বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঈদের টিভি অনুষ্ঠান প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

ঈদের টিভি অনুষ্ঠান প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

ঈদ এলেই দর্শকদের ধৈর্যের পরীক্ষা বাড়িয়ে দেয় টিভি চ্যানেলগুলো। প্রায় এক দশক ধরে এ অবস্থা চলছে।  যদিও এবার বিজ্ঞাপনের আধিক্য কয়েকটি চ্যানেলে কম, তবুও অনুষ্ঠানের মান নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। এ নিয়ে কয়েকজন মিডিয়াব্যক্তিত্বের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আমজাদ হোসেন

এবারের ঈদের অনুষ্ঠান নিয়েও দর্শকের ক্ষোভ আছে। এখন মানের অভাবে অনুষ্ঠান দেখাই ছেড়ে দিয়েছে দর্শক। আগে কোনো অনুষ্ঠান নির্মাণ বা তাতে পারফর্ম করলে সঙ্গে সঙ্গে দর্শক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেত। সাধারণ মানুষ বলত, কাল অমুক অনুষ্ঠান বা অমুক নাটকে আপনাকে দেখেছি। আর এখন অনেক কাজ করলেও দর্শক বলে আপনাকে আগের মতো আর ছোট পর্দায় দেখি না। মানে বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা আর মান না থাকায় দর্শক ছোট পর্দাবিমুখ হয়ে পড়েছে। চলতি বছর কয়েকটি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের মাত্রা কিছুটা কম ছিল। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বলব, টেলিভিশন চালাতে গেলে বিজ্ঞাপন দরকার। আর সাধারণ দর্শক হিসেবে বলতে হয়, বিজ্ঞাপন কী সীমিত আকারে চালানো যায় না। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপনের রেট বাড়িয়ে দিয়ে প্রচারের পরিমাণ কমানো হোক। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মান। এখন যে একেবারেই ভালো অনুষ্ঠান হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। সংখ্যা খুব কম। এর জন্য দায়ী বাজেট। টিভি থেকে যে অর্থ পাওয়া যায় তা দিয়ে মানসম্মত অনুষ্ঠান নির্মাণ সম্ভব নয়।

 

মামুনুর রশীদ

এবারের ঈদের টিভি অনুষ্ঠানে কোনো পরিবর্তন তো চোখে পড়ল না।  এখন তো অনুষ্ঠান চলে গেছে এজেন্সির হাতে। তারা মান বোঝে না। তাদের কাছে ব্যবসাই মুখ্য। এভাবে চললে অবস্থার অবনতি ছাড়া কিছুই হবে না। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের অবশ্যই ভূমিকা আর করণীয় আছে। রাষ্ট্র কি তা করছে?   সরকার চরম উদাসীন। এই সুযোগে টিভি চ্যানেলগুলোও যাচ্ছে তাই অনুষ্ঠান প্রচার করে যাচ্ছে আর দর্শক ক্রমেই দেশি টিভি চ্যানেল বিমুখ হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে সরকার আর টিভি চ্যানেলগুলোকে মান বাড়ানোর কথা বলে আসছি। তারা শুনছে না। চ্যানেলগুলো তো প্রফেশনালিজমের ধারে কাছে নেই। বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা করে যেতে পারলেই হলো। একটা সময় এমন ছিল, ঈদের অনুষ্ঠান নয়, সবসময় দর্শক টিভি অনুষ্ঠান দেখতে মুখিয়ে থাকত। মুখে মুখে অনুষ্ঠানের কথা ফিরত। আর এখন কখন কী অনুষ্ঠান হলো কেউ তা জানেই না। তার ওপর বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা তো আছেই। আসলেই পুরো ব্যাপরটিই  দুঃখজনক।

 

দিলারা জামান

ছোট পর্দায় ঈদের অনুষ্ঠানের কথা বলতে গেলে খুব কষ্ট হয়। এক সময় ঈদ অনুষ্ঠানের যে মান আর রুচি ছিল এখন তা নেই। নাটক আর যে কোনো অনুষ্ঠান, জোর করে কাতুকুতু দিয়ে হাসাতে পারলেই যেন হয়ে গেল। আগে বিনোদনের পাশপাশি অনুষ্ঠানে শিক্ষামূলক বক্তব্য থাকত। এখন তো স্বকীয়তা বলেই কিছু নেই। ভিনদেশি অর্থহীন নাটক আর অনুষ্ঠানের অনুকরণে অখাদ্য গেলানোর চেষ্টা চলছে। এতে ঈদে দর্শককে দেশীয় ছোট পর্দা বিমুখ থাকতে হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, নাটকে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে আর দুটি মোবাইল থাকলেই হয়ে গেল। বর্তমানে ছেলেমেয়েদের প্রেমের সমস্যা ছাড়া কি পরিবার আর সমাজে আর কোনো সমস্যা নেই? আর কোনো চরিত্র নেই? বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা তো আছেই। অনেকে বলে বিজ্ঞাপন কমেছে। আমার তো মনে হয় এ কথা ঠিক নয়, আসলে বিজ্ঞাপন প্রচারের ধরন বদলেছে। যন্ত্রণা ঠিকই আছে। সবমিলিয়ে ঈদের অনুষ্ঠান নিয়ে দর্শকদের মতো আমিও চরম হতাশ।

 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

এবারের ঈদের অনুষ্ঠান দেখে যেটা আমার উপলব্ধি হয়েছে তা হচ্ছে, আমরা ক্রমে ক্রমেই চিন্তার দৈন্যতার চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে হারিয়ে যাব টিভি অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য থেকে। বলা যায়, এখন আমরা মুমূর্ষু অবস্থায় আছি। এ অবস্থায় বেঁচে ওঠাও যেমন সম্ভব, মৃত্যু হওয়াও সম্ভব। বোধ হয় বেঁচে ওঠাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিছু কিছু টেলিভিশন চ্যানেল অল্প বিরতি বা বিরতিহীন অনুষ্ঠান চালাচ্ছে। বেশির ভাগ অনুষ্ঠান বিজ্ঞাপনের চাপে জর্জরিত। টিভি চ্যানেলগুলোর ভাবার সময় হয়েছে কী করে কম রেটে বেশি বিজ্ঞাপনের পরিবর্তে বেশি রেটে কম বিজ্ঞাপন দিয়ে লাভবান হওয়া যায়। এর একটিই সূত্র আছে। আর তা হচ্ছে কাজ ইউনিকলি তৈরি করতে হবে। এর পেছনে প্রয়োজনে বেশি অর্থ ও ভাবনা ব্যয় করেন এবং নিশ্চিত করেন যে, অনুষ্ঠানটি যেন অন্য ২০টি অনুষ্ঠানের চেয়ে আলাদা করা যায়।  এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।  শুধু বলব, টিভি ইন্ডাস্ট্রি বাঁচান সবাই মিলে।

সর্বশেষ খবর