শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাণ্ডুলিপি সংকটে মঞ্চনাটক


পাণ্ডুলিপি সংকটে মঞ্চনাটক

শিল্পমানসম্পন্ন নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হচ্ছে পাণ্ডুলিপি। একটি মানসম্পন্ন ও বৈচিত্র্যময় পাণ্ডুলিপি যে কোনো নির্মাণকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করে। শিল্পী, কারিগর এবং শিল্পের জনপ্রিয়তা তৈরিতে ভালো পাণ্ডুলিপির ভূমিকা সর্বাগ্রে। কিন্তু সৃজন ও নন্দনের এই মাধ্যমে পাণ্ডুলিপির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি হলেও একটি বৈচিত্র্যময় ও হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো পাণ্ডুলিপির সংকট বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের চেয়ে মঞ্চনাটকে এই সমস্যাটা অনেক বেশি। মানসম্পন্ন পাণ্ডুলিপির অভাবে আমাদের মঞ্চনাটক বর্তমানে বিদেশি নাট্যকারদের ওপর নির্ভরশীল। দেশের প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় নাটকের দলই তাদের প্রযোজনাগুলোতে টেনে আনছেন উইলিয়াম শেকসপিয়র, মলিয়ের, ইবসেনসহ খ্যাতিমান বিদেশি নাট্যকারদের। মৌলিক নাটক হচ্ছে না এমন বিষয় নিয়ে নাটকের মানুষের মাঝে নানা ধরনের মতভেদ।এ বিষয়ে লিখেছেন—  মোস্তফা মতিহার

 

রামেন্দু মজুমদার

একটি নাটকের দলের নতুন নতুন নাটকের জন্য যে ধরনের পাণ্ডুলিপি দরকার সে ধরনের পাণ্ডুলিপি খুব একটা পাওয়া যায় না। সফল দলের মঞ্চায়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে ভালো মানের নাট্যকার আমাদের এখানে খুবই কম। শুধু পাণ্ডুলিপি সংকটের কারণেই অনেক নাটকের দল নিয়মিতভাবে নতুন নতুন প্রযোজনা মঞ্চে আনতে পারছে না। যার কারণে দল টিকিয়ে রাখতেই বিদেশি নাট্যকারদের নাটকের অনুবাদ বা রূপান্তরের মাধ্যমে আমাদের নাটকের দলগুলো তাদের প্রযোজনাগুলো অব্যাহত রাখে। বিদেশি নাট্যকারদের নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে একটা বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত, আর তা হলো তাদের যে নাটকটির সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সামঞ্জস্য নেই সেই নাটকটি এড়িয়ে যাওয়া উচত। আর যেটার সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সামঞ্জস্য আছে সেই নাটকটিই মঞ্চায়ন করা উচিত। আমাদের দেশের নামি সাহিত্যিক ও ভালো মানের লেখকরা যদি পাণ্ডুলিপি রচনায় এগিয়ে আসেন তাহলে এই সংকট দূর হবে।

 

আতাউর রহমান

স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের নাটকের অঙ্গনে দেশি নাট্যকারদের বিশাল ভূমিকা ছিল। ৬৮ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার পর দেশি নাট্যকারদের নাটকগুলোই আমরা বেশি করেছি। নুরুল মোমেন, আসকার ইবনে শাইখ, মুনীর চৌধুরীর মতো নাট্যকাররা তাদের সৃজনশীলতাকে দিয়ে আমাদের নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে মহিলা সমিতির মঞ্চে দর্শনীর বিনিময়ে প্রথম মঞ্চনাটক শুরু হয়। আর নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় সেই গর্বিত ইতিহাসের ধারক বাহক। পরবর্তী সময়ে আমাদের মমতাজউদ্দীন আহমদ, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ শামসুল হকরা ভালো লিখেছেন। তাদের নাটকগুলোও সমাদৃত। এরপরে মানসম্পন্ন পাণ্ডুলিপি না পাওয়ায় বিদেশি নাট্যকারদের প্রতি আমরা নির্ভর হয়ে পড়ি।

 

ড. ইনামুল হক

আমাদের এখানে ভালো নাট্যকারের অভাব রয়েছে, এটা আমি খুব একটা মানতে পারি না। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের নাটকের অঙ্গনেও অনেক মানসম্পন্ন নাট্যকার রয়েছে। তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। মানসম্পন্ন অচেনা নাট্যকারদের তুলে ধরতে সাংবাদিকদেরও একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। নাটকের মানুষদের পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মানসম্পন্ন নাট্যকারদের যদি মূল্যায়ন করা হয় তাহলে তারা ভালো কাজের অনুপ্রেরণা পাবেন। আর বিদেশি নাটক আমরা সরাসরি অনুবাদ করছি না, রূপান্তর করছি। বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে নাটকে দেশি বিষয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

 

কেরামত মওলা

শিল্পবোধসম্পন্ন নাট্যকাররা লিখছেন না। সৈয়দ শামসুল হক খুব কম লিখছেন। সেলিম আল দীনের মতো নাট্যকাররা আমাদের মাঝে নেই। মঞ্চনাটক লিখতে হলে যে ধরনের অভিজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দরকার সে ধরনের অভিজ্ঞান এখনকার অনেক লেখকের মধ্যেই নেই। শিল্পবোধ না থাকলে মঞ্চনাটক লেখা যায় না। মঞ্চনাটকে কোনো ধরনের প্রাপ্তি নেই বলে অনেকেই এখন আর মঞ্চের জন্য নাটক লিখছেন না। টেলিভিশনে প্রাপ্তি আছে বলে নাট্যকাররা এখন টিভি নাটক লেখায় ব্যস্ত। তবে এটাও ঠিক যে, টেলিভিশন নাটক ও মঞ্চনাটক রচনার ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

সর্বশেষ খবর