। তিনি বলেন, ছবিতে জেমসের গাওয়া গানটি তার এতটাই মনে ধরেছে যে, সারাক্ষণ শুধু গুনগুনিয়ে যান তিনি। প্রিয় মানুষদের ডেকেও শোনান। ছবিতে পাওলির বাবা জয়ন্তের মুখে উচ্চারিত ‘ঢাকা শুধু ভোগের শহর’ কিংবা ডাক্তারের কাছে ক্ষুধার্ত শিখারূপি পাওলির আকুতি ‘আমাকে গরম ভাত আর লবণ দেন’ এমন সংলাপ শুধু দর্শকদের কাঁদায়নি, কঠিন ভাবনায় ডুবিয়েছে। আর সবই সম্ভব হয়েছে সোহানী হোসেন আর কল্লোলের ‘সত্তা’য়। ৭ এপ্রিল মুক্তি পাবে ছবিটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর