শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শাকিব খান

“পলিটিক্স করে ফিল্মের তারকা হওয়া যায় না”

“পলিটিক্স করে ফিল্মের তারকা হওয়া যায় না”

ব্যক্তিগত জীবন, পরিচালক সমিতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও পরে সেটির অবসান, সর্বশেষ শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন রাতের বেলার ঘটনা এবং অসুস্থতার কারণে অনেক দিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। এসব বিষয় নিয়ে শাকিব ভক্তদের অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক প্রশ্ন। এসব নিয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাকিব খান মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন শোবিজের বিভাগীয় সম্পাদক রণক ইকরাম-এর। বলেছেন অনেক না বলা কথা। সেই কথোপকথনের চুম্বকাংশ নিয়েই এ আয়োজন।

 

আপনার অসুস্থতা নিয়ে ভক্তরা উদ্বিগ্ন। ডাক্তার কী বলছেন?

আসলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি বেশ ভালোই আছি।

 

তার মানে আপনি কি খানিকটা বিশ্রামের জন্যই হাসপাতালে এসেছেন?

না... না... (হাসি)। বিশ্রামের জন্য কেউ হাসপাতালে আসে নাকি! ওষুধ চলছে। নিয়ম মেনে খাবার খেতে হচ্ছে। মূল ব্যাপার হচ্ছে, প্রতি বছর আমি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যাই। ওখানে মেডিকেল চেকআপের পাশাপাশি ডা. ইয়ানিং-এর তত্ত্বাবধানে রেগুলার একটা ট্রিটমেন্ট করাই। খাবার-দাবারে অনিয়মের কারণে এসিডিটি হয়। সাধারণভাবে যেটাকে গ্যাসের সমস্যা বলে আর কী। ওটার জন্য বছরে একবার যেতে হয় আমাকে। প্রথম গিয়েছিলাম ৭/৮ বছর আগে। এরপর থেকে প্রতি বছর অন্তত একবার যাই। ব্যস্ততার কারণে এর মধ্যে আর যাওয়া হয়নি। এ কয়দিন বেশ অনিয়ম হয়েছে। স্ট্রেসও গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি।

 

কতদিন থাকতে হবে এখানে?

এই দুয়েকদিনের মধ্যেই বাসায় চলে যাব। এখন অনেকটাই সুস্থ বোধ করছি।

 

অসুস্থতার কারণে কি কাজে প্রভাব পড়বে?

এখন আপাতত সুস্থ বোধ করছি। আশা করছি শিগগিরই কাজে ফিরব। আমি কাজপাগল মানুষ। কাজের ক্ষেত্রে রোগ-শোক আমাকে খুব একটা আটকাতে পারে না। তাই খুব একটা সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না।

 

আদালতের নির্দেশে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। কীভাবে দেখছেন?

দেখুন আদালতের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মন্তব্য না করাই উত্তম। তবে এটা নিশ্চিত বিএফডিসির ইতিহাসে এ ধরনের নির্বাচন আগে কখনো হয়নি। একটা পেশাজীবী সংগঠন যারা কিনা চলচ্চিত্রের শিল্পী তাদের ইলেকশনে এত বৈরিতা কোনোভাবেই মানায় না। ফলাফল নিয়েও এমন সব গোঁজামিল সত্যি আমি ভীষণ হতাশ।

তার মানে আপনি বলতে চান এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ একটি নির্বাচন?

আপনি পর্যায়ক্রমিক ঘটনাগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। প্রথমে নির্বাচনের ভোট গণনায় এত বেশি বিলম্ব হলো। সংগঠনের বর্তমান সভাপতি হিসেবে সেদিন রাতে আমি এর সম্পর্কে জানতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছি। আঠারো-বিশ বছরের ফিল্ম ক্যারিয়ারে এমন দিন আসবে কল্পনা করিনি। আমার কথা বাদ দিন। নির্বাচনের ফলাফল দেখুন। আপিল করার পর ফল বদলে গেল। যে সুশান্ত চতুর্থ ছিল সে ফেল করল। আবার নানা শাহ যিনি পাসের তালিকাতেই ছিলেন না, তিনি নির্বাচিত হলেন এমন গোঁজামিলকে কী বলবেন? ক্যালকুলেটরে সমস্যার মতো হাস্যকর কারণ কীভাবে গ্রহণযোগ্য হয়? বাপ্পারাজ, নূতনের মতো ক্যান্ডিডেট ফেল করেছেন। কী আর বলব? আর দেখুন আদালতের নিষেধাজ্ঞার আগে ওরা শপথের ডেট পর্যন্ত ঘোষণা করেছে। অথচ আমাকে কিছু জানানো হয়নি। সভাপতি ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তর করবে কে? ওদের এত তাড়াহুড়ো কেন? আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে যাবতীয় হিসাব-ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে হয়। সে ব্যাপারে আমার সঙ্গে কারও কোনো কথাই হলো না। এসবের মানে কী?

 

কেউ কেউ বলেছেন সেদিন রাতে আপনি মদ্যপ ছিলেন। ফলাফলকে প্রভাবিত করতেই সেখানে গিয়েছিলেন।

কী অদ্ভুত! (ক্রোধমিশ্রিত হাসি)। আমিও শুনেছি। কিন্তু এখানে স্পষ্ট বলতে চাই গত কদিন থেকেই আমি অসুস্থ। রাতে ঘুমের ওষুধ খাই। সেদিনও খেয়েছিলাম। কিন্তু তার পরপরই ভোট গণনায় বিলম্ব এবং নির্বাচন নিয়ে আমার কাছে ফোন আসে। আমি সহজভাবে বেরিয়ে পড়ি। কারণ এফডিসি আমার নিজের ঘর। এখানে যেতে হলে এত ভাবতে হবে কেন? আর ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত আমি যেহেতু সভাপতি তাই আমার দায়িত্বও ছিল। সে কারণেই আমি সেখানে গেছি। কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রির কিছু লোক বহিরাগতদের দিয়ে আমাকে আঘাতের চেষ্টা করেছে। পিস্তল ঠেকিয়েছে। আসলে কারা ফলাফলকে প্রভাবিত করতে চেয়েছে এখান থেকেই স্পষ্ট। আমি তো বহিরাগত ছেলে-পুলে কিংবা কাউকে নিয়ে এফডিসিতে যাইনি। আর ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টা থাকলে আমি সেখানেই থাকতাম। ক্ষমতার প্রতি লোভ থাকলে আমি নিজেই নির্বাচন করতাম।

 

আপনি নির্বাচন করেননি কেন?

কারণ আছে। আসলে আমি এত ব্যস্ত থাকি যে সমিতিতে সময় দিতে পারি না। এরপরও সমিতির দায়িত্ব নিয়ে সমিতির অফিস ঘর থেকে শুরু করে যা যা করণীয়- করার চেষ্টা করেছি। আমি চেয়েছি নতুনভাবে শিল্পী সমিতি ঘুরে দাঁড়াক। নেতৃত্বের ব্যাপারে আমার কোনো মোহ নেই। পলিটিক্স করে আর যাই হোক ফিল্মের তারকা হওয়া যায় না। এটা একটা পারফর্মিং আর্টস। এখানে পরফরম্যান্সই বড় কথা। আমার কথা বাদ দিন। শাহরুখ-সালমান-আমিররা কী পলিটিক্স দিয়ে টিকে আছেন? মানুষের ভালোবাসা আর নিজের কাজটাই আসল। আমি জানি কাল যখন শাকিবের ছবি চলবে না, তখন আর কেউ শাকিবকে সিনেমায় নেবে না। এটাই সত্য।

 

নিরাপত্তাহীনতার কারণে থানায় অভিযোগ করেছেন। কী ধরনের নিরাপত্তাহীনতা?

আমি একজন শিল্পী। তাই বলতে ভীষণ লজ্জা হচ্ছে। তবুু বলতে হবে। কারণ আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি নিরুপায় হয়ে থানায় অভিযোগ করেছি। আর সেদিনের এফডিসির ঘটনাই প্রমাণ করে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্তের ব্যাপারটা কেবল আমার মুখের কথা নয়। এটা সত্যি একটা বড় হুমকি। আর এটার কারণেই নিরাপত্তাহীনতা।

 

কাজের কথায় আসি। ঈদের ছবি কি আসছে। নবাব-অহংকার-রাজনীতি-রংবাজ। অনেক নাম শোনা যাচ্ছে।

এত্তোগুলো হওয়ার কথা না। আমি মনে করি, উৎসবের সিনেমাগুলো স্পেশাল হওয়া উচিত। এখন তো মনে হচ্ছে ঈদের ছবি নিয়ে ডিড করে রাখতে হবে। আমার হিসেবে তো নবাব আর রংবাজ ঈদের ছবি। রংবাজ-এ রনির নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটা সমস্যা থেকে গেছে। আশা করছি খুব দ্রুত সেটার সমাধান হবে। আর অন্য ছবিগুলো ঈদে আসার কথা নয়। এখন কী হয় দেখা যাক।

 

আপনার নিজের প্রোডাকশনের কী খবর? অনেকে বলছেন রংবাজ নাকি আপনার নিজের প্রোডাকশন?

না না। আমার প্রোডাকশন কেন হবে? ওখানে নাম আছে তো। পুরনো তিনজন প্রডিউসার একসঙ্গে হয়ে ছবিটা করছেন। আর কো-প্রডিউসার হিসেবে কলকাতার ভেঙ্কটেশ আছে। আর বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে আপাতত নিজের প্রোডাকশন থেকে কোনো ছবি করছি না।

 

শোনা গেছে ভেঙ্কটেশের সঙ্গে আপনার দুই বছরের চুক্তি হয়েছে। আসলে বিষয়টা কী? কটা ছবির চুক্তি?

এরকম কিছু না। আমি এখন কোনো নতুন আর্টিস্ট নই যে এরকম কন্ডিশনাল চুক্তিতে যাব। ওরা আমাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে এবং বলেছে অনেকগুলো ছবি করতে চায়। আর শুধু ভেঙ্কটেশ কেন হবে? অশোক ধানুকার এসকে মুভিজের একটা ছবি করছি। শিগগিরই ওটার শুটিংয়ে আমার লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। ছবির গল্পটা দারুণ।

 

অনেকের অভিযোগ, আপনি ভারতীয় ছবির ব্যাপারে নিজের স্ট্যান্ড পাল্টে ফেলেছেন। কাফনের কাপড় নিয়ে আন্দোলনে নেমে নিজেই আবার পাল্টে গেছেন।

ভুল। এটা এক ধরনের অপপ্রচার। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে ওই সময়ের আন্দোলনটা ছিল হিন্দি ছবির বিরুদ্ধে। তখনকার আন্দোলনের ছবিগুলো ঘাঁটলেই দেখবেন সেখানে স্লোগান লেখা আছে— ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় হিন্দি ছবি চলবে না।’ আন্দোলনের কোনো অংশে কিন্তু কো-প্রোডাকশন নিয়ে কিছু ছিল না। আমরা ফিল্মে আসার আরও আগ থেকেই যৌথ প্রযোজনা চলছে। তখন আপত্তিটা ছিল হিন্দি ছবি নিয়ে। আর এখন কথা বললে বলা উচিত ফিল্মের এক্সচেঞ্জ নিয়ে। এখানে ‘হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’, ‘ওয়ান’ মুক্তি পাচ্ছে। সেখানে তো আমাদের কোনো আর্টিস্টই নেই। অন্যদিকে দেখুন যৌথ প্রযোজনার ছবিতে অনেকেই কাজ করছেন। ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে শুরু করে হিরো-হিরোইন পর্যন্ত অনেকেই কাজ করছে। জয়া ওখানকার লোকাল প্রোডাকশনে কাজ করছে। মিম ভেঙ্কটেশের ছবি করছে। নুসরাত ফারিয়া করছে। এগুলো পজিটিভলি নিতে হবে।

 

শোনা গিয়েছিল হিন্দি ছবিতে কাজের অফার আছে আপনার।

আপাতত এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। নইলে আবার এটাকেও বিরোধীরা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করবে। এখন তাদের সে সুযোগটা দিতে চাই না।

 

ছেলে আবরাম আর স্ত্রী অপু। তারা কেমন আছে?

ভালো আছে (হাসি)। এই যে (নিজের ফোনের স্ক্রিনসেভারে ছেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখিয়ে) আবরাম। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাই না।

 

সামনের পরিকল্পনা?

সুস্থ হয়ে কাজে ফিরতে চাই। ভক্তদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কিছু দিতে চাই। আর নিজের ইন্ডাস্ট্রির ভিতর যে নোংরামোগুলো চলছে সেগুলো যেন দূর হয়। আমাদের গোটা ইন্ডাস্ট্রি যেন একটা পরিবার হয়ে কাজ করতে পারি।

সর্বশেষ খবর