সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

সেই ‘ক্ষুদে গানরাজ’রা এখন...

সেই ‘ক্ষুদে গানরাজ’রা এখন...

সক্ষুদে গানরাজ’ প্রতিযোগিতার প্রথম আসর বসে ২০০৮ সালে। সেই আসরে বিজয়ী হয় জুয়েল রানা। ২০০৯ সালে  বিজয়ের মুকুট পরে প্রান্তি। ২০১১ সালে মুন্না, ২০১২ সালে মালিহা এবং ২০১৫ সালে পুষ্পিতা এ প্রতিযোগিতার সেরার স্বীকৃতি পায়। ক্ষুদে গানরাজের মুকুট প্রাপ্তির পর কোথাও তেমনভাবে দেখা মিলছে না এই বিজয়দের। বর্তমানে ক্ষুদে গানরাজদের হালচাল তুলে ধরছেন—  আলী আফতাব

 

মো. জুয়েল রানা

দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. জুয়েল রানা ২০০৮ সালে জিতে নেয় ক্ষুদে গানরাজের মুকুট। তারপর বেশ কিছু সময় স্টেজশো ও টিভি অনুষ্ঠানে দেখা গেলেও এখন তেমন কোনো অনুষ্ঠান বা টিভিতে দেখা মেলে না তার। ক্ষুদে গানরাজে জুয়েলের গাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে—সেই তুমি, একদিন ঘুম ভেঙে দেখি, সবুজের বুকে লাল, মা তুমি আমার আগে যেও না, গান গাই আমার মনরে বুঝাই, গ্রামের নওজোয়ান প্রভৃতি। বর্তমান ব্যস্ততা প্রসঙ্গে জুয়েল রানা বলেন, ‘বর্তমানে আমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত আছি। পাশাপাশি গানের চর্চাও চলছে। যেহেতু আমার সামর্থ্য নেই বড় কোনো ওস্তাদের কাছে গান শেখার, তাই পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেই চেষ্টা করছি ভালো শিল্পী হয়ে উঠতে।

 

প্রান্তি

২০০৯ সালে ‘ক্ষুদে গানারাজ’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছে নুসরাত জুহুরী প্রান্তি। বর্তমানে তিনি এসএসসি পরীক্ষার ছাত্রী। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় এই মুকুট পরেছিল সে। দুই বছরের মাথায় গানচিল থেকে আসে তার প্রথম একক ‘প্রান্তির স্বপ্নগুলো’। মূলত শিশুতোষ গান দিয়ে অ্যালবামটি সাজানো হয়। একই বছর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে লাইফবয়ের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। এরপর পড়াশোনার পাশাপাশি চলতে থাকে টিভি অনুষ্ঠান আর স্টেজশো। ‘ক্ষুদে গানরাজ’ প্রতিযোগিতায় প্রান্তির বিচারক ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওন। দুজনই প্রান্তির কণ্ঠ খুব পছন্দ করতেন। হুমায়ূন আহমেদ তার ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র ‘মালা’ (ঘেটুর আপন বোন) চরিত্রে অভিয়ের জন্য প্রান্তিকে বেছে নেন। ছবির ‘শুয়া উড়িল রে’ (করুণ সুরে) গানটির গায়িকাও প্রান্তি। গান-অভিনয় দুটিই প্রশংসিত হয়। তাহের শিপনের ধারাবাহিক ‘এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’-এ ‘টিয়া’ চরিত্রে অভিনয় করেও পরিচিতি পায় প্রান্তি। এ ছাড়া ‘ছুঁয়ে দিলে মন’, ‘আকাশ কত দূরে’, ‘ছেলেটি’ প্রভৃতি ছবিতেও শোনা গেছে প্রান্তির কণ্ঠ। প্রায় ১০টি জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়েছে। আপাতত পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। এসএসসির পর নতুন অ্যালবাম করার পরিকল্পনা আছে।’

 

মাসুদ রানা মুন্না

জন্মের পর থেকেই ছেলেকে গানের শিল্পী বানানোর স্বপ্ন দেখতেন বাবা। সেই স্বপ্ন নিয়ে মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সে ছেলেকে তুলে দেন গ্রামের নামকরা বাউল সাধক ওস্তাদ সফি মণ্ডলের হাতে। ২০১১ সালে মুন্না যখন এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় তখন সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বর্তমানে ঢাকার ক্যামব্রিয়ান স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। এই সময়টায় কোনো একক অ্যালবামের কাজ না করলেও বিভিন্ন আয়োজনে কয়েকটি গানে কণ্ঠ দিয়েছে মুন্না। একুশে টেলিভিশন প্রযোজিত ‘অন্ধ নিরাঙ্গম’ ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাকও হয়েছে মুন্নার। ছবির ‘তুমি দেখা দিও ওগো রাসুল’ গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি অভিনয়ও করেছে। অভিনয় এবং গান দুটিই প্রশংসিত হয়। এ ছাড়া সে আরও একাধিক ছবির গানে কণ্ঠ দিয়েছে।

মুন্না বলে, ‘গানের জন্য মানুষ আমাকে চিনেছে সত্য। কিন্তু এখন তো আমার পড়াশোনার সময়। আর তাই গানে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ নেই। পড়াশোনার ফাঁকে যেটুকু সময় পাই গান করি।’ মুন্না আরও বলে, ‘হোস্টেল থেকে লেখাপড়া করছি। ফলে অনেক নিয়মের মধ্যে চলতে হয়। গান নিয়ে পড়ে থাকার সময় নেই। আগামী বছর ওস্তাদ সফি মণ্ডলের সঙ্গে গানে কণ্ঠ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’

 

ফাইরুজ মালিহা

আন্তর্জাতিক মানের সংগীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন বুনছে সদ্য ‘ক্ষুদে গানরাজ’ ফাইরুজ মালিহা। মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের চতুর্থ আসরের বিজয়ী সে। শান্ত স্বভাবের খুলনার এই মেয়ের চোখে এখন হাজারো স্বপ্ন। মালিহা বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই গান শিখছি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘দরিয়া’ শিরোনামের একটি সলো গান প্রকাশ করি। সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করছি। এ ছাড়া নতুন একটি অ্যালবামের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরই মধ্যে গান সংগ্রহের কাজ চলছে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য শিল্পীদের গান নিয়মিত শুনি। আমি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা গানকে তুলে ধরতে চাই।’ গানের পাশাপাশি মালিহা বেশ ভালো নাচেও সমান পারদর্শী।

 

নুজহাত সাবিহা পুষ্পিতা

২০১৫ সালে চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের সেরাদের দৌড়ে এগিয়ে যায় পুষ্পিতা। সারা দেশের ৬৫ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে তিনি জিতে নেন বিজয়ীর মুকুট। বর্তমানে তিনি ব্যস্ত আছেন প্রচার চলতি ক্ষুদে গানরাজের উপস্থাপনা নিয়ে। এ প্রসঙ্গে পুষ্পিতা বলেন, আমি বরাবরই চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দেওয়ার। এখনো ওস্তাদজিরা যেভাবে বলেন, আমি সেভাবেই গাওয়ার চেষ্টা করি। সবার দোয়া থাকলে আমি আমার লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট হবই। এ ছাড়া বর্তমানে তিনি নজরুল, আধুনিক ও ক্লাসিক্যাল গানের তালিম নিচ্ছেন। আর এবারের ক্ষুদে গানরাজের আসর শেষ হলে নতুন একক অ্যালবামের কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর