সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকার চলচ্চিত্রে কালো ছায়া

ঢাকার চলচ্চিত্রে কালো ছায়া

ঢাকার চলচ্চিত্রের আকাশ কালো ছায়ায় ঢাকা পড়েছে। একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এই শিল্প বর্তমানে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কারা নিয়ন্ত্রণ করছেন এখন এই শিল্পটিকে।

তারা কি যথাযথ ভূমিকা পালন করছেন? জনপ্রিয় তারকাদের সরিয়ে দিয়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা আদৌ কি সম্ভব? চলচ্চিত্রশিল্পকে ঘিরে এমন পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান কারও কাম্য নয়। চলচ্চিত্রকারদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা কি বাঁচাতে পারে না এই শিল্পকে। এক্ষেত্রে সিনিয়রদের ভূমিকাই বা কী হওয়া উচিত? এসব বিষয়ে কথা বলেছেন বেশ কয়েকজন সিনিয়র চলচ্চিত্রকার। তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

 

সবাইকে সহনশীল হতে হবে : আমজাদ হোসেন

যে কোনো প্রতিষ্ঠানে সমস্যা তৈরি হতেই পারে। প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে সবাই যদি সহনশীল হয়ে  তা মোকাবিলা করে তাহলে কোনো সমস্যাই আর সমস্যা থাকে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবারই দায়িত্ব হচ্ছে নিয়মনীতির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া। তাহলে কোনো প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। নিজের

দেশ আর দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে বড় করে দেখতে হবে। আমরা কেন নিজেদের অস্তিত্বকে ভুলে গিয়ে এমন কাজ করতে যাব, যাতে নিজের দেশ ছোট হয়। এই দেশ আমাদের, এই চলচ্চিত্রশিল্প আমাদের। তাই দেশ আর চলচ্চিত্রের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব- কর্তব্য আমাদেরই। প্রধান গণমাধ্যমটি নিয়ে এমন অস্থিরতা অবশ্যই কারও কাম্য নয়। আমি চাই কারও যদি কোনো বিষয় বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে তারা সিনিয়রদের সহযোগিতা, পরামর্শ নেবে। ব্যক্তি স্বার্থ বা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নিয়মনীতি-বিরুদ্ধ কাজ করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে একটি শিল্পকে ধ্বংস করা কখনো একটি স্বাধীন জাতির কাম্য হতে পারে না।

 

এ অচলাবস্থার দ্রুত সমাধান চাই : সুচন্দা

চলচ্চিত্রের বর্তমান অস্থির অবস্থায় গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে। গত ঈদের সময় আন্দোলন এবং মধুমিতা সিনেমা হল মালিক ও সেন্সর বোর্ড সদস্য ইফতেখার নওশাদের ওপর হামলাসহ নানা কারণে চলচ্চিত্র লগ্নিকারকরা সিনেমামুখী হচ্ছে না, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তারা।

এ কারণে পুরনো প্রযোজকরাও তো  সিনেমা নির্মাণে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে নতুন কোনো সিনেমা নির্মাণ আর তেমনভাবে হচ্ছে না, পুরনো  সিনেমার শুটিংও প্রায় বন্ধ। এতে জানুয়ারি থেকে ছবির অভাবে বন্ধের মুখে পড়ার উপক্রম হয়েছে সিনেমা হল।

আর যদি ৫০টি সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সিনেমা শিল্প বলে আর কিছু থাকবে না্ এ দেশে। তাই সবক্ষেত্রে নিয়মনীতি মেনে সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে গেলে সমস্যা থাকার কথা নয়। আমরা চাই সম্মিলিতভাবে ভেদাভেদ ও মতপার্থক্য ভুলে সব সমস্যার সমাধান দ্রুত হোক। এক্ষেত্রে আন্তরিকতা আর সদিচ্ছাই যথেষ্ট।

 

সরকারের সদিচ্ছাই সবার কাম্য : সোহেল রানা

শাকিব খান নিজগুণে চলচ্চিত্রে স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছে। দুঃখজনক হচ্ছে, তার আশপাশের কিছু লোক ভুল বুঝিয়ে তাকে বিপথে চালাচ্ছে, তার মাথা গরম করে দিচ্ছে। শাকিবকে বলব, যে ছবি নিয়ে সমস্যা তা নিজেই দেখে বিবেচনা কর নিয়মনীতি কতটা মানা হয়েছে। যৌথ প্রযোজনার নীতি ৫০-৫০ মানা হলে কারও কিছু বলার থাকবে না। আমি বলব এ দেশের চলচ্চিত্রের একজন সদস্য হিসেবে এক্ষেত্রে তোমারও যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। শিল্পী সমিতির নতুন কমিটি একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিই এ সমস্যার সমাধান করবে। অন্যদিকে সরকার ৫০টি সিনেমা হল ডিজিটাল করার যে কমিটমেন্ট করেছে তা যদি পালন করে তাহলে সমস্যার সমাধান অনেক দূর হয়ে যাবে। এখানে সরকারের সদিচ্ছাই এখন সবার কাম্য। আমরা সিনিয়ররা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এই অচলাবস্থা দূর করতে। আমি আশাবাদী, সরকার যদি শতভাগ সহযোগিতা করে, কমিটমেন্ট রক্ষা করে তাহলে চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ খুব দূরে নয়।

 

কোনো অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে : আজিজুর রহমান

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই চলচ্চিত্র শিল্পকে রক্ষা করা চলচ্চিত্রকারদের নৈতিক দায়িত্ব। এই অচলাবস্থার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। এই শিল্পকে রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলচ্চিত্রশিল্পে নানা সমস্যা নতুন কোনো বিষয় নয়, আগেও হয়েছে আবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর সমাধানও হয়েছে। এখন কেন হবে না? যতই অশুভ শক্তি পেছন থেকে অপতৎপরতা চালাক আমরা চলচ্চিত্রকাররা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, এই শিল্পকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি তাহলে যে কোনো অপশক্তি পরাজিত হতে বাধ্য। এখানে এখন মূল সমস্যা একটিই। আর তা হলো যৌথ প্রযোজনার নিয়মনীতি। বিষয়টি সবার স্বার্থ সংরক্ষণ করে যথাযথভাবে মানলেই হয়। এটিকে নিয়ে জটিল আর অচল পরিস্থিতি তৈরি করার কোনো কারণ দেখি না। তা ছাড়া সরকার এক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। তাই এ নিয়ে আর পানি ঘোলা করে লাভ নেই। বাকি সমস্যা নিজেরা বসে ঠিক করে নিলেই সব সমাধান সম্ভব।

 

কেউ নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নয় : ছটকু আহমেদ

নিষিদ্ধ বা বহিষ্কার আসলে কোনো সমাধান নয়, কিন্তু নিয়মনীতি মেনে তো কাজ করতে হবে। না হলে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা কারও পক্ষে-বিপক্ষে নই। শাকিব ও জাজ ভালো করছে। তাদের বিকল্পও নেই। কিন্তু তারাও নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নয়। কেউ যদি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে, যা ইচ্ছা তা করে তা হলে যে কোনো অঙ্গনের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বেই। এটি কারও কাম্য নয়। সবাইকে নিয়মনীতির মধ্যে চলতে হবে। শৃঙ্খলা রক্ষা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। সবাইকে মিলে যাওয়ার জন্য যৌথভাবে বসে নিয়মনীতির গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। আমি চাই বহিষ্কার বয়কট বন্ধ হোক। সবাই নিয়মনীতির মধ্যে আসুক। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, চলচ্চিত্র হলো একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম। এই মাধ্যমটি যদি কারও খেয়ালখুশি বা স্বেচ্ছাচারিতায় ধ্বংসের মুখে পড়ে তা হলে জাতি হিসেবে আমরা পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। জাতি হিসেবে এই লজ্জা ঘুচানোর নয়। তাই দ্রুত এর সমাধান চাই।

 

এমন অস্থির অবস্থা দুঃখজনক : কাজী হায়াৎ

সিনিয়রদের মধ্যে অনেকে হঠাৎ করে এ বিষয়টি নিয়ে কেন এত আগ্রহী হয়ে উঠলেন বুঝতে পারছি না। মুরব্বি হয়ে যাদের লুকআফটার করা, বিচার-আচার করার কথা তাদের অনেককে এখন পক্ষপাতিত্ব করে নেতিবাচক ভূমিকায় জড়িত হতে দেখা যাচ্ছে। এটি এই শিল্পের জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। যৌথ প্রযোজনার

ছবি স্বাধীনতার পর থেকেই হয়ে আসছে। হঠাৎ এটি নিয়ে এমন অস্থিরতা কেন দেখা দিল।

সবাই একসঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে নিলেই তো হলো। আগে কখনো বহিষ্কার বয়কট ছিল না। এটি কারও কাম্য নয়।  আমাকে বহিষ্কার করায় দুঃখ পেলেও খুশি হয়েছি। কারণ এমন অস্থির পরিবেশে কোনো মানুষ সুস্থভাবে বাঁচতে পারে না।

তারা তথ্যমন্ত্রীর কথা শুনছে না। তার পদত্যাগ চাইছে।

তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাব, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া তার স্বপ্নের এই চলচ্চিত্র শিল্পকে রক্ষায় তিনি যেন হস্তক্ষেপ করেন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর