বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কষ্টে বুকটা ভারি হয়ে ওঠে...

কষ্টে বুকটা ভারি হয়ে ওঠে...

ঢাকাই চলচ্চিত্রের নবাব খ্যাত নায়ক শাকিব খানকে নিয়ে নানা টানাপড়েন চলছে দীর্ঘসময় ধরে। তারপরেও দর্শক তার ছবি দেখছেন, তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন। এসব বিষয়ে এই শীর্ষ নায়কের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

ঈদ কেমন কাটল?

বেশ ভালো কেটেছে। ঈদে প্রতিবারের মতো আমার একাধিক ছবি মুক্তি পেয়েছে, দর্শক দেখছেন, ভালো সাড়া পেয়েছি। সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দটা উপভোগ্য ছিল।

 

‘শিকারি’ আর ‘নবাব’এর উচ্চতা কি ‘অহংকার’ আর ‘রংবাজ’ ছুঁঁতে পেরেছে?

‘শিকারি’ আর ‘নবাব’ ছিল যৌথ প্রযোজনার ছবি। এই দুই ছবির বাজেট, অ্যারেঞ্জমেন্টের ব্যাপকতা অহংকার, রংবাজের সঙ্গে না মিললেও গল্প আর নির্মাণের ব্যতিক্রমের কারণে দর্শক ছবি দুটি গ্রহণ করেছেন। ওই দুটি ছবির সঙ্গে বর্তমানের ছবি দুটিকে মেলানো যাবে না। তাই এই দুটি ছবির সফলতাকে ছোট করেও দেখা যাবে না।

 

চলচ্চিত্র শিল্প এখন ‘বয়কট’ ‘বয়কট’ খেলায় মেতেছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

এটি ঠিক নয়, একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে বিদেশে যে কোনো দেশের ভাবমূর্তি আর মানসম্মান যুক্ত। যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হতেই পারে, সমস্যা দেখা দিতেই পারে। আর এই সমস্যা নিজেরা যদি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায় তাহলে এ নিয়ে সুযোগ সন্ধানীরা আর ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে না। চলচ্চিত্র শিল্পে সবাই আমরা একটি পরিবার। দিনশেষে আমরা কিন্তু আমরাই। তাই বয়কট, বহিষ্কারের মতো বিষয়টি চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই শিল্পের মঙ্গলের জন্য ব্যান, বয়কট, বহিষ্কারের মতো ব্যবস্থাগুলো বাদ দিতে হবে। সবাই মিলেমিশে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এই শিল্পের দুর্দিন চলছে। সম্মিলিতভাবে এই দুর্যোগ কাটাতে হবে। নইলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

 

যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের নীতিমালাকে ঘিরেই কিন্তু ‘বয়কট’ শুরু হয়েছে। আর এ কারণেই আপনার দিকে আঙ্গুল তোলা হয়েছে, কি বলেন?

দেখুন, যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত আমার দুটি ছবি ‘শিকারি’ আর ‘নবাব’এর কথাই বলি। এখানে কিন্তু নাম ভূমিকায় আমিই অভিনয় করেছি। মানে আমার দেশকে এক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এদেশের অন্য শিল্পী, কলাকুশলীরাও কিন্তু ছবি দুটিতে কাজ করেছেন। ছবি দুটি নির্মাণের আগে প্রিভিউ বোর্ড স্ক্রিপ্ট, কাস্টিং থেকে শুরু করে সব বিষয় খতিয়ে দেখে তারপর অনুমতি দিয়েছে এবং সেভাবেই কাজ হয়েছে। পরে এ নিয়ে আপত্তি উঠা মানে এর অন্য কোনো অর্থ আছে। তাছাড়া আমার ‘শিকারি’ আর ‘নবাব’ নিয়ে তেমন কোনো আপত্তি ওঠেনি। নীতিমালার বিষয়ে যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে তা আগেই পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার ছিল। যাক, এখন সরকার বিষয়টি দেখছে। তাই এক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।

 

আপনি শিল্পী সমিতির একজন সদস্য ও সাবেক সভাপতি। এই সমিতি আপনাকে বয়কট করেছে, বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

দেখুন, আমি এই সমিতির দুই টার্ম সভাপতি ছিলাম। এটি এমন কোনো সংগঠন নয়, যেখানে পক্ষ-বিপক্ষ দল থাকবে। এটি শিল্পীদের কল্যাণে গঠিত সংগঠন। এখানে বসে কে কার বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাবে? শিল্প ও শিল্পী কখনো কোনো বাইন্ডিংসের মধ্যে থাকতে পারে না। তাই শিল্পীদের কল্যাণে কাজের জন্য অস্বস্তিকর অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।

 

সম্প্রতি নায়ক ফারুকের বাসায় গিয়ে তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। চলচ্চিত্র পরিবারের কথায় এরপর এফডিসিতে গিয়ে পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করার কথা ছিল, কিন্তু যাননি, তাহলে সমস্যা কি রয়েই গেল?

দেখুন, ফারুক সাহেবের বিরুদ্ধে আমি কথা বলেছি এমন অপপ্রচার কারা কেন ছড়াল আমি জানি না। প্রদর্শক সমিতির যে সংবাদ সম্মেলনে আমি তাকে হেয় করে কথা বলেছি মর্মে অপপ্রচার চালানো হয়েছে সেই অনুষ্ঠানের ভিডিও ফুটেজ তো আছে। তা দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তারপরেও যেহেতু ফারুক সাহেব আমার একজন মুরব্বি, আমার কারণে তিনি মনে কোনো কষ্ট পান সেটি আমি চাই না। তাই সব ভুল বোঝাবুঝির অবসানের স্বার্থে ফারুক সাহেবকে নিয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য না করা সত্ত্বেও তার বাসায় গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। চলচ্চিত্র পরিবারের আমিও একজন সদস্য। আমার পরিবারকে নিয়ে আমি তো কোনো বাজে কথা বলিনি, কেন আমাকে এফডিসিতে গিয়ে মাফ চাইতে হবে। দেখুন, চলচ্চিত্র শিল্পের দুঃসময়ে এমনও দিন গেছে সাধারণ সময় তো বটেই ঈদ উত্সবেও দিনরাত কাজ করেছি। নিজের দিকে তাকানোর সময় পাইনি। আর আজ আমাকে নিয়েই যখন এমন টানাহেঁচড়া করা হয় তখন সত্যিই খুব দুঃখ হয়, কষ্টে বুকটা ভারি হয়ে ওঠে। এই অবস্থা কারও কাম্য নয়। দেখুন, আমাকে যদি দর্শক বা চলচ্চিত্রের লোকজন আর পছন্দ না করে, আমি যদি কারও চক্ষুশূলে পরিণত হই তাহলে খোলাখুলিভাবে বলে দিলেই হয়, সব ছেড়ে চলে যাব।

 

এই সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব?

আমি বিবদমান পক্ষগুলোকে বলছি আপনারা সব বয়কট তুলে নিন। আমরা একসঙ্গে মিলেমিশে এফডিসিতে একটি গেটটুগেদার পার্টির আয়োজন করব। সেখানে সবাই আসবে। আনন্দ করবে। আমরা সব বিভেদ ভুলে আবার একসঙ্গে কাজ করব।

সর্বশেষ খবর