মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকাই ছবি থেকে কৌতুক উধাও

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঢাকাই ছবি থেকে কৌতুক উধাও

চলচ্চিত্রের নানা উপকরণের মধ্যে অপরিহার্য হলো কৌতুক। দর্শক ছবির গল্পে বাণীর পাশাপাশি নানা সুস্থ বিনোদন চায়। আর বিনোদনের অন্যতম একটি উপাদান হলো কৌতুক। এর জন্য কৌতুক অভিনেতার মতো একটি চরিত্র সৃষ্টি হয় চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন থেকে। ছবির গুরুগম্ভীর গল্প যখন দর্শক মন ভারাক্রান্ত করে তুলতো তখন কৌতুক দিয়ে দর্শক হৃদয়ে হাসির জোয়ার বইয়ে দিয়ে মনকে অনেকটা হালকা করা হতো। আর এ জন্যই ঢাকাই ছবিতে একসময় ছিল জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতাদের জোয়ার। এখন আর সেই অবস্থা নেই। ঢাকার ছবিতে কৌতুক অভিনেতা সংকট এখন চরমে। ঢালিউডের  সূচনালগ্ন থেকে যেসব কৌতুক অভিনেতা দর্শকদের হাসির মাধ্যমে নির্মল আনন্দ দিয়ে আসছিল তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন— সোনা মিয়া, ফ্যাটি মহসিন, সাইফুদ্দিন, হাসমত, পরান বাবু, মতি, বেবী জামান, ব্ল্যাক আনোয়ার, খান জয়নুল, রবিউল, আনিস, টেলি সামাদ, দিলদার, কাজল, সুরুজ বাঙালী, আফজাল শরীফ, ববি, জ্যাকি আলমগীরসহ অনেকে। এমনকি আমজাদ হোসেন, দিলীপ বিশ্বাস, সুভাষ দত্তের মতো খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকাররা বড় পর্দায় ক্যারিয়ার শুরু করেন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। নব্বই দশক পর্যন্ত ঢাকার চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতাদের অবস্থান ছিল জমজমাট। কৌতুক অভিনেতাদের এমনই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা ছিল যে, টেলি সামাদ ও দিলদারকে নায়ক করে একসময় চলচ্চিত্র পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে এবং সেসব ছবি রীতিমতো সুপারহিট ব্যবসা করেছে। তখন অবস্থা এমন ছিল, কৌতুক পর্ব ছাড়া ছবি নির্মাণ অসম্ভব। আর এখন এই প্রধান বিনোদনটিই চলচ্চিত্র থেকে রীতিমতো উধাও হয়ে গেছে। নেই আগের মতো কৌতুক অভিনেতা এবং কৌতুকদৃশ্য। মাঝে মধ্যে কোনো ছবিতে কৌতুক দৃশ্য দেখা গেলেও তাতে রস খুঁজে পাওয়া যায় না, বিনোদনের বদলে মনে হয় ভাঁড়ামি। ফলে বর্তমানে ছবি দেখে আনন্দ না পাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে যুক্ত হয়েছে ছবিতে কৌতুকপর্ব বা কৌতুক অভিনেতা না থাকা।

 কৌতুক অভিনেতা আনিস বলেন, মানুষ হাসানো খুবই কঠিন একটি কাজ। আর এই কঠিন কাজটি সূচারুরূপে সম্পন্ন করতে পেরেছি বলেই দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। এর জন্য চর্চা দরকার। যা এখন নেই। এখন অনেকে এই চরিত্রটিকে হালকাভাবে নেয় বলে দর্শকহৃদয়ে আসন গড়তে পারে না। ভাঁড়ামিতে পরিণত হয়েছে কৌতুক। আফজাল শরীফ বলেন, আমার কাছে সবসময় মনে হয় কৌতুক অভিনেতাদের অভিনয়ের সুযোগ বেশি। একই সঙ্গে কঠিন একটি কাজ। কারণ সেকেন্ডের মধ্যে অভিনয় বের করে আনতে হয়। দুঃখজনক হচ্ছে বর্তমানের ছবিতে কৌতুকের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। আগের ছবিতে কৌতুকের একটি বিশেষ অংশই থাকত। দেখা যেত কৌতুক অভিনেতা পর্দায় আসার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক হাসতে শুরু করেছে। এখন দর্শক আর হাসে না। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের সঙ্গে ক্যারেক্টার লিংক করতে পারলেই দর্শক হাসবে। এখন সেই অবস্থা কোথায়। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমান বলেন, চলচ্চিত্র মানে পূর্ণ বিনোদন আর বাণী। কঠিন কোনো বিষয়কে গুরুগম্ভীর না করে হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারলে তা দর্শকহৃদয়ে সহজে পৌঁছায়। আবেদন স্থায়ী হয়। এ ক্ষেত্রে আমার ‘অশিক্ষিত’ ও ‘ছুটির ঘণ্টা’র কথা উল্লেখ করব। দুটি ছবির বিষয়ই মর্মান্তিক, জটিল। তা সত্ত্বেও হাস্যরসের মাধ্যমে গল্প গড়িয়েছে বলে এখনো দর্শক ছবি দুটোকে মনে রেখেছে। মানুষ বিনোদন পেতে ছবি দেখতে যায়। কৌতুক হচ্ছে বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ। আমাদের সময় এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতাম বলেই ওই সময়ের ছবিগুলো এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে। কৌতুক ছাড়া ছবি পূর্ণতা পেতে পারে না। চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন বলেন, এখনকার দর্শক বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম আগের মতো আলাদা করে কৌতুক দেখে না। তা ছাড়া কৌতুকের মতো কঠিন একটি কাজ সহজে সব শিল্পী আয়ত্তে আনতে পারে না। ফলে এই চরিত্রে কেউ বেশিদিন টিকতে পারে না। এখন অন্য চরিত্রের চেয়ে নায়ক-নায়িকা হওয়ার প্রতি সবার ঝোঁক বেশি।

এ ছাড়া নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে বলে অনেকে আলাদা করে কৌতুকের দৃশ্য বা কৌতুকশিল্পী নিতে চায় না। আমার মতে দর্শককে পূর্ণ বিনোদন দিতে কৌতুক বা কৌতুক অভিনেতার বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর