শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ : মিশা সওদাগর

হল মালিকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সিনেমা হল রক্ষা করতে চাই

শোবিজ প্রতিবেদক

হল মালিকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সিনেমা হল রক্ষা করতে চাই

দীর্ঘদিন ধরে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে দেশীয় চলচ্চিত্র। এর ওপর সম্প্রতি যৌথ প্রযোজনা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে চলচ্চিত্রকাররা। এই অবস্থার সমাধান কীভাবে হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তর এবং চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যান্য বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর

 

শুরুতেই জানতে চাই সিনেমা হল মালিকরা আপনাকে বয়কট করেছে, প্রতিক্রিয়া কী?

সিনেমা হল মালিকদের প্রতি আস্থা রেখেই বলতে চাই তাদের সঙ্গে আমার  কোনো বিরোধ নেই। আমার প্রোডাক্ট সিনেমা হলে চলেছে বলেই আজ আমার যশ, খ্যতি, অর্থ, বিত্ত, দর্শক ও রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। তাই সিনেমা হলের স্বার্থ সবার আগে দেখি। যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে আমি নই, এই আয়োজনের সঠিক নিয়মনীতির জন্যই দেন দরবার করছি। নীতিমালা না মেনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে দর্শকই একদিন এসব সিনেমা দেখা ছেড়ে দেবে। তখন অস্তিত্ব সংকটে পড়বে সিনেমা হল। আর  সিনেমা হল বাঁচাতে হল মালিকদের হয়ে সরকারকে বলেছি সিনেমা হল সংস্কারের জন্য অনুদান দিতে হবে। আমরা সিনেমা হল মালিকদের সঙ্গে হাতে হাত  মিলিয়ে সিনেমা হল রক্ষা করতে চাই। হয়তো সাময়িক ভুল বোঝাবুঝির জন্য বয়কটের মতো একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। আশা করি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

 

কিন্তু এর আগে তো চলচ্চিত্র পরিবার নির্মাতা আবদুল আজিজ এবং নায়ক শাকিব খানকে বয়কট করেছে, আপনার বক্তব্য কী?

নিয়মনীতিবিহীন যৌথ প্রযোজনার আন্দোলনের অস্থির সময়ে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। আসলে বয়কট কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়, সাময়িক মান অভিমান। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। চলচ্চিত্র পরিবার কাউকে বয়কট করলেও আলোচনার পথ তো আর বয়কট করেনি। সুতরাং বিষয়টির একটি ইতিবাচক সমাধান শিগগির হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

 

আন্দোলন করতে গিয়ে সিনেমা হল মালিক আর সেন্সর বোর্ডের সদস্য ইফতেখার নওশাদের ওপর চলচ্চিত্র পরিবার রাজপথে হামলা চালিয়েছে, এতে আপনাকেও দায়ী করা হয়েছে, কাজটি কতটা শোভন হয়েছে?

দেখুন, নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র পরিবার সব সময় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছে। সেদিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ করে এই কাজটি চলচ্চিত্র পরিবার করেনি। কিছু সুযোগ সন্ধানী বহিরাগত লোক চলচ্চিত্র পরিবারকে হেয় করতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। এর জন্য চলচ্চিত্র পরিবার বা আমি দায়ী নই। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কখনো চাই না। ইফতেখার নওশাদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

 

যৌথ প্রযোজনার নিয়ম না মানা ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবিতে অভিনয় করে আপনিও বিতর্কে পড়েছিলেন, এ বিষয়ে কী বলবেন?

২০১২ সালে নতুন নীতিমালার অধীনে ওই ছবিটি নির্মিত হয়েছিল, ওই নীতিমালায় উল্লেখ ছিল দুদেশের নির্মাতারা বসে সমঝোতার মাধ্যমে এই নিয়মের ছবি নির্মাণ করবে। ছবিটি যখন মুক্তি পেল তখন দেখলাম আমাদের দেশের শিল্পী কলাকুশলীকে ঠকানো হয়েছে। আর তখন থেকেই এই নীতিমালার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এর পর থেকে একাধিক প্রস্তাব পাওয়ার পরেও আমি কিন্তু আর এই আয়োজনের ছবি করছি না। এই আয়োজনে অনিয়মের কারণে আমাদের শিল্পী কলা কুশলীরা বঞ্চিত হচ্ছে, ওয়ার্কপারমিট ছাড়া শিল্পীরা কাজ করছে, সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। উভয় দেশের স্বার্থ ও কৃষ্টি কালচারকে সমুন্নত রেখে সমতার ভিত্তিতে যৌথ আয়োজনের ছবি হতে হবে।

 

প্রতিপক্ষের অভিযোগ চলচ্চিত্র পরিবারের অনেকের হাতেই কোনো কাজ নেই, তাই তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে বর্তমান কাজ নিয়ে সরব জাজ মাল্টিমিডিয়া আর শাকিব খানকে রুখতে আন্দোলনে নেমেছে, আপনি কী বলেন?

এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি আছে বলে মনে করি না। আমার বিষয়ে একটি উদাহরণ দেই, নিয়মনীতিবিহীন যৌথ প্রযোজনার একাধিক ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পরেও আমার হাতে এখন ১৬টি ছবির কাজ আছে। আমার মতো চলচ্চিত্র পরিবারের অন্যরাও কম বেশি ব্যস্ত। এখানে ঈর্ষার কিছু নেই, সমস্যাটি হলো কমিটমেন্ট ও নিয়মনীতি যথাযথভাবে না মানার।

 

দেশীয় চলচ্চিত্রের পুনরুজ্জীবনে চলচ্চিত্র পরিবার কী ভূমিকা রাখবে?

চলচ্চিত্র পরিবার প্রযোজকদের পুঁজি ফেরত নিশ্চিত করতে পাইরেসি রোধ, এফডিসিতে সেন্ট্রাল সার্ভার স্থাপন, কমপক্ষে ২০০ সিনেমা হল সংস্কার ও আধুনিকায়ন, মানসম্মত গল্প বাছাই, শিল্পীদের কাজের সময় মেনে চলার বিধান, নতুন মুখের সন্ধানের আয়োজন, প্রশিক্ষণ, গানের মান রক্ষা, সিনিয়র শিল্পীদের পরামর্শ ও তাদের উপযুক্ত চরিত্রে কাস্ট করা ইত্যাদি উদ্যোগ নেবে। সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে কথা হয়েছে, সরকার আমাদের সার্বিক সহযেগিতা দেওয়ার কথা দিয়েছে। সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।  দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরাতে চলচ্চিত্র পরিবার বদ্ধপরিকর।

সর্বশেষ খবর