বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
দেশজুড়ে

পঞ্চগড়ের সব সিনেমা হল বন্ধ

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ের সব সিনেমা হল বন্ধ

প্রায় ৫০ বছর ধরে পঞ্চগড় শহরের আলোছায়া প্রেক্ষাগৃহটি সিনেমা দর্শকদের মনোরঞ্জনে ভূমিকা রেখে আসছিল। মালিকপক্ষ ২০০১ সালে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ছায়াছন্দ নামে আরেকটি সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ২০০৯ সালে আলোছায়া বন্ধ হয়ে যায়। নতুন প্রেক্ষাগৃহটিও ২০১২ সালে বন্ধ  করে দিতে বাধ্য  হন। এই দুই হলেই ছোটবেলা থেকে টিকিট চেকারের কাজ করছিলেন তিন বন্ধু আশরাফ, মন্টু, আর শাহার আলী।  অন্য কোনো কাজও শেখেননি তারা। হল বন্ধ হওয়ার পর তারা বেকার হয়ে পড়েন। এদিকে হলটির ভবন আর আসবাবপত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এমন অবস্থায়  মালিকপক্ষ এই তিন বন্ধুকে হলটি ছেড়ে দেন। বিনা ভাড়ায় শুধু   বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে তারা মাঝে মাঝে হলটি চালাচ্ছেন। এ প্রতিবেদন লেখার সময় এই হলে চলছিল ‘সেয়ানায় সেয়ানায় টক্কর’ সিনেমাটি। ওই তিন বন্ধু জানান, দিনে দুটি প্রদর্শনী চালান তারা। টাইম-টেবিল খুব একটা মানা হয় না। ২০-২৫ জন দর্শক হলেই ছবি শুরু হয়। শাহার আলী জানান, ৩ হাজার টাকা দিয়ে তারা এই সিনেমাটি এনেছেন। প্রজেক্টর  দিয়ে চালাচ্ছেন। দিনে তাদের তিনজনের ভাগে আড়াই থেকে তিনশ টাকা হয়। তা দিয়েই সংসার চালাচ্ছেন তারা। বলা যায় পঞ্চগড়ের সবক’টি সিনেমা হলই এখন বন্ধ। হল মালিকেরা পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা। কেউ কেউ গোডাউন হিসেবে মাসিক ২-৩ হাজার টাকায় প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া দিয়েছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পঞ্চগড়ের পাঁচটি উপজেলায় মোট সিনেমা হলের সংখ্যা ১৩। এরমধ্যে দেবীগঞ্জে ৩টি, বোদায় ২টি, আটোয়ারীতে ১টি, পঞ্চগড় সদরে ৩টি এবং তেঁতুলিয়া উপজেলায় ৩টি। ১৯৯৮ সালে টুনিরহাটের ঝংকার সিনেমা হলটি চালু করেন মো. ওয়াজেদ আলী। ২০১০ সালে এসে হলটি দর্শকশূন্য হয়ে পড়ে। লোকসান গুনেও ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি হলটি চালিয়ে যান। আশা করেছিলেন সিনেমা হলের বাজার ফিরবে। ২০১৩ সালে তিনি স্থানীয় এক ধান ব্যবসায়ীকে গোডাউন হিসেবে হলটি ভাড়া দেন। দেবীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা  আব্বাস আলী কৃষি জমি বিক্রি করে ২০০১ সালে  প্রতিষ্ঠা করেন শাপলা টকিজ। ২০১২ তে এসে দর্শকশূন্যতার কারণে ব্যবসায় মার খান তিনি। মরিচা ধরে নষ্ট যন্ত্রাংশ ও ভাঙা চেয়ার-টেবিল নিয়ে এখন হলটি পড়ে আছে। আব্বাস আলী জানান বর্তমানে অনেক ভাল সিনেমা নির্মিত হলেও সেগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্মিত হয়।

একই সঙ্গে দেবীগঞ্জের পাবলিক ক্লাব পরিচালিত আমার টকিজ বন্ধ হয়ে আছে, গোডাউন হিসেবে ভারা দেওয়া হয়েছে ভাওলাগঞ্জের তৃপ্তি টকিজ। এখন শহরেও কোনো সিনেমা হল চলছে না।

ছায়াছন্দ ও আলোছায়া প্রেক্ষাগৃহের মালিক কামরুল ইসলাম জানালেন কাটপিস সমৃদ্ধ অশ্লীল ছবি চালালে কিছু দর্শক পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা তা চাই না। তেঁতুলিয়ার ৩ প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ গেছে ৫ বছর আগে । আটোয়ারীর প্যারিসও বন্ধ হয়ে যায় ২০১২ সালে।

সর্বশেষ খবর