রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

যেখানে অমর লাকী আখন্দ

আলী আফতাব

যেখানে অমর লাকী আখন্দ

শিল্পীর কোনো দিন মৃত্যু হয় না। শিল্পী বেঁচে থাকে তার আপন কর্মকাণ্ড দিয়ে। আর সেই শিল্পী যদি হয় সদ্য প্রয়াত সুরস্রষ্টা লাকী আখন্দ, তবে তো আর কোনো কথাই নেই। অনেক শ্রোতাপ্রিয়, জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের গায়ক, গীতিকার ও সুরকার। এক জীবনে গেয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। এসব গানের মাঝে একটি গান তার মার খুব পছন্দের ছিল। সেই প্রিয় গানটি ছিল ‘তুমি কে বলো না’। ১৯৯৯ সালে গানটি রেকর্ড করা হলেও পরে তা কোনো অ্যালবামে প্রকাশ করা হয়নি। এ গানটি গাওয়ার জন্য মার কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন এ অতৃপ্ত সুরস্রষ্টা। এ তো গেল একটি গানের কথা। এমন অনেক গান আছে যেগুলো এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া শেষ সাক্ষাৎকারে লাকী আখন্দ বলেছিলেন, ‘আমার কাছে এখনো বেশকিছু গান আছে। যেগুলো আমি আমার নিজের সন্তানের মতো আগলে রেখেছি। অনেক ইচ্ছা ছিল কলকাতার শিল্পীদের দিয়ে এই গানগুলো গাওয়াব। সেই তালিকায় ছিলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, অঞ্জন দত্ত, শ্রীকান্ত আচার্য, নচিকেতা, শুভমিতা ব্যানার্জি ও ইন্দ্রানী সেন। মধু মুখার্জির সঙ্গেও সংগীতায়োজন নিয়ে একাধিকবার কথা বলেছিলেন তিনি। কথা ছিল তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে গানগুলো করাবেন।’ লাকী আখন্দের সেই ইচ্ছা কী অপূর্ণই রয়ে যাবে। তা আমরা জানি না। কিন্তু তিনি এক জীবনে যে গান করে গিয়েছেন তাই তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন কোটি বছর। লাকী আখন্দের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে— ‘এই নীল মণিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘মামনিয়া, ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’, ‘কী করে বললে তুমি’, ‘ভালোবেসে চলে যেও না’ প্রভৃতি।

গুণী এই সংগীতজ্ঞ অনেক দিন ধরেই মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে কেমোথেরাপি নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছিল তার। ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ দেশে ফেরেন। একই বছরের জুনে আবারও থেরাপির জন্য ব্যাংকক যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পরে আর তার সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি এ শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারে ভর্তি করা হয়। তিনি সেখানে অধ্যাপক নেজামুদ্দিন আহমেদের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দুই মাসেরও বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সম্প্রতি আরমানিটোলার নিজ বাসায় ফেরেন। কিন্তু দুই দিন কাটতে না কাটতেই আমাদের সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এ শিল্পী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর