শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
দেশ জুড়ে

বগুড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখন

দেশের উত্তরাঞ্চলের শহর বগুড়া। শিক্ষা, সংস্কৃতিতে বগুড়ার রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। প্রয়োজনীয় মঞ্চ, মহড়া কক্ষ, পৃষ্ঠপোষতা ছাড়াও সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক বলয়। বগুড়ার তরুণ শিল্পীরা জাতীয় পর্যায়ে সুনাম অর্জন করেছেন। এর পেছনে ভূমিকা রেখেছেন নাট্য সংগঠক তৌফিক হাসান ময়না, নৃত্যগুরু আবদুস সামাদ পলাশ কিংবা ইয়ুথ কয়্যারের আতিকুর রহমান মিঠু। তাদের সঙ্গে কথা বলে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি আবদুর রহমান টুলু

 

 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার : তৌফিক হাসান ময়না

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন ও নাসির উদ্দিন ইউসুফের উদ্যোগে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। আর শুরু থেকেই বগুড়ায় এর একটি শাখা গড়ে তোলেন নাট্যজন তৌফিক হাসান ময়না। তিনি উত্তরাঞ্চলের নাট্যচর্চায় নতুন গতি এনেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সারা দেশে নাট্যচর্চায় নিমগ্ন। তৌফিক হাসান— বগুড়া থিয়েটারের নিয়মিত প্রযোজনায় তার নাট্যজীবন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। একাধারে তিনি প্রতিষ্ঠিত হন অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক এবং সংগঠক হিসাবে। বগুড়া জেলায় গ্রাম থিয়েটারের ১৮টি ইউনিট কাজ করছে। তিনি জানান, জাতীয় সংস্কৃতিতে গ্রাম থিয়েটার এক অবিভাজ্য নাম। একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন। সারা দেশে ২৬৬টি গ্রাম থিয়েটার রয়েছে। কয়েক হাজার কর্মী দেশীয় সাংস্কৃতিক লালন করে যাচ্ছে। গ্রাম থিয়েটার কান পেতেছে নিরন্ন কৃষকের বুকে। এই জনপদের মানুষের সাংস্কৃতিক শিকড় সন্ধানের প্রয়াসে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার আঁধার ভেঙে আলোর অন্বেষণে যাচ্ছে সামনের দিকে। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ঔপনিবেশিক নাট্যরীতি ও শিল্পরীতিকে প্রত্যাখ্যান করে ঐতিহ্যবাহী বাংলা শিল্পরীতি ও আঙ্গিকের বৈজ্ঞানিক ব্যবহারে জাতীয় নাট্য এবং শিল্প আঙ্গিক ও রীতি বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। আমরা চেষ্টা করছি দেশের জন্য আদর্শ নাগরিক গড়ে তুলতে।

 

নৃত্যচর্চায় এখন অদম্য গতি : আবদুস সামাদ পলাশ

বগুড়ার অন্যতম কৃতী নৃত্যগুরু আবদুস সামাদ পলাশ। চার দশকের অধিক সময় তিনি নিরবচ্ছিন্ন নৃত্যচর্চার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার একাধিক শিক্ষার্থী জাতীয় পর্যায়ে নৃত্যে অবদান রেখে চলেছেন। তিনি মনে করেন, নৃত্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বগুড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় মঞ্চ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আন্দোলন আরও বেগবান করব। আর এজন্য ১৯৮৮ সালে তিনি গড়ে তুলেছিলেন আমরা ক’জন শিল্পী গোষ্ঠী। শিশু-কিশোরদের শুদ্ধ নৃত্যের চর্চা ছড়িয়ে দেওয়া ছিল তার লক্ষ্য। তার নির্দেশনায় নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, পঞ্চকন্যা, লাইলী মজনু, নাগ পূর্ণিমা, নানা বর্ণে বাংলাদেশ, একাত্তরের কথা, ইছামতির বাঁকে, বারাম খানা, মহুয়া বিশেষ প্রশংসা লাভ করেছে। তার শিক্ষার্থী মাহাবুব হাসান সোহাগ, নায়িকা অপু বিশ্বাস, অভিনেতা বাদল শেখ, হুমায়রা নওশীন রথী, মোহনা মোস্তফা মীম, আবুল কালাম আজাদ জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত।

আমরা ক’জন শিল্পী গোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুস সামাদ পলাশ ওয়ার্ল্ড ড্যান্স অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি। বর্তমানে নিজ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সমাজে অবহেলিত হরিজন শিশুদের বিনা বেতনে নৃত্য শিক্ষা দিচ্ছেন।

 

ইয়ুথ কয়্যার সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কাজ করছে : আতিকুর রহমান মিঠু

‘হামরা বোগরার ছোল, পুঁটি মাচ মারবার য্যাইয়া ম্যারা আনি বোল, হামরা বোগড়ার ছোল’ দেশের মানুষ এ কথাটি শোনেননি, এমন মানুষ পাওয়া যাবে খুবই কম। একটি জেলার পরিচিতি করতে একটি গানই যথেষ্ট। তেমনি বগুড়ার পরিচিতি তুলে ধরতে এই গানটি দেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত। আর এ গানটি ইয়ুথ কয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল আলম টিপু পরিবেশন করে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ওই অনুষ্ঠানে ইয়ুথ কয়্যারের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মিঠু ছিলেন সহশিল্পীর ভূমিকায়।

১৯৭৬ সালে বিশিষ্ট সমাজসেবী ও লেখিকা, তৌফিকুল আলম টিপু ও আতিকুর রহমান মিঠুসহ কয়েকজন তরুণ গড়ে তোলেন ‘বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার’। তৎকালীন সংসদ সদস্য মরহুম আয়েশা আশরাফ সংগঠনের সভাপতি, তৌফিকুল আলম টিপু সাধারণ সম্পাদক এবং আতিকুর রহমান মিঠু সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৮২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে তিনি বগুড়া ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বগুড়া ইয়ুথ কয়্যারের নিজস্ব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানে তবলা, ঢোলক, কংগো ও ড্রামসেট বাজান। বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার হয়ে ওঠে সারা দেশের একটি জনপ্রিয় লোকসংগীতের সংগঠন।

সর্বশেষ খবর